শহীদ স্মরণে স্মৃতির মিনারে সালাম-বরকতের উত্তরসূরিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

যাদের প্রাণের বিনিময়ে বাঙালি পেয়েছিল ভাষার অধিকার, সেই ভাষা শহীদদের কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করছে পুরো জাতি।

একুশের প্রথম প্রহরেই শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের স্মরণে সমবেত হয়েছেন সালাম-বরকত-রফিকদের উত্তরসূরিরা; জানাচ্ছেন সশ্রদ্ধ সালাম। কণ্ঠে সেই গান- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি… আমি কি ভুলিতে পারি…’।

‘একুশ মানে মাথা নত না করা’- এই প্রত্যয়ে তাদের দেওয়া ফুলেল শ্রদ্ধায় ভরে উঠেছে শহীদ মিনারের বেদী।

সোমবার প্রথম প্রহরে এভাবেই দেশের সব শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন আর নানা আয়োজনে শ্রদ্ধার সঙ্গে ভাষা শহীদ ও সংগ্রামীদের স্মরণ করছে পুরো বাংলাদেশ।

কোভিড মহামারীর কারণে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের আয়োজনটি গত বছরেও মতো এবারও হচ্ছে সীমিত পরিসরে।

প্রতি বছর একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের তরফ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়েই শুরু হয় শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব। মহামারীর মধ্যে গতবছরের মত এবারও তাদের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তাদের সামরিক সচিবরা।

রাষ্ট্রপতির পক্ষে ফুল দেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম। আর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে শ্রদ্ধা জানান সংসদ সচিবালয়ের সার্জেন্ট আ্যট আর্মস কমডোর মিয়া মোহাম্মদ নাইম রহমান।

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার পক্ষে সহকারী সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস গোলাম শাহরিয়ার তালুকদার পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।

এরপর তিন বাহিনীর প্রধানদের মধ্যে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের পক্ষে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের নেতারা ফুল দেন। দলের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, নুরুল ইসলাম নাহিদ, শাজাহান খান ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।

জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষে দলের মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ১৪ দলের পক্ষে ডা. দীপু মনি ও হাসানুল হক ইনু শ্রদ্ধা জানান।

বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষে আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শহীদ মিনারের বেদিতে।

পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রের পক্ষে তাদের প্রতিনিধি শ্রদ্ধা জানান।

এরপর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, অ্যাটর্নি জেনারেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

অন্যান্য দলের মধ্যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি শ্রদ্ধা জানায়।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিসহ অন্যান্য সংগঠন শ্রদ্ধা জানায়।

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদ মিনার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।এর আগে রাত ১২টার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরাসহ সর্বস্তরের মানুষ ভিড় করেন শহীদ মিনার অভিমুখী রাস্তায়।

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের এই দিনে রাজপথ ভিজেছিল বাঙালির রক্তে।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মিছিলে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর নির্দেশে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সালাম, রফিক, বরকত, শফিউরসহ নাম না জানা অনেকে।

সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অর্জিত হয় স্বাধীনতা। জন্ম নেয় বাঙালির জাতিরাষ্ট্র-বাংলাদেশ।

বাঙালির এ আত্মত্যাগের দিনটি এখন রাষ্ট্রীয় সীমানার গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে সারা বিশ্বে।

বাঙালির ভাষার সংগ্রামের একুশ এখন বিশ্বের সব ভাষাভাষীর অধিকার রক্ষার দিন।

এ দিনে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সকল ভাষা সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

তিনি বলেন, “ভাষা আন্দোলন ছিল আমাদের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নিজস্ব জাতিসত্তা, স্বকীয়তা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষারও আন্দোলন। আমাদের স্বাধিকার, মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অমর একুশের অবিনাশী চেতনাই যুগিয়েছে অফুরন্ত প্রেরণা ও অসীম সাহস।

“ফেব্রুয়ারির রক্তঝরা পথ বেয়েই অর্জিত হয় মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি এবং এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে আসে বাঙালির চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।”

সকল জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “কালের আবর্তে পৃথিবীতে অনেক ভাষাই আজ বিপন্ন। একটা ভাষার বিলুপ্তি মানে একটা সংস্কৃতির বিলোপ, জাতিসত্তার বিলোপ, সভ্যতার অপমৃত্যু।”

তিনি বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, “আমি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাসহ বিশ্বের সকল ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির মানুষের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করছি।

“বাংলাদেশের সঙ্গে ইউনেস্কো ২০০০ সাল থেকেই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করে আসছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বহুভাষায় জ্ঞানার্জন: সঙ্কট এবং সম্ভাবনা’- যা আমার বিবেচনায় অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত হয়েছে। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে।”

অমর একুশে উদযাপনে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, আশপাশের রাস্তাজুড়ে চলছে আলপনা আঁকার কাজ।অমর একুশে উদযাপনে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, আশপাশের রাস্তাজুড়ে চলছে আলপনা আঁকার কাজ।বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি। বিলুপ্তপ্রায় ভাষা সংরক্ষণ ও তাদের মর্যাদা রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করেছি।
“নৃ-গোষ্ঠীদের ভাষা ও বর্ণমালাকে বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করার জন্য ২০১৭ সাল থেকে তাদের ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রবর্তন করেছি। এবছর তাদের নিজস্ব ভাষায় প্রায় ৩৩ হাজার বই বিতরণ করেছি। আমরা বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

সরকারপ্রধান বলেন, “ভাষা আন্দোলনে বাঙালি কৃতি সন্তানদের চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে পূর্ব বাংলার মানুষের জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে গত ১৩ বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক খাতের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছি। বাংলাদেশকে আমরা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল-এ পরিণত করেছি।

“সম্প্রতি আমরা ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছি। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করেছি এবং মুজিববর্ষ উদ্যাপন করছি। রূপকল্প-২০৪১ অর্জনকে সামনে রেখে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ বাস্তবায়ন করছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, অচিরেই আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদাশীল ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করব।”

সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ তার বাণীতে বলেন, “মাতৃভাষার যথাযোগ্য অবস্থান, মর্যাদা ও বিকাশ নিশ্চিত করতে এখনও আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। রাষ্ট্রীয়, শিক্ষাগত ও সামাজিক জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন আজও হয়নি। রক্তাক্ত অধ্যায়ের মাধ্যমে অর্জিত যে ভাষা-তার প্রতি এ উপেক্ষার বিষয়টি জাতি হিসেবে আমাদের সংকীর্ণ করে দেয়, এ সংকীর্ণতা কাটিয়ে ওঠা জরুরি।”

গন্তব্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় স্মৃতি, সেই সঙ্গে বেদনা আর বিদীর্ণ শোকের রক্তঝরা দিন অমর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রস্তুতি রোববার সন্ধ্যার মধ্যেই সম্পন্ন হয়।

মহান এ দিবসকে সামনে রেখে একদল শিল্পী নানান চিত্রকর্মে রাঙিয়ে তুলেছেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও তার আশপাশের প্রাঙ্গণ।

সৌন্দর্য বাড়াতে শহীদ মিনারসহ আশপাশের রাস্তার দেয়ালে নতুন রঙ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা মিনার প্রাঙ্গণ আল্পনা এঁকে রঙের তুলিতে সাজিয়ে তুলছেন। রক্তের আল্পনায় যে একুশের জন্ম, বেদীর এই রঙে যেন তাদের রক্তের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।

দেয়ালে দেয়ালে বর্ণমালায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাঙালি ও বাংলাকে উপজীব্য করে লেখা কবি-মনীষীর নানা পঙক্তি-উক্তি; দেয়ালের সঙ্গে পিচঢালা রাস্তাকে ক্যানভাস বানিয়ে রং-তুলির আঁচড়ে তুলে ধরা হচ্ছে ইতিহাস- মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষায় সংগ্রামের সেই ক্ষণ।

অমর একুশে উদযাপনে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।অমর একুশে উদযাপনে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।শহীদ মিনারের চারপাশে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা এবং পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। পাশেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাদে ঘোষণা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এবং দিবসটি পালনে নিয়োজিত সব প্রতিষ্ঠান ও সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। র‍্যাব, ডিবি, সোয়াট টিম, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড এবং পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এলাকা তল্লাশি করবে।

একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি বলেছে, জনসাধারণকে পলাশী মোড় দিয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং জগন্নাথ হলের পাশের রাস্তা হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যেতে হবে।

শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল চত্বর এবং পেছনের রাস্তা দিয়ে চানখাঁরপুল হয়ে বের হওয়া যাবে।

এবার সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সর্বোচ্চ পাঁচজন এবং ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ দুইজন একসঙ্গে শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন। এসময় সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে।

দেশব্যাপী কর্মসূচি

প্রতি বছরের মতো এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

ঢাকার পাশাপাশি সারা দেশে প্রথম প্রহরেই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে, ফুলে ফুলে ভরে উঠছে মিনার। সরকারি ছুটির এ দিনে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।

জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একুশের প্রথম প্রহরে এবং সোমবার দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরআন খানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ ক্রোড়পত্র।

ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মোমবাতি প্রজ্বালন। ছবি: সুমন বাবুভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মোমবাতি প্রজ্বালন। ছবি: সুমন বাবুসোমবার সকাল ৭টায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রভাত ফেরি করে আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা করবে আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখবেন।

আর সোমবার সকালে মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি শ্রদ্ধা জানাবে বলে জানিয়েছে।

এছাড়া দলটি ভাষা দিবসের আলোচনা সভাও করবে।