সাবেক আমলাদের মন খারাপ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

কিছু না পাওয়ার চেয়ে আংশিক পাওয়া নাকি অনেক বেদনার। সাবেক কিছু আমলার বর্তমান সময়ে হতাশা, দুঃখ, বেদনা দেখলে সেই কথাটি সত্যি মনে হয়। সাবেক বেশ কয়েকজন আমলা এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার পর তারা বিজয়ী হন, বিজয়ী হওয়ার পর অন্তত দুজন আমলা আশা করেছিলেন যে তারা মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। কিন্তু নাটকীয় ভাবে শেষ পর্যন্ত এই দুজনের কেউই মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হননি। বরং নির্বাচন না করা আরেক আমলা যারা তার বন্ধু হিসাবে পরিচিত তিনি উপদেষ্টা হয়েছেন। এর ফলে বন্ধু আমলার সাফল্যে অন্য আমলাদের দুঃখ, হতাশা আরও বেড়েছে।

মানুষের নাকি একটি স্বাভাবিক প্রবণতা হল নিজের ব্যর্থতায় তারা যতনা দুঃখিত হয়, অন্যের সাফল্যে তার চেয়ে দুঃখ বেশি পায়। সাবেক আমলাদের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে কিনা তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে তারা যে ভালো নেই এটি সুস্পষ্ট। সাবেক আমালাদের দুঃখ, বেদনা, হতাশা কয়েক রকমের। প্রথমত, সাবেক আমালাদের মধ্যে যারা সরকারের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন ব্যক্তি তারা আমরণ কোনো না কোনো কাজ চান, আমরণ পাদপ্রদীপে থাকতে চান। তারা অবসর গ্রহণের পরও নানা রকম দায়িত্বে থাকতে চান। কেউ কেউ সারাজীবন কোন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বা কোন দায়িত্বে থাকার স্বপ্ন দেখেন। এদের মধ্যে অনেকেই কক্ষচ্যুত হয়েছেন। তাদের হতাশা একরকম। আবার কিছু কিছু আমলারা ছিটকে পড়ার পর নানা কসরত করে আবার ফিরে এসেছেন। এদের মধ্যে অন্তত তিনজন এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আমলারা মনোনয়ন পাবেন আর মন্ত্রী হবেন না সেটা কী করে হয়?

এরশাদের পতনের পর দেখা গেছে, এরশাদের ঘনিষ্ঠ দুই আমলা সরাসরি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। রাতারাতি এমপি হয়ে গেছেন এবং বিএনপির নাটকীয় জয়ের পর তারা মন্ত্রীও হয়েছেন। এখনও আমালাদের তেমন প্রত্যাশাই ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবুল কালাম আজাদ বা ড. সাদিক কেউই মন্ত্রী হতে পারেননি। প্রকাশ্যে তারা এ নিয়ে কিছু না বললেও তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে দুঃখ আছে এটি আর গোপন বিষয়। তবে তারা তো তাও সংসদ সদস্য হতে পেরেছেন। মাত্র ১৪ দিনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব হওয়া কবির বিন আনোয়ারের দুঃখটি সম্ভবত আরও বেশি। তিনি মাত্র ১৪ দিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হন। এরপর তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, সরকার ঘনিষ্ঠ আমলারা চুক্তিতে নিয়োগ পান। এর আগেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব দুইবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিবও চুক্তিতেই আছেন। কিন্তু কবির বিন আনোয়ারের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি।

ধারণা করা হয়েছিল, তিনি এইচ টি ইমামের স্থলাভিষিক্ত হবেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কো-চেয়ার হবেন কিংবা পরবর্তীতে উপদেষ্টা হবেন। কিন্তু কিছুই হয়নি।

নির্বাচনের পর অবশ্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। এখন তিনি অবসর ছুটিতেও নেই। কিন্তু উপদেষ্টা হওয়া বা কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ পদবি তিনি এখন পর্যন্ত পাননি। এ নিয়ে তার মধ্যে হতাশা আছে কিনা জানা না গেলেও তার গুণগ্রাহী এবং অনুগতজনরা ব্যাপকভাবে হতাশ।

কিছু কিছু আমলা সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ক্ষমতাকেন্দ্রের চারপাশে আসতে পারছেন না। তারা কেউ পাবলিক সার্ভিস কমিশনে, কেউ এখানে সেখানে থাকতে চান কিন্তু থাকতে পারছেন না। তাদের দুঃখ এবং দীর্ঘশ্বাস এখন কান পাতলেই শোনা যায়। অবসরপ্রাপ্ত আমলারা কিছু একটা করতে চান সবাই। আর কিছু একটা না করতে পারলেই তারা হতাশ হয়ে পড়েন। সাবেক আমলাদের এই হতাশা, দুঃখ, বেদনা এখন যেন রীতিমতো একটি ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।