চরাঞ্চালের কৃষকদের গুপ্তধন  কাঁচা বাদাম

মো:আরিফুল ইসলাম
নাগরপুর প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকায় বর্ষায় দু’কূল ছারিয়ে জল আর জল। এ যেন এক অপরিচিত, অচেনা নদী। নিমিষেই বিলিন করতে পারে মাইলের পর মাইল। যমুনার বুকে হঠাৎ জেগে ওঠা বালুচর –নদী পাড়ের মানুষগুলোর বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন। বর্ষা চলে গেলে যমুনার জলে ভেসে আসা বেলে-দোআঁশ মাটি আর নতুন নতুন চরে কৃষক-কৃষাণীর মনে রঙিন স্বপ্ন দোলা দেয়। সদ্য জেগে উঠা এক একটি  বালুচর যেন এক একটি গুপ্তধনের ভান্ডার। বাদামের সবুজ চারাগাছে রুপালী বালুচর যেন সবুজে মোড়ানো কার্পেট। এপ্রিল মাস থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চীনাবাদাম বপনের উপযুক্ত সময়। রবি মৌসুমে আশ্বিনের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত চীনাবাদাম বপন করা যায়।চলতি মৌসুমে বাদামের দাম ও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক অনেকটাই উৎফল্ল। তাই চরের কৃষক বাদামকে ভালোবেসে নাম দিয়েছেন “গুপ্তধন”।
সরজমিনে জেলার যমুনা বিধৌত নাগরপুরের বিভিন্ন চর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যমুনার বুকজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় বালুচরে চাষ হচ্ছে চিনা বাদাম। সবুজ বাদামে  ছেয়ে গেছে রূপালী বালুর চর । বাদাম গাছের মুঠি ধরে টান দিলেই উঠে আসে থোকা থোকা সোনালী রঙের চিনা বাদাম। এ যেন বালুর নিচে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধন ভান্ডার। বছরের এ সময়টা বাদাম তোলার মৌসুম। ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি চরাঞ্চলের চাষীরা বাদাম চারা পরিচর্যা বা বাদাম তোলার কাজ করছেন। পরিবারের নারী ও শিশুরাও এ কাজে সহযোগিতা করছে।। কৃষাণি ও কিশোর-কিশোরিরা গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়ে স্তুপ করে রাখছে। প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিরা জমি থেকে বাদাম হাটে নিয়ে বিক্রি করছেন। জোতদার ও বিত্তবান চাষিরা বাদাম শুকিয়ে গোলাজাত করে রাখছেন যাতে পরবর্তীতে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন । বাদামের মৌসুমে প্রতিদিন চরের কৃষকরা নৌকায় করে হাটে বাদাম বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। বাদাম বিক্রি করে তারা সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরেন।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে নাগরপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ৪টি ইউনিয়ন দপ্তিয়র,সলিমাবাদ,ভাড়রা ও মোকনায় প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাদাম চাষীরা জানান, যমুনা ও ধলেশ^রীর চরের মাটি চিনা বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ মাটিতে অন্য কোনো ফসল উৎপাদন করে বাদামের সমপরিমাণ লাভ হয় না। অন্যান্য ফসল উৎপাদনের চেয়ে চিনা বাদাম উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চরাঞ্চলের আমরা সবাই বাদাম চাষ করেছি। বাদাম রোপণের পর অন্য ফসলে ন্যায় কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। নেই রাসায়নিক সারের ব্যবহারও। বীজ রোপণ আর পরিপক্ব বাদাম উঠানোর শ্রমিক খরচ ছাড়া তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে। একটি ফসলেই আমাদের সারা বছরের সংসার চলে। বালুচরের এ ফসলটি আমাদের বেঁচে থাকার অন্যতম মাধ্যম। তাছাড়া ১২০ থেকে ১৫০ দিনের মধ্যে বাদাম তোলা যায়।  প্রতি মণ কাঁচা বাদাম বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায় এবং প্রতি মণ শুকনো বাদাম বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকায়। এবার ফলন ভালো হওয়ায় এক বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ মণ বাদাম পাওয়া যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাদামের ফলনও হয়েছে। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হবে। এছাড়া বাদাম গাছগুলো গো-খাদ্য ও জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এ বছর বাদাম চাষ করে অনেক লাভ হবে বলে আশা করছি।
সলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান শাহীদুল ইসলাম অপু বলেন, আমার সলিমাবাদ ইউনিয়নটি যমুনা নদীর পাড়ে। এ ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা নদীগর্ভে। কিছু জায়গায় চর জেগে উঠায় নদী পাড়ের মানুষগুলো এখানে বাদাম চাষ করে থাকে। চরাঞ্চলে বেশির ভাগ বারি চিনাবাদাম-৭ ও ৮ এর চাষ হচ্ছে। এছাড়াও বিনা-৪ ও বিজি-২ এর ফলন করে থাকে। তিনি মনে করেন, চাষিদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ,আর্থিক সহায়তা প্রদান ও কৃষি অফিসের সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে চাষিরা বাদাম চাষ করতে আরও বেশি অনুপ্রাণিত  হবেন।
এ ব্যাপারে নাগরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বিশ্বাস জানান, নাগরপুর উপজেলায় চলতি বছরে প্রায় ৪০ হেক্টর জায়গায় বাদামের চাষ হচ্ছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ৯০ মে.টন বাদামের ফলন বাদাম হবে বলে আশাবাদী। চরের কৃষকরা বাদামের লাভ পাওয়ায় প্রতিবছর বাদাম চাষের জমি বৃদ্ধি করছেন। এছাড়া আমরা বাদাম চাষীদের প্রতিবছরই বীজ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করে থাকি।