আমাজন রক্ষায় আদিবাসীরা

অনলাইন ডেস্ক: আগুন, বন উজাড়করণ ও অনুপ্রবেশ সমস্যায় বিপন্ন বোধ করে রুখে দাঁড়িয়েছেন আমাজনের উত্তরাঞ্চলীয় আদিবাসী জিকরিন সম্প্রদায়ের লোকজন। সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারো তাদের ভূমির অধিকার খর্বের চেষ্টা করায় জিকরিনরা দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছে। তারা অবৈধভাবে ভূমি দখল করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া কাঠুরে ও পশুখামারিদের এলাকাছাড়া করছে।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত সপ্তাহজুড়ে ব্রাজিলের প্যারা রাজ্যে বন্দুক ও লাঠি হাতে একদল জিকরিন যোদ্ধা আমাজন এলাকা চষে বেড়িয়েছেন। যখনই তারা ভূমিতে আগুন, অবৈধভাবে জায়গা পরিষ্কার করা এবং অবৈধ বসতি দেখেছেন, তখন তারা ঘরে ঘরে গিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়িয়েছেন। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছেন করাত ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য সামগ্রী।

৪০ কিলোমিটার এলাকায় অভিযান শেষে যোদ্ধারা নিজেদের ক্ষমতায়িত ভেবেছেন। যুদ্ধের স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী, তারা নিজ গ্রাম র‌্যাপকোতে ফিরে এসেছেন। পরিবারের সদস্যরা চারপাশে জড়ো হলে তারা মোবাইলে অনুপ্রবেশকারীদের কুটিরে তল্লাশির ক্লিপ দেখিয়েছেন। অভিযান শেষে নিরাপদে ফিরে আসা উদযাপনের সময় জ্যেষ্ঠ যোদ্ধাদের একজন তিকিরি জিকরিন বলেন, ‘আমরা কেন নিজেদের ভূমি রক্ষা করছি? আমরা যেন শিকার করতে পারি, যাতে করে আমাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিরা এই ভূমিতে ভালোভাবে বসবাস করতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার মরার আগ পর্যন্ত কুবেনরা (শ্বেতাঙ্গ লোকজন) আমাদের ভূমি দখল করতে পারবে না।’

আইন অনুযায়ী, ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় পুলিশের দায়িত্ব বন রক্ষা করা। ২০০০ সালে ১৬ লাখ ৫১ হাজার হেক্টর আয়তনের আদিবাসী-অধ্যুষিত ভূখণ্ড ত্রিনচিরা বাচাজার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ব্রাজিল সরকার। সেখানে থাকার একমাত্র অধিকার আছে জিকরিন সম্প্রদায়ের ১ হাজার ১০০ সদস্যের। এই জনগোষ্ঠীর বয়স্করা জানেন, তাদের অধিকার রক্ষায় সরকার খুব সামান্যই ভূমিকা রাখবে।

ভূমি দখলকারীরা গত বছরের জুনে প্রথমবারের মতো জিকরিনদের এলাকায় প্রবেশ করে। অবৈধ কাঠুরেদের তৈরি করা একটি দুর্গম পথে তারা সেখানে যায়। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে অভিযোগ করেছে জিকরিনরা। তবে এতে কোনো লাভ হয়নি।

গত মাসে আমাজন উজাড়করণ ভিন্ন মাত্রা পায়। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ২৭৮ শতাংশ। আমাজনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি হতে পারে জিকরিনের সংরক্ষিত ভূমি। বেসরকারি পর্যবেক্ষক সংস্থা ইমাজনের হিসাব অনুযায়ী, জুলাইয়ে ভূমি দখলকারীরা ১ হাজার ৫০০ ফুটবল মাঠের সমান আদিম বনাঞ্চল সম্পূর্ণ ধ্বংস করে।’’’