টাঙ্গাইলে নাগরপুরে টুং টাং শব্দে মুখরিত কামারের দোকানগুলো

আল-আমিন শেখ, টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে টুং টাং শব্দেই যেন জানান দিচ্ছে আর কয়েকদিন পরেই ঈদুল আজহা। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস সাইজ করতে ছুরি, চাপাতি, দা-বটি অত্যাবশ্যকীয়। সেগুলো সংগ্রহ ও প্রস্তুত করে রাখতে এখন সবাই ব্যস্ত।

আর এর উপকরণ তৈরি ও শান বা লবণ-পানি দেয়ার কাজে প্রয়োজন কামারদের। পশু কোরবানির দা, ছুরি ও চাপাতি সহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে এখন থেকেই মানুষ কামারের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন।

আবার দেখা যায় কেউ কেউ পুরানো সরঞ্জাম মেরামত অথবা শান দিয়ে নিচ্ছেন। প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। পাশাপাশি কয়লা আর কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণ কমেছে বলেও জানান কর্মকাররা।

বর্তমান আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে জমে উঠে এ শিল্প। শান দেয়া নতুন দা-বটি, ছুরি ও চাকু সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সামনে। দোকানের জ্বলন্ত আগুনের তাপে শরীর থেকে ঝরছে অবিরাম ঘাম। চোখেমুখে প্রচণ্ড ক্লান্তির ছাপ, তবুও থেমে নেই তারা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি চলছে ব্যস্ততা।

উপজেলার নাগরপুর বাজারের হীরা কর্মকার ও কাউছার মিয়া বলেন, ‘এটা আমাদের পৈতৃক পেশা, আমি ৩৫ বছর যাবত এই কাজ করছি। প্রতি ঈদকে সামনে রেখে পাইকারী দোকানদার ও খুচরা ক্রেতাদের কাছে এই সময়ে আমাদের কদর বেশ ভালই থাকে। তবে এখন করোনার প্রভাবে অন্যান্য বছরের চেয়ে কাজের চাপ একটু কম হলেও দিন দিন কাজের চাহিদা বাড়ছে। আগে এই সময়টা থেকেই চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হত। এখন আর তা হতে হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে আমাদের অবস্থা একবারে খারাপ, দুইজন কর্মচারী দোকানে কাজ করে তাদের বেতন দিতে এখন আমি হিমশিম খাচ্ছি। সরকারিভাবে যদি কোন সহযোগীতা পাই তাহলে আমার অনেক উপকার হতো। তাছাড়া পরিবার চালানো আমার জন্য খুব উপকারে আসতো।’

উপজেলার নাগরপুর বাজারের মোঃ আক্তার জানান, বছরের অন্য দিনগুলোতে তেমন কাজ থাকে না। কিন্তু কোরবানির ঈদ এলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। দিনরাত কাজ করেও অবসর পাওয়া যায় না। করোনার আগে প্রতিদিন দোকানে ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় হতো।

আর এখন ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা আয় করা কষ্টকর। দোকানে গড়ে ২ জন করে কর্মচারী রাখতে হয়। একজন কর্মচারীর দৈনিক মজুরী ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা দিয়ে কিছুই থাকে না উল্টো লোকসান হয়। সামনে কুরবানির ঈদ উপলক্ষে কুরবানির পশু জবাই করার উপকরণ তৈরী ও বিক্রি করে কয়েকদিন আয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

এ পেশার মানুষ সারাবছর কমবেশি লোহার কাজ করলেও ঈদুল আজহা সামনে রেখে বৃদ্ধি পায় তাদের কর্ম ব্যস্ততা। ভোর থেকে শুরু করে রাত অবধি চলছে তাদের রকমারি কর্মযজ্ঞ। দা আকৃতি ও লোহাভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, ছুরি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, চাকু প্রতিটি সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, হাড় কোপানোর চাপাতি প্রতিটি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং পুরানো দা-বটি, ছুড়ি শান দিতে বা লবণ-পানি দিতে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়।