সুন্দরবনে অবৈধ পারশে মাছের পোনা আহরনের জন্য প্রস্তুত কয়েক হাজার জেলে,হুমকির মুখে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের জলজ ও বনজ সম্পদ

নিতিশ সানা, কয়রা ঃ-খুলনার কয়রায় সুন্দরবনে অবৈধভাবে পারশে মাছের পোনা আহরনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে কয়েক হাজার জেলে। এ ব্যাপারে বন বিভাগের সাথে যাবতীয় চুক্তি সেরে ফেলেছে তারা । সুন্দরবনে প্রতিটি ট্রলার ঢোকার অনুমতি পেতে আগাম দশ হাজার টাকা দিয়ে টোকেন সংগ্রহ করেছে অবৈধ পারশে মাছের পোনা আহরনকারী জেলেরা। পুরো মৌসুম এই টোকেনের মাধ্যমে লেন-দেন হবে টাকা। প্রতিবার(প্রতিটিপে)পারশে মাছের পোনা নিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করলে তাদেরকে দিতে হবে আরও দশ হাজার টাকা। অবৈধ পোনা আহরণ সিন্ডিকেটের নেতা আজিজুল ইতোমধ্যে একাধিক দ্রুতগামী ট্রলারের নিয়ে নিষিদ্ধ বন অঞ্চলে প্রবেশ করে পোনা আহরণ শুরু করেছে । তার ইঙ্গিত পেলেই সুন্দরবনে নেমে পড়বে হাজার হাজার অবৈধ পোনা শিকারি ।
সুন্দরবনে প্রবেশের অপেক্ষারত জেলেদের মাধ্যমে এ সকল তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, সুন্দরবন সংলগ্ন উপকুলীয় জনপদ কয়রা,শ্যামনগর,আশাশুনি,দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলার কয়েক হাজার পারশে পোনা আহরনকারী জেলেরা গত চার/পাঁচ বছর ধরে নতুন এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। এর কারন হিসাবে দেখা গেছে,অল্প পরিশ্রম এবং কম পুজিতে অধিক টাকা উপার্জন হওয়ায় উপকুলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমজীবি মানুষ অবৈধ ওই কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাদেরকে কিছু চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী মহাজন টাকা দাদন দিয়ে এ কাজে উৎসাহ দিচ্ছে। এ মুহুর্তে ট্রলারে ক্ষুদ্র ফাঁসের জাল নিয়ে সুন্দরবন অভ্যন্তরে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে কয়েক হাজার পোনা আহরনকারী জেলে বহর। তাদের ২০-২৫ জনের প্রতিটি বহরে(দলে) রয়েছে দুটি দ্রতগামী ট্রলার,তিন-চার সেট ক্ষুদ্র ফাঁসের জাল (নেট জাল) এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জামাদি। সুন্দরবনে পারশে মাছের পোনা আহরনকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে সাদামাছ পরিবহনের জন্য বনঅভ্যন্তরে ট্রলার প্রবেশের অনুমতি নিয়ে আসে তারা। ওই অনুমতি পত্র নিয়ে স্থানীয় ফরেস্ট ষ্টেশন থেকে সাদা মাছ ও কাকড়া ধরার পাশ-পারমিট নিয়ে বনে প্রবেশ করে । টানা চার মাস এভাবেই চলবে গহীন সুন্দরবনে পারশে মাছের পোনা আহরনের নামে ধবংস যজ্ঞ ।
তবে অনুসন্ধানে জানাযায়, এই চক্রের মূল হোতা কয়রার বনদস্যুদের এজেন্ট খ্যাত কয়েকটি কোম্পানি সিন্ডিকেট। শুধু মাছ ব্যবসার লাভ গুনে সন্তুষ্ট নন এব্যবসায়ীরা। ফলে সুন্দবণের অমূল্য সম্পদ হরিণের মাংস বিক্রিকেও বড় ধরনের লাভজনক বাণিজ্যে পরিণত করতে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে নিয়েছেন অবৈধ ব্যবসায়ীরা। বেশ কয়েকটি হরিণ শিকারীর দলও চালাচ্ছেন এই মাছ ব্যবসায়ীরা। গত ১৫ অক্টোবর সুন্দরবনে র‌্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে ৪ বনদস্যু নিহত আর কয়রা উপজেলার ২জন বনদস্যুর পৃষ্ঠপোষক কম্পানি মহাজন আটক হয়।এর পর দির্ঘদিন আত্মগোপনে ছিল কোম্পানি সিন্ডিকেটের মূল হোতারা। সম্প্রতি তারা পারশে মাছের পোনা আহরনের জন্য আবারও সক্রিয় হয়েছে। প্রতিবছর এই সিজোনে পারসে মাছের পোনা আহরন থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করে পোনা নিধনকারীরা।
সুন্দরবনের বড় ভাই খ্যাত কয়রার বাসিন্দা সুন্দরবন সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) পদ ধারী এক নেতার হাতদিয়েই মূলত আরও অনেকের হাতে যায় ওই টাকা ।

শুন্য থেকে কোটি পতি হওয়া বিএনপির ওই নেতা এখন ভোল পাল্টে ক্ষমাতাসীন দলের কতিপয় কিছু নেতার সাথে সখ্যাতা রেখে প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে দির্ঘদিন সুন্দরবনে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলেরা জানান,সুন্দরবনের অভায়রণ্য এলাকায় মাছ ধরতে গেলে প্রতি গোনে নৌকা প্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে দিতে হয় ওই সিএমসি নেতার কাছে । তিনি বন বিভাগ ও বনদস্যুদের সাথে সমঝোতা করে টাকা আদান-প্রদান করে থাকেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডক্টর মোঃ নাজমুল আহসান জানান, সুন্দরবনের নদ-নদী ও শাখা উপ শাখায় সাগর থেকে উঠে আসা মা মাছেরা ডিম ছাড়ে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। ঠিক এ সময় নিষিদ্ধ ক্ষুদ্র ফাঁসের জালের সাহায্যে পোনা আহরনের ফলে মৎস্যভান্ডার হিসাবে খ্যাত উপকুলের নদ-নদী মৎস্যশুন্য হওয়ার উপক্রম। ক্ষুদ্র ফাঁসের জালের সাহায্যে এক প্রজাতির পোনা আহরনের সময় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন করার ফলে মৎস্য সম্পদ ও জলজপ্রানী মারাত্বক হুমকির মুখে।
খুলনা বিভাগিয় বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন বলেন,সাদামাছ ধরার বৈধ পাস পারমিট নিয়ে নিষিদ্ধ কারেন্টজাল দিয়ে পোনা নিধন করা হচ্ছে কিনা তা আমার জানা নেই । যদি এ ধরনের কোন অপতৎপরতা লক্ষ করা যায় তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া অবৈধ কাজের সাথে বনবিভাগের কারো কোন সম্পৃক্ততা থাকলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।#