সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিক হাবীব নিহত, প্রধানমন্ত্রীর শোক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর হাতিরঝিলে মধ্যরাতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ বিটের সিনিয়র রিপোর্টার মো. হাবীবুর রহমান হাবিব।

এ বিষয়ে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য থেকে পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নিজের মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গুরুতর আহত হন হাবিব। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাতিরঝিল থানার ডিউটি অফিসার এসআই এনামুল হক বলেন, ‘রাত ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে হাতিরঝিলের বেগুনবাড়ি প্রান্তের সিদ্দিক মাস্টারের ঢালের একটু সামনে একটা মসজিদের কাছে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতে ধাক্কা দিয়ে আছড়ে পড়েন হাবীবুর রহমান।’

‘‘পরে মাজদার রহমান নামে একজন পথচারী তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাত ৪ টার দিকে ওই ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’’

তিনি জানান, পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত হাবিবের মোটরসাইকেলটি নয়াটোলা পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে এসেছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া সাংবাদিকদের জানান, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে আসার পর সাংবাদিক হাবীবুর রহমানকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশুনা শেষ করে সাংবাদিকতা পেশায় আসেন হাবীবুর রহমান। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায়। বাবার নাম মোহাম্মদ পিয়ার মিয়া।

স্ত্রী ও বছর দুই বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে হাতিরঝিল এলাকায় থাকতেন হাবিব।

দৈনিক সময়ের আলোর সিনিয়র রিপোর্টার ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাবীবুর রহমান হাবীবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

এছাড়া হাবীবুর রহমান হাবীবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও প্রেস উইংয়ের সব কর্মকর্তারা।

দেশ ও মাননীয় প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি শিশু সন্তানকে অনুরাগী করে তোলার উদ্যোগ।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ও প্রেস উইং কর্মকর্তারা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন হাবীবুর রহমান হাবীব (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

মঙ্গলবার আনুমানিক রাত আড়াইটার দিকে হাতিরঝিলে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় ফুটপাতের পাশে পড়ে থাকতে দেখে মাজদাক চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। কিছুক্ষণ পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ২০১৩ সালে মাস্টার্স শেষ করেন হাবীব। প্রধানমন্ত্রী, রাজনীতি ও আওয়ামী লীগ বিটেই ছিল তার সাংবাদিকতা।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বেশ কয়েকবার নির্বাচন করেন হাবীব। প্রথম কার্যনির্বাহী সদস্য। পরে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।

আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে হাবিব

ডিআরইউয়ের সাবেক এ সাংগাঠনিক সম্পাদকের মৃত্যুতে সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

হাবিবের শিশু পুত্রকে দেখতে যান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, নৌ পরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী

দৈনিক এই আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আলী কদর পলাশ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, রাত বোধহয় সাড়ে ৩ কি চারটা। ঘুম ভেঙ্গে গেল। পাশে থাকা স্ত্রী ফোনে কার সঙ্গে যেন কথা বলছেন। স্পষ্ট এক্সিডেন্ট আর হাবিবের নামটা শুনতে পেলাম। ডুকরে কেঁদে উঠলাম। আমি নিশ্চিত মারাত্মক কিছু হয়েছে। নাহলে এতো রাতে ফোন আসবার কথা না। হাবিব মানে শাওন, শাওন মানে হাবিব- ওরা একদল বন্ধু নটরডেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে কর্মজীবনেও একসঙ্গে- সাংবাদিকতায়। আবার একই বিটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ। থাকেও পাশাপাশি ফ্লাটে। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে পথে বৌমাকে গাড়িতে তুলে সোজা ঢাকা মেডিকেলে। নামতেই দেখি আমার একমাত্র ছেলের সব সাংবাদিক বন্ধুরা, যাদের প্রায় সকলেই আমার পরিচিত, অতি আপন- কাছে ছুটে এলো। কাঁদতে কাঁদতেই জিঙ্গেস করলাম শাওন কই? — একটু দূরেই শাওনকে দেখিয়ে একজন উত্তর দিল, ‘ওইতো’। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে জিগ্যেস করলাম- তাহলে হাবিব?

– পাশ থেকে কে একজন বললেন, হাবিব আর নেই। রাতে বাড়ি ফেরার পথে হাতিরঝিলে রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছেন। সুন্দর সদালাপি, হাস‍্যোজ্জল সাংবাদিক নেতাকে আর চেনার উপায় নেই। পুরো মুখমন্ডল শরীর থেতলে গেছে।’

-হাবিবের বাবা-মা কুমিল্লা থেকে এতোক্ষণে হয়তো আসছেন। এসেই ছেলেকে বুকে জড়াতে চাইবেন। তখন?

আর এই যে ছবিতে হাবিবের একমাত্র শিশু সন্তান, ওর স্ত্রী- ওরা কাকে আঁকড়ে ধরবেন??

(ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)।

সপিরবারে হাবিব। হাতিরঝিলের সড়ক দুর্ঘটনা একটি পরিবারের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিলো।

জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, হাবিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সাংবাদিকতা বিভাগের ছোট ভাই। প্রায়ই আমার কাছে আসত। এসেই মনে করিয়ে দিত আপা আমি কিন্তু আপনার ডিপার্টমেন্টের। একটি দুর্ঘটনা এমন একটি তাজা প্রাণ কেড়ে নিল। এই মৃত্যু মেনে নেয়া খুব কষ্টকর। পরিবারকে শান্তনা দেয়ার কোন ভাষা নাই। আল্লাহ হাবিবকে বেহেস্তে স্থান দিন।

বাংলাদেশের প্রথিতযশা প্রায় সকল সাংবাদিক, সম্পাদক, সংবাদপত্র সংশ্লিষ্ট বরেণ্য ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছেন।