উপজেলায় এমপিদের কর্তৃত্ব বিলোপ করা হচ্ছে

বিশেষ প্রতিনিধি : পাঁচ দফায় উপজেলা নির্বাচন শেষ হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানরা শীঘ্রই দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। এবার উপজেলায় তিন চতুর্থাংশের বেশি উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা বিভিন্নভাবে বিভক্ত হয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দফায় দফায় একাধিক সাক্ষাৎ করেছেন এবং উপজেলাকে সচল সক্রিয় এবং কার্যকর স্থানীয় প্রশাসন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। এ সমস্ত প্রস্তাবগুলো প্রধানমন্ত্রী শুনেছেন এবং নোট নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে যে, বেশকিছু উপজেলাকে কার্যকর করা এবং জনঅংশগ্রহণমূলক করা এবং উপজেলার মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বেশকিছু সুপারিশ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশটি হলো উপজেলায় এমপিদের কর্তৃত্ব বিলোপ করা। উপজেলা আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদে এমপিরা হলেন উপদেষ্টা। উপদেষ্টাদের পরামর্শ ছাড়া উপজেলায় কোন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গ্রহণ করা যায় না। এই ধারার সুযোগ নিয়ে উপজেলার উপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব স্থাপন করেন এমপিরা। উপজেলার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও বরাদ্দর মতো সবকিছুই পরিচালিত হয় এমপিদের নির্দেশনায়। এইজন্যই দেখা গেছে যে, এবার উপজেলা নির্বাচনে এমপিরা তার পকেটস্থ এবং পছন্দের ব্যাক্তিদেরকে মনোনয়ন করার জন্য তৎপর ছিলেন। অনেক উপজেলায় যেখানে এমপিদের পছন্দের ব্যাক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি, সেখানে এমপিরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দাড় করিয়ে দিয়েছেন এবং তারা নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। কিন্তু নির্বাচনের পর দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। এখন বিদ্রোহী বা নৌকা প্রকীক বিজয়ী বা অন্য প্রতীকে বিজয়ী সকল প্রার্থীরা একমত যে উপজেলা চেয়ারম্যানরা তাদের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব চান। উপজেলা পরিচালনায় তারা স্বাধীন হতে চান। এ ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন পর্যায়ের অনেকগুলো দাবি দাওয়া দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে উপজেলার পুর্নাঙ্গ কর্তৃত্ব থাকতে হবে উপজেলা চেয়ারম্যানের হাতে। উপজেলা চেয়ারম্যানদের স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে যেকোনো কারণে বরখাস্ত করার যে প্রবণতা সে প্রবণতা রোধ করতে হবে। এমপিদের কর্তৃত্ব রোধ করতে হবে, উন্নয়ন বরাদ্দ বাড়াতে হবে, উপজেলাগুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনায় উপজেলা চেয়ারম্যানদের অংশগ্রহণ করতে হবে, জেলা বাজেটের অনুরূপ উপজেলা বাজেট দিতে হবে ইত্যাদি। প্রধানমন্ত্রী অনেকগুলো সিদ্ধান্তের ব্যাপারেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, সরকার মনে করছে যে স্থানীয় সরকার কাঠামোর শক্তিশালী স্তরগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা। সরকারের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারের এবারের যে কয়েকটি মৌল নীতিমালা সেই নীতিমালাগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য সেগুলোর জন্য কার্যকর উপজেলা পরিষদের বিকল্প নাই। যেমন আমার গ্রাম আমার শহর এটি বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কাজেই উপজেলাই হলো তৃণমূল গ্রাম এবং শহরের মধ্যে সেতুবন্ধন। কাজেই আমার গ্রাম, আমার শহর বাস্তবায়ন করতে গেলে উপজেলাকে অত্যন্ত কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।

দ্বিতীয়ত সরকার মনে করছে যে, সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার কর্মসূচি হলো প্রত্যেকটি গৃহহীন মানুষকে গৃহ প্রদান করা। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা পরিষদ অত্যন্ত কার্যকর প্রতিষ্ঠান করতে হবে। অন্যদিকে দলীয় বিবেচনা থেকেও আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, উপজেলায় যদি সংগঠন শক্তিশালী হয়, উপজেলায় যদি উন্নয়ন কর্মকান্ড সচল থাকে, উপজেলায় যদি মন্ত্রী এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের বিরোধ হ্রাস করা যায় তাহলে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন এবং অন্যান্য নির্বাচনগুলোতে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে। এই বিবেচনা থেকে আওয়ামী লীগ এবার উপজেলার বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। উপজেলা পরিষদগুলোকে উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করে সেজন্য পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছে। আর এর ফল দেখা যাবে নতুন উপজেলা পরিষদগুলো যখন কার্যক্রম শুরু করবে তখন।