ব্যাংকে টাকা নেই: গুজবের নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির নেতাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তারা যেন তাদের টাকা উত্তোলন করে। কিছুদিন উত্তোলন করে টাকা বাড়িতে রাখে। এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড পর্যায়ের। গত দুই দিনে বিএনপির শতাধিক নেতা কর্মীরা বিভিন্ন ব্যাংক গিয়ে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খালি করার উদ্যোগ নিয়েছে। লাইন ধরে ব্যাংক দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকে গিয়ে টাকা তুলে ফেলার পাশাপাশি অন্য গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক উদ্বেগ ছড়ানোর কাজ করছে। বিভিন্ন ভাবে বলা হচ্ছে যে, ব্যাংকে টাকা নেই আপনারা আপনাদের টাকা তুলে নিন। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া এই পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা পেল তখন অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাতকে নড়বড় করে দেওয়া এবং সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল হিসেবেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার এই পরিকল্পনা শুরু হয় এবং গত রোববার থেকে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। রোববার অন্তত পাঁচটি ব্যাংকে বিএনপির মধ্যে ঢাকা মহানগরীর একাধিক নেতা গেছেন এবং তাদের সমদুয় টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে চেক দিয়েছেন। কোথাও কোথাও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বিলম্ব হওয়ার সাথে সাথে তারা এ নিয়ে হৈচৈ শুরু করেন এবং ব্যাংকে টাকা নেই কেন এ নিয়ে তারা এক ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করার চেষ্টা করেন। এর ফলে অন্যান্য ক্রেতাদের মধ্যে একধরনের ভীতি তৈরি হয়। শুধু তাই নয়, বিএনপি এবং জামায়াতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে, ব্যাংকে টাকা নেই, আপনার টাকা মাড় যাবে, ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে, ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে আপনি যদি আপনার টাকা রক্ষা করতে চান তাহলে পরে আপনি আপনার টাকা ব্যাংক থেকে তুলে ফেলুন। এ কারণে গত দুইদিন ধরে ব্যাংকিং সেক্টর এক ধরনের অস্বস্তি বিরাজ করছিল। তবে আশার কথা যে, বাংলাদেশের সবগুলো ব্যাংকে যথেষ্ট তারল্য ছিল এবং কোথাও কোনো রকম সংকট দেখা দেয় নি। স্বাভাবিকভাবে ভিড়ের কারণে কোন কোন ব্যাংকে টাকা দিতে দেরি হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো সেই পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে। গত দুইদিনে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এবং তারপর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে আশা দিয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল বা ভীতি ছিল সেটি কেটে যেতে শুরু করেছে।

বিএনপি এখন অর্থনৈতিক সংকটকে গভীর দেখানোর জন্য নানামুখী পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্র করছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ব্যাংকিং খাত নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে। বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাংকিং সেক্টরে টাকা নেই এ জাতীয় অসত্য ভিত্তিহীন বানোয়াট খবর ফলাও করে ছড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন বিএনপি নেতার ফেসবুক স্ট্যাটাস গুলোতে তারল্য সংকটের কথা বলা হচ্ছে। এগুলোর ব্যাপারে কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু জনগণের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের জন্য এই ধরনের কর্মকাণ্ড গুলো করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই বিষয়টিকে খতিয়ে দেখছে এবং তারা এখন মাঠে নেমেছে। উল্লেখ্য যে, কোন কোন লোক বিএনপির এ সমস্ত কথায় বিভ্রান্ত হয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে যেয়ে আবার বিএনপি নেতাকর্মীদের ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে। বিএনপির বিভিন্ন মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা টাকা উত্তোলনের পর বিভিন্ন সাধারণ গ্রাহককে আক্রমণ করছেন এবং তাদের টাকা ছিনতাই করেছেন এমন অভিযোগে অন্তত ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।