গ্রামীণফোনের পতনে রবির উত্থান

গ্রামীণফোনের সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এতে ক্রেতা সংকটে পড়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। অপরদিকে একইসময়ে উত্থান হয়েছে রবির শেয়ার। গতকাল মঙ্গলবার (৫ জুলাই) শেয়ারবাজারে লেনদেনের বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে।

শেয়ার বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরো বিষয়টি একটা ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। অনেকে মনে করছেন গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ সন্তোষজনক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত এই নিম্নমুখী প্রবণতা চলতে পারে।

চলমান পরিস্থিতির বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক এবং ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী  বলেন, “সিম বিক্রির সম্পূর্ণ তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে মন্তব্য করা কঠিন। তবে বৃহস্পতিবার যেভাবে শেয়ার বিক্রি শেষ হয়েছে, রবিবারও শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে একই আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।”

ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েদুর রহমান  বলেন, “পুরো বিষয়টি নিয়ে কারও কাছে কোনো তথ্য নেই। গ্রামীণফোন এখন পর্যন্ত কয়টি সিম বিক্রি করেছে বা নতুন সিমকার্ড বিক্রি না করলেও তাদের ব্যবসা আদৌ কমে যাবে কিনা তা আমরা বলতে পারব না।”

তবে শেয়ারবাজারে দরপতনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি গ্রামীণফোন।

এ বিষয়ে জানতে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন্স মোহাম্মদ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ঢাকা ট্রিবিউন। তবে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে কোন আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা মেলেনি।

যে কারণে গ্রামীণফোনের শেয়ার পতন

গত সপ্তাহের শেষ দিনে শেয়ারবাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের দর ৬ টাকা বা ২ শতাংশ কমেছে।

বৃহস্পতিবার যতটা অনুমতি গিয়েছিল কোম্পানির শেয়ারের দাম ততটা কমেছে।

কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বশেষ লেনদেন মূল্য ছিল ২৯৪.১ টাকা। এদিন কোম্পানিটি ১০৩২টি লেনদেনের মধ্যে ১,৭৩,২৬২টি শেয়ার লেনদেন করেছে, যার মূল্য বাজারে ৫.০৯ কোটি টাকা।

এর কারণ জানতে চাইলে বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, সিমকার্ড বিক্রি বন্ধ হলে কোম্পানির মুনাফা কমে যাবে। এ কারণে সচেতন ও লভ্যাংশ গ্রহণকারী বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করছেন।

এত বেশি শেয়ার বিক্রি হওয়ায় বাজারে বিক্রির চাপ বেড়েছে কোম্পানিটির। সার্কিট ব্রেকারের নিম্ন সীমা শেয়ারের লেনদেন বন্ধ না করলে দাম আরও নিচে নামতে পারে।

রবির শেয়ার মূল্য বাড়ছে, ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা

গ্রামীণফোনের এই পতনের দিনে উত্থান হয়েছে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের।

বৃহস্পতিবার শেয়ারদর বৃদ্ধির তালিকায় দশম অবস্থানে ছিল কোম্পানিটি।

রবি