প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন মিনিষ্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান, চুয়াডাঙ্গার কৃতি সন্তান এম এ রাজ্জাক খান রাজ

বিশেষ প্রতিনিধি
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা’র সাথে মতবিনিময় ও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা উপ কমিটির সদস্য, এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতি, মিনিষ্টার-মাইওয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান, চুয়াডাঙ্গার কৃতি সন্তান এম এ রাজ্জাক খান রাজ। এ সময় তিনি নেত্রীকে তাঁর MPhil Thesis Book প্রদান করেন। সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।

এম.এ.রাজ্জাক খান রাজের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘মিনিস্টার’ গ্রুপ। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের সফলতা ও গর্বের অন্যতম নিদর্শন ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্প খাত। সরকারের সময়োপযোগী নীতি সহায়তায় এ খাতের সুনাম ও অবদান দেশ ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। বিশেষ করে কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে বাংলাদেশ অনন্য মাইলফলক সৃষ্টি করেছে। তাই করোনা পরবর্তী ক্ষতি কাটিয়ে দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যের বিকাশে বিদ্যমান সুবিধা অব্যাহত এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা বাড়ানোর পক্ষে অভিমত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ এবং উদ্যোক্তা সংগঠনের নেতারা।
বর্তমানে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘মিনিস্টার হাইটেক পার্ক লিমিটেড’। ২০০২ সালে উদ্যোগের শুরু। মাত্র পাঁচ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন এম এ রাজ্জাক খান।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ১৫শ বর্গফুটের একটি ভাড়া বাসায় পাঁচজন কর্মী আর নিজের শ্রম মিলে যাত্রা শুরু । প্রথম দিকে খুচরা যন্ত্রপাতি কিনে তা দিয়ে ১৪ ও ১৭ ইঞ্চি সাদা-কালো টেলিভিশন তৈরি করে বাজারজাত করেন। কালের পরিক্রমায় দেশীয় এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে সরাসরি জড়িত পাঁচ হাজার সদস্যের একটি পরিবারে পরিণত হয়েছে।

প্রতিষ্ঠাতা এম.এ.রাজ্জাক খান রাজের নেতৃত্বে মাইওয়ান থেকে জন্ম নিয়েছে ‘মিনিস্টার হাইটেক পার্ক লিমিটেড’। প্রায় দুই দশকের দীর্ঘ এই পথ চলা কেমন ছিল, তা দৈনিক অধিকারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন এম এ রাজ্জাক খান।
সংশ্লিষ্টদের মতে, গত এক যুগে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি শিল্প খাতের অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটেছে। যার মূলে রয়েছে বর্তমান সরকারের গৃহীত শিল্পবান্ধব বিভিন্ন নীতিমালা, শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং এ খাতের উদ্যোক্তাদের দেওয়া নানান সুবিধা। সরকারের এসব শিল্পমুখী নীতি এবং উন্নয়নের ফলে দেশের ইলেকট্রনিক্স খাতে বিপুল পরিবর্তন হয়েছে। আগে এ খাত ছিলো পুরোপুরি আমদানি নির্ভর। তখন রেফ্রিজারেটরের বার্ষিক চাহিদা ছিলো মাত্র ৩ লাখ ইউনিট। আর এ খাতে কর্মসংস্থান ছিলো শ পাঁচেক মানুষের। এক যুগের ব্যবধানে সে চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। দেশের ইলেকট্রনিক্স খাতে বর্তমানে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষের। ৩ লাখের জায়গায় রেফ্রিজারেটরের বার্ষিক চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৩০ লক্ষাধিক। এ খাতকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ অর্থনীতিরও বিকাশ ঘটেছে। যা সম্ভব হয়েছে এ খাতে স্থানীয় শিল্পের বিকাশের ফলে।
দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য খাতের বিকাশের ফলে বিপুল পরিমাণ পণ্যের আমদানি ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। এ শিল্প হয়ে উঠেছে সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত। তৈরি পোশাকের পর এ খাতটিতে রপ্তানি আয়ের ভবিষ্যৎ বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে থেকে বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানি হচ্ছে। যার মধ্যে অন্যতম কম্প্রেসর ও এর যন্ত্রাংশ, রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, হোম অ্যাপ্ল্যায়েন্স, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ইত্যাদি। বাংলাদেশে তৈরি এসব পণ্য বিশ্ববাজারে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। যা দেশের রপ্তানি আয়ে অবদান রাখছে। পাশাপাশি শিল্পোন্নত বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং হচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্টরা এ খাতে সব ধরনের সুবিধা দেওয়ার পক্ষে।

