ঝিনাইদহে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আ’লীগের ভোট বিপর্যয়ের নেপথ্যে

আসিফ কাজল

সরাসরি ভোটে ঝিনাইদহের ৬৩ ইউনিয়নে নৌকার বিপর্যয় ঘটেছে। প্রার্থী মনোনয়ন ও কোন্দলের কারণে দলীয় প্রার্থীরা ভোটে আশানুরুপ সাফল্য পায়নি। ভোটে নৌকার চেয়ে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশি জয়ী হয়েছেন।

ঝিনাইদহ জেলার ৬৩ ইউনিয়নের ফলাফল জরিপ করে এই তথ্য উঠে এসেছে।

জেলা নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা গেছে, জেলার ৬৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬৩টিতে বিভিন্ন ধাপে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়। ঝিনাইদহের দুইটি ও শৈলকুপার দুইটি ইউনিয়নে মামলাসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভোট হয়নি।

৬৩ ইউনিয়নের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আবার সরাসরি ভোট হয়েছে ৫৭টিতে।

শৈলকুপা ও কালীগঞ্জে তিনটি করে মোট ৬টি ইউনিয়নে বিনা ভোটে নৌকার প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচতি হন।

৫৭টি ইউনিয়নে ভোট বিশ্লেষন করে দেখা যায়, নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সরাসরি ভোট ২৬টিতে নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে দল থেকে বহিস্কৃত বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৩১টিতে। সরাসরি ভোটে নৌকার এই বিপর্যয় দলীয় কোন্দল ও প্রার্থী মনোনয়নে বিচক্ষনার অভাব বলে দায়ী করছেন তৃণমুলের নেকাকর্মীরা।

ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আঃ ছালেক জানান, দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত মহেশপুর ইউপি নির্বাচনে ১২টির মধ্যে ৬টি নৌকা ও ৬টি স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় লাভ করেন।

একই দিনে কালীগঞ্জের ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৮টিতে নৌকা ও ৩টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেন। এই উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে বিনা ভোটে নৌকার ৩ প্রার্থী জয়লাভ করেন।

কোটচাঁদপুরে ৫টি ইউনিয়নে একটিতে নৌকা বাকী চারটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হন।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের ১৫টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সরাসরি ভোটে ৫টিতে নৌকা ও ১০টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেন।

সদর উপজেলার নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী তিনটিতে তৃতীয় স্থান ও একটিতে চতুর্থ স্থান দখল করেছে। মধ্যহাটী ও হলিধানী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত হরিণাকুন্ডুর ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ৮টি স্বতন্ত্র ও দুইটিতে ন্যেকার প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। হরিণাকুন্ডুর ফলসি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী শ্রী নিমাই চাঁদ মন্ডল দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন ৪২ ভোট পেয়ে রেকর্ড করেন। এ নিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়।

অনদিকে একই উপজেলার কাপাশহাটিয়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মশিয়ার রহমান জোয়ারদার স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীরা একমাত্র সুবিধা জনক স্থানে রয়েছে শৈলকুপায়।

শৈলকুপায় ১৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৯টিতে সরাসরি ভোট হয়। সেখানে দুইটিতে স্বতন্ত্র ও ৬টিতে নৌকার প্রার্থীরা জয়ী হন। তিনটি ইউনিয়নে বিনা ভোটে নৌকার প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

মামলা জটিলতায় শৈলকুপার মনোহরপুর ও নেত্যানন্দপুর ইউনিয়নে পঞ্চম ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলেও আগামী ১০ ফেব্রয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেছে নির্বাচন কমিশন।
নৌকার প্রার্থীর পরাজয়ের নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম ফোটন বলেন, প্রথম কথা আমাদের প্রার্থী বাছাই ঠিক হয়নি। যোগ্য প্রার্থীদের হাতে আমরা নৌকা প্রতিক তুলে দিতে পারিনি। তৃনমুল থেকে নাম পাঠানোর ক্ষেত্রে দলের সঙ্গে প্রতারণনা করা হয়েছে।

টাকার বিনিময়ে হাইব্রিডদের নাম পাঠানোর কারণে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতারা এক রকম ক্ষুদ্ধ হয়েই বিদ্রোহী প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন বলে এই নেতা দাবী করেন।

তাছাড়া বিএনপি ও জামায়াতের ভোটাররাও চায়নি নৌকা জয়ী হোক। সব মিলিয়ে এ ভাবেই জেলায় নৌকার প্রার্থীরা আশানুরুপ সাড়া ফেলতে পারিনি।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা তৈয়ব আলী জোয়ারদার বলেন, নৌকার প্রার্থীদের জয়ী করতে জেলা নেতারা আন্তরিক ছিলেন না। প্রার্থী বাছাইয়েও ছিল গাছাড়া ভাব। অনেকই তাদের পচ্ছন্দের প্রার্থীদের পাশ করাতে ব্যস্ত ছিলেন।

পুর্বাঞ্চলে নৌকার পরিবর্তে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মদদ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হরিণাকুন্ডু উপজেলার ফলসি ইউনিয়নে ৪২ ভোট পাওয়া নৌকার প্রার্থীকে কেন সুপারিশ করা হয়েছিল তা তদন্ত হওয়া দরকার।