৮বছরেও জট খুলেনি সরকারের কোটি টাকার রেল লাইন চুরি মামলা

হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাটঃ লালমনিরহাট থেকে মোগলহাট রেলপথের ১২ কিলোমিটারের ১০ কিলোমিটার লাইন ও স্লি¬পার চুরি হয়েছে। মামলা করেও রক্ষা হয়নি পরিত্যক্ত এ রেলপথ। এদিকে সাক্ষীর অভাবে ৮বছরেও সরকারের কোটি টাকার ওই রেল লাইন চুরি মামলার জট খুলছে না। জানাগেছে, বৃটিশ আমলে উত্তর জনপদ লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের মাধ্যমে ভারতের কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্যের সঙ্গে রেলওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু ছিল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান-ভারত বিভক্তির পরও লালমনিরহাট সদরের মোগলহাট হয়ে ভারতের সঙ্গে রেলওয়ে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। এই রেলপথের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার উৎপাদিত পাট, চা, তামাক, চামড়া, ধান, চাল ও শালকাঠ ভারতে যেত। ভারত থেকে কয়লা, লুবলেকেটিং ওয়েল, ডিজেলসহ অন্যান্য মালামাল আমদানি করা হতো। এছাড়াও দু’দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের চলাচলে মোগলহাটে একটি চেকপোস্ট ও ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু ছিল।

প্রতিদিন দু’দেশের শতাধিক পাসপোর্টধারী যাত্রী মোগলহাট হয়ে যাতায়াত করতো। ৮০ দশকে সড়ক পথে যোগাযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাট-মোগলহাট ১২ কিলোমিটার রেলপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে এ রেলপথ। আর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় চুরি হতে থাকে কোটি কোটি টাকার রেল লাইন ও স্লিপার। বর্তমানে লালমনিরহাট মোগলহাট ১২ কিলোমিটার রেলপথের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকার লাইন ও স্লিপারসহ অন্যান্য মালামাল চুরি হয়ে গেছে। ২০১২ সালে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রেলওয়ের চুরি যাওয়া কয়েকটি লাইন উদ্ধার করলে বাধ্য হয়ে রেলওয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল লতীফ। কিন্তু ওই প্রকৌশলী অভিযোগ পত্রে রহস্যজনক চোর ও চুরি যাওয়া মালের তথ্য গোপন করেন। পরবর্তীতে রেলওয়ে জিআরপি পুলিশ তদন্ত করে লালমনিরহাট শহরের সাপ্টানা এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান ও সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কুড়ল এলাকার কোরবান আলীর ছেলে শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। স্থানীয়রা জানান, তারা রাতের আঁধারে স্থানীয়দের জিম্মি করে রেললাইন কেটে নিয়ে যায়। প্রতিবাদ করলে ভয়ভীতি দেখায়। তবে পরিত্যক্ত ওই রেল লাইনের দুই কিলোমিটার অংশে ভুমিহীন লোকজন বসত-বাড়ি নির্মাণ করায় তা চুরি করতে পারেনি।

রেললাইন চুরি মামলার সাক্ষী সদর উপজেলার কর্নপুর পাতুরগেট এলাকার মন্টু মিয়া বলেন, যখন লাইন চুরি যায় তখন আমি ঢাকায় রিকশা চালাই। আমি কিছুই জানি না তবুও পুলিশ আমাকে সাক্ষী করেছে। প্রত্যক্ষদর্শী কোন লোককে এ মামলায় সাক্ষী করা হয়নি। আর যাদের সাক্ষী করা হয়েছে তারা ঘটনার সময় কাজের সন্ধানে এলাকার বাইরে ছিলেন। ফলে সাক্ষীর অভাবে মামলার জট খুলছে না। রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান শফিক বলেন, পরিত্যক্ত এ রেলপথ পুনরায় চালু করে ভারতের গিতালদাহের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ রক্ষায় উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কয়েক দফা পরিদর্শন করেছেন। তাই এই রেলপথ চালু হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।তবে রেললাইন চুরির বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে রেলওয়ের সম্পদ রক্ষায় অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।