খালেদার মুক্তি নিয়ে সরকার- বিএনপির সমঝোতা!

বিশেষ প্রতিনিধি : বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে সরকার এবং বিএনপির মধ্যে সমঝোতার খবর পাওয়া গেছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, দুই পক্ষই সমঝোতার একটি মাঝামাঝি পর্যায়ে উপনিত হয়েছে, যাতে করে বেগম খালেদা জিয়াও মুক্তি পাবে এবং তিনি রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় হবেন। এরকম একটি মধ্যস্থতা চুড়ান্ত প্রায়। সবকিছু চুড়ান্ত হলে বেগম খালেদা জিয়ার যে দুটি মামলায় জামিন এখনো হয়নি সে দুটি মামলায় জামিনের আবেদন করা হবে। আপিল বিভাগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার জন্য হাইকোর্টে জামিন চাওয়া হবে। খালেদা জিয়ার আইনজীবির বলছেন, সরকার যদি বাধা না দেয়। তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার বয়স এবং তার রাজনৈতিক পরিচয় এবং তিনি যেহেতু দুইবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং যেহেতু তিনি নারী সেজন্য তিনি প্যারোল কোড অনুযায়ী জামিন যোগ্য। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া যদি আদালতের মাধ্যমে জামিন পান তাহলে সে ব্যাপারে সরকারের কোন আপত্তি থাকবে না। গতকাল দুটি মামলায় জামিনের পরে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার জামিন প্রাপ্তির মাধ্যমে প্রমাণিত হলো সরকার বিচার বিভাগের উপর হস্তক্ষেপ করে না। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে।

উল্লেখ্য যে, এর আগে সরকার কিছু শর্ত দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া ওই শর্তে মুক্তি পেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। যে কারণে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিও বিলম্বিত হয়েছে। এখন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে একটি অংশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং সরকার এখন বেগম খালেদা জিয়াকে সাময়িকভাবে হলেও মুক্তি দিতে রাজি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, বিএনপিতে এখন বেগম খালেদা জিয়াপন্থী এবং তারেক জিয়াপন্থীর বিরোধ তুঙ্গে। বেগম খালেদা জিয়া জামিন পেলেই এই বিরোধ আরো প্রকাশ্য হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেজন্যই খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রক্রিয়াটি এখন ত্বরান্বিত হচ্ছে। কি শর্তে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে যে, বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে কোন রকম রাজনৈতিক তৎপরতায় নিজেকে সম্পৃক্ত করবেন না বরং চিকিৎসা নিবেন। কিন্তু চিকিৎসার জন্য বিদেশেও যাবেন না।

জামিনে মুক্তি পেলে তিনি এপোলো, ইউনাইটেড বা স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিবেন এবং চিকিৎসা শেষে তিনি তার গুলশানের বাড়িতেই অবস্থান করবেন। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে শর্ত দেয়া হয়েছিল যে, বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে দেলেও সাময়িক সময়ের জন্য বিদেশে যেতে পারবেন। এখন সরকার আগের চেয়ে কঠোর অবস্থানে গিয়ে তার বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, বেগম জিয়া বিদেশে গিয়ে অনেকরকম সরকার বিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন। বেগম জিয়া যদি দেশে থাকেন এবং রাজনৈতিক তৎপরতায় যদি তিনি নিষ্ক্রিয় থাকেন তাহলে সরকারের জন্য বিষয়টি ইতিবাচক হবে। তাছাড়া বেগম জিয়া মুক্তি পেয়ে তাররেক বিরোধীদের সঙ্গে আলাপ শুরু করলে বিএনপিতে ভাঙন সময়ের ব্যাপার এমন ধারণাও করছে সরকার। সুপ্রিম কোর্ট বলছে, খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট জমা দেওয়া এবং সভা সমাবেশে যোগদান করা এবং রাষ্টড়বিরোধী কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তৃতা প্রদান থেকে বিরত থাকার সাপেক্ষে তার জামিনের ব্যাপারে সরকার হয়তো আপত্তি থাকবে না। এটা নিশ্চিত হলে খালেদা জিয়া কুরবানি ঈদের আগে মুক্তি পাবেন বলে একাধিক সূত্র বলছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির অন্যতম নেতা এবং আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন যে, যে কারণে একজন ব্যাক্তি জামিন পেতে পারেন তার সবগুলোই খালেদা জিয়া পূরণ করেছেন। আমরা আশা করি যে সরকার তার জামিনের ব্যাপারে কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। আর তাহলেই আমরা খালেদা জিয়াকে অচিরেই মুক্ত মানুষ হিসেবে পাবো বলে আশা করছি।

সূত্রগুলো বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তির ব্যাপারে এর আগে যে শর্তগুলো দেয়া হয়েছিল তার দুটি ছাড়া সবগুলোই বিএনপি পূরণ করেছে। এর মধ্যে বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংসদে যোগদান করেছে। মহিলা সংসদ সদস্যের যে সংরক্ষিত আসন সেই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বগুড়া উপনির্বাচনেও বিএনপি অংশগ্রহণ করছে। এই নির্বাচন কোনো নির্বাচন নয় এই অবস্থান থেকেও বিএনপি সরে এসেছে। কাজেই সরকার মনে করছে যে, কাহ্লেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য যদি তিনি সাময়িকভাবে জামিন পান সেক্ষেত্রে সরকারের কোনো আপত্তি নেই।