মাইওয়ানের শুরুর গল্প নিয়ে জানতে চাইলে মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান সফল উদ্যোক্তা এমএ রাজ্জাক খান (রাজ) বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গাতে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯৯৫ সালে আমি সিঙ্গাপুর চলে যাই । কিন্তু সবসময়ই ইচ্ছে ছিল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কিছু করার। সেই লক্ষ্যেই ১৯৯৯ সালে দেশে চলে আসি। দেশে আসার পর সে সময় বিশ্বমানের একটি দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডের অভাব বোধ করি। এভাবেই আসলে আমাদের শুরু। আমিসহ পাঁচজন মিলে ‘মাইওয়ান’ এর যাত্রা শুরু করি। তখন আমাদের মূলধন ছিল মাত্র পাঁচ লাখ টাকা। তখন মূলত অ্যাসেম্বলি (সংযোজন) করতাম। এরপর আস্তে আস্তে নিজেরাই ম্যানুফ্যাকচারিং (উৎপাদন) শুরু করি। শুরুটাই হয়েছিল স্কেডিং-এর মাধ্যমে। তারপর আমরা নিয়ে আসি কালার টেলিভিশন, আস্তে আস্তে ফ্রিজ এবং এয়ার কন্ডিশনের দিকে আমরা ধাবিত হই।’


এম এ রাজ্জাক খান রাজের উদ্যোগে, তাঁর নিজ বাস ভবন খান মহলে স্থাপিত হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রমের কিছু চিত্র।

‘প্রাথমিকভাবে আমরা মাইওয়ান নামে পরিচিত হলেও আমরা সমানে ভাবতে থাকি কীভাবে নতুন নামে মানুষের আরও কাছে পৌঁছানো যায়। তখন আসলে আমরা মিনিস্টার নামটি বেছে নেই। যা আল্লাহর রহমতে এখন সকলের কাছেই সমাদৃত।’
চুয়াডাঙ্গার সামাজিক অঙ্গনে তার অবদান লিখো বলার মতো নয়। বিশেষ করে আর্ত-মানবতার সেবায়। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য- এটাই যেন তার ব্রত। করোনায় যখন বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব আক্রান্ত। তখন তিনি চুয়াডাঙ্গায় নিজের প্রাসাদাপোম বাড়িটিকেই করোনা হাসাপাতাল বানিয়ে, সার্বক্ষণিক ডাক্তার রেখে, ঔষধপত্র সরবরাহ করে- ঘরের বাইরে না বেরুতে পারা অনাহারী মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিয়ে, দুঃখে অনভিভূত হয়ে নগদ অর্থ সাহায্য দিয়ে, তিন বেলা খাবার দিয়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। করোনা পরও বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা সঙ্গে ফ্রি ঔষধ দেয়া হাসপাতালটি এখনও চুয়াডাঙ্গার মানুষের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। হাসপাতালটির তত্ববধান করছেন বরণ্যে চিকিৎসক চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএমএর প্রেসিডেন্ট ডা. মার্টিন হিরক চৌধুরী।

সমাজ সেবক, দানবীর, শিক্ষানুরাগী, রাজনীতিক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এম এ রাজ্জাক খান রাজ প্রতিদানে শুধু মানুষের দোয়া আর ভালোবাসা চান।