ফের পরাজয়, সিরিজও হারল বাংলাদেশ

এই আমার দেশ ডেস্ক : ব্যাটে-বলে হতাশার যুগলবন্দী বয়ে আনল আরেকটি হার প্রিয় বাংলাদেশ। নিশ্চিত হলো সিরিজ হারও। নিউজিল্যান্ডের টানা দ্বিতীয় জয়ে নায়ক হয়ে রইল মার্টিন গাপটিলের টানা দুই সেঞ্চুরি।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ক্রাইস্টচার্চে শনিবার বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে নিউ জিল্যান্ড। তিন ম্যাচের সিরিজ কিউইরা জিতে নিয়েছে প্রথম দুই ম্যাচেই। প্রথম ম্যাচেও তাদের জয় ছিল ৮ উইকেটে।

কিউই পেস আক্রমণের চ্যালেঞ্জ সামলাতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বিপর্যয়ে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদ মিঠুনের আরেকটি ফিফটি ও সাব্বির রহমানের লড়াই দলকে এনে দেয় ২২৬ রানের পুঁজি। তাতে মুখরক্ষা হলেও জয়ের মুখ দেখা হয়নি। গাপটিলের ঝড়ো সেঞ্চুরি কিউইদের জয় এনে দেয় ৮৩ বল বাকি রেখেই।

৮৮ বলে ১১৮ রান করে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে ফেরেন গাপটিল। আগের ম্যাচে ২৩৩ রান তাড়ায় এই ওপেনার অপরাজিত ছিলেন ১১৬ বলে ১১৭ রানে।

এর আগে নিউ জিল্যান্ডের গ্রীষ্মেও বাংলাদেশকে এনে দেয় শীতের জবুথবু অনুভূতি। টসের সময় তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া স্যাঁতসেঁতে, উইকেটেও ছিল খানিকটা ঘাসের ছোঁয়া। আগে ব্যাটিং করতে চাইবে না এখানে কোনো দলই। কিন্তু টসে হেরে সেই কঠিন পরীক্ষাতেই নামতে হলো বাংলাদেশকে।

সতর্ক ব্যাটিংয়ে শুরুর সময়টা পার করে দেওয়ার তাগিদ ছিল তামিম ইকবালের ব্যাটে। কিন্তু লিটন দাসের ব্যাটে অন্য সুর। অযথাই বেরিয়ে এসে ট্রেন্ট বোল্টকে তুলে মারতে গিয়ে শিকার হলেন লকি ফার্গুসনের দারুণ ক্যাচের।

তামিম প্রথম রানের দেখা পেয়েছেন ১৫ বল খেলে। তার পরও ছিলেন সাবধানী। তবু শেষ রক্ষা হয়নি। আউট হয়েছেন ২৮ বলে ৫ রান করে।

আগের ম্যাচেও তামিম করেছিলেন ৫ রান। লিটন যেমন দুই ম্যাচেই ফিরেছেন ১ রান করে।

হতাশার পুনরাবৃত্তির পালায় ফিরেছেন মুশফিকুর রহিম ও সৌম্য সরকারও। আগের ম্যাচের মতোই বাইরের বল স্টাম্পে টেনে এসেছেন মুশফিক। দারুণ কয়েকটি শট খেলে আবারও আলগা শটে ফিরেছেন সৌম্য।

দুইশতম ওয়ানডেতে দুইবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচেছেন মুশফিক। ৫ রানে তার ক্যাচ ছেড়েছেন টড অ্যাস্টল, ১৩ রানে রস টেইলর। তার পরও থেমেছেন ২৪ রানে। আগের ম্যাচে ৩০ রানের পর সৌম্য এবার ২২।

ব্যর্থতার মিছিলে যখন সামিল মাহমুদউল্লাহও, ৯৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে বাংলাদেশ।

বিপর্যস্ত দলকে আবারও ভরসা জোগালেন মিঠুন। তকে সঙ্গ দিলেন নিষেধাজ্ঞা কমানোর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা সাব্বির।

টেইলরের কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে হবে মিঠুনকেও। মুশফিকের মতো স্লিপে তার ক্যাচও ছেড়েছেন টেইলর। এরপর থেকে মিঠুন খেলেছেন দারুণ। সাব্বিরের সঙ্গে তার জুটিতে দুজন এসেছে প্রায় বলপ্রতি।

লেগ স্পিনার টড অ্যাস্টলকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে মিঠুন স্পর্শ করেন সিরিজে দ্বিতীয় ফিফটি। ১৫ ওয়ানডেতে তার চতুর্থ ফিফটি। পরের বলেই এক্সট্রা কাভার দিয়ে বাউন্ডারিতে যেন উদযাপন করলেন মাইলফলক।

খুব বেশি দূর এগোতে পারেননি এরপর। ৪৩ রান থেকেই হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগায় ভুগছিলেন। তাতে স্বাভাবিক খেলায় ছেদ পড়েছিল খানিকটা। অ্যাস্টলের বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হলেন ৬৯ বলে ৫৭ করে। ভাঙে ৮২ বলে ৭৫ রানের জুটি।

এরপর মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেছেন সাব্বির। কিন্তু ১৩ রানে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়ে মিরাজ বাজে শটে উইকেট বিলিয়ে এলেন ১৬ রানে। ফার্গুসনের দারুণ এক স্লোয়ার সাব্বিরকে থামাল ৪৩ (৬৫ বলে) রানে।

শেষ দিকে মাশরাফির এক ছক্কা ও মুস্তাফিজের একটি বাউন্ডারিতে খানিকটা বেড়েছে দলের রান। স্কোর বাড়ায় বড় অবদান আছে প্রতিপক্ষেরও। ১৭টি ওয়াইড করেছেন কিউই বোলাররা।

তাতে অবশ্য ম্যাচে খুব একটা ছাপ পড়েনি। ২২০-২৩০ তো বটেই, আড়াইশ রানেও এখানে জেতা কঠিন। বাংলাদেশও পারেনি বোলিংয়ে দারুণ কিছু করে কিউইদের ন্যূনতম চাপে ফেলতে। ফিল্ডিংয়ে শরীরী ভাষা ছিল নেতিয়ে পড়া।

এখন বাংলাদেশ দল ও মাশরাফির সামনে কেবলই অস্বস্তিকর প্রশ্নের ভিড়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৪৯.৪ ওভারে ২২৬ (তামিম ৫, লিটন ১, সৌম্য ২২, মুশফিক ২৪, মিঠুন ৫৭, মাহমুদউল্লাহ ৭, সাব্বির ৪৩, মিরাজ ১৬, সাইফ ১০, মাশরাফি ১৩, মুস্তাফিজ ৫*; হেনরি ১০-২-৩০-১, বোল্ট ১০-১-৪৯-১, ডি গ্র্যান্ডহোম ৪-০-২৫-১, ফার্গুসন ১০-০-৪৩-৩, অ্যাস্টল ১০-০-৫২-২, নিশাম ৫.৪-০-২১-২)।

নিউ জিল্যান্ড: ৩৬.১ ওভারে ২২৯/২ (গাপটিল ১১৮, নিকোলস ১৪, উইলিয়ামসন ৬৫, টেইলর ২১; মাশরাফি ৬-০-৩৭-০, সাইফ ৬-০-৪৪-০, মিরাজ ৭.১-০-৪২-০, মুস্তাফিজ ৯-০-৪২-২, সাব্বির ৪-০-২৮-০, সৌম্য ১-০-১০-০, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-২৫-০)।

ফল: নিউ জিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ২-০তে এগিয়ে