ভারত থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরের কোয়ারেন্টিনে বাবা-মায়ের সাথে ঈদ হল না ওদের!

মোস্তাফিজুর রহমান,লালমনিরহাট প্রতিনিধি: ঈদ হল একটি বদ্ধ ঘরে বন্দি অবস্থায়। আশা ছিল বাবা-মায়ের সাথে ঈদ করব কিন্তু তা হল না। ১৭ দিন ধরে পরে আছি বুড়িমারী স্থল বন্দরের একটি আবাসিক কোয়ারেন্টিনে। গত রোজার ঈদেও বাবা মায়ের সাথে ঈদ করা হয়নি এবারও হল না। এ ভাবে কান্না জড়িত কন্ঠে কথা গুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরের কোয়ারেন্টিনে অবস্থান করা ভারতের দার্জিলিং শহরের সেনমাই স্কুলের বোর্ডিংয়ে থেকে পড়াশুনা করার ষষ্ঠ শ্রেণির কুমিল্লার শিক্ষার্থী রিফাতুল হক।ভারতের দার্জিলিং শহরের সেনমাই স্কুলের বোর্ডিংয়ে লেখাপড়া করা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির আবরার ইয়াসির, আরিয়ান, আবু বকর সিদ্দিক, ইমরানসহ প্রায় ৪৩ জন শিক্ষার্থী প্রায় ১৫ দিন ধরে বুড়িমারী স্থল বন্দরের প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে নিতে আসা অনেকের বাবা মাও কোয়ারেন্টিনে অবস্থান করছেন। তাদের করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট না আসায় ১৪ দিনেও বেশী থাকতে হচ্ছে।জশুত্রবার (১৪মে) দুপুরে বুড়িমারী স্থলবন্দরে তিনটি আবাসী হোটেলে কোয়োরে্ন্টিনে থাকা ৯১ জনকে সেমাই, পোলাও, মাংসসহ উন্নতমানের বিভিন্ন খাবার সরবরাহ করেছেন পাটগ্রাম উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল ও নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুর রহমান।জানা গেছে, করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে ভারতের সকল সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় ভারতের বিভিন্ন স্কুল কলেজে পড়াশুনা করা শিক্ষার্থী ও চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশিরা আটকে যান ভারতে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কোয়ারেন্টিনে থাকাসহ নানা শর্তে তারা দেশে প্রবেশের অনুমতি পান।ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের পর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৬ এপ্রিল থেকে ভারতের বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুমতি নিয়ে শুক্রবার (১৪ মে) বিকেল ৩টা পর্যন্ত দেশটিতে আটকেপড়া শিক্ষার্থীসহ ২০১ জন দেশে ফিরেছেন। একই সময়ে ভারতে ফিরে গেছেন ১০১ জন। তাদের সবাইকে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।এদিকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর করোনা পরীক্ষার কোন রেজাল্ট না আসায় বাধ্যতামুলক ভাবে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন দ্রুত করোনা নমুনা নিয়ে দ্রুত রেজাল্ট দেওয়া দাবী জানান।কোয়ারেন্টাইনে থাকা সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবরার ইয়াসির জানান, ১২ দিন থেকে কোয়ারেন্টাইনে আছি, এখনো করোনা পরিক্ষার কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। আক্ষেপ করে আবরার ইয়াসির আরও বলেন, আশা ছিল বাবা-মায়ের সাথে ঈদ উদযাপন করবো কিন্তু কবে বাড়ি যেতে পারবো তারও নিশ্চয়তা নেই।শিক্ষার্থী আবরার ইয়াসির বলেন,১৭ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরেও কোভিড টেষ্টের জন্য নমুনা নিয়ে গেলেও তার রেজাল্ট হাতে পাইনি। বাড়ি যাওয়ার অনুমতিও দিচ্ছে না প্রসাশন । সে একা বুড়িমারী স্থলবন্দর অবস্থান করছেন। ওই শিক্ষার্থীর বাড়ি চট্টগ্রাম।
বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুন আমীন বাবুল বলেন, ভারত থেকে আসা শিক্ষার্থীসহ ৯১ জন বাংলাদেশী নাগরিক বুড়িমারীরতে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন তাদের সবরকম খেয়াল রাখা হচ্ছে।পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বুড়িমারী ও পাটগ্রামে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে অবস্থা করাদের পর্যায় ক্রমে নমুনা সংগ্রহ করা হবে। তিনি আরও জানান, কোয়ারেন্টিনে থাকা ৫ শিক্ষার্থীর করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে তাদের দ্রুত ছার পত্র দেওয়া হবে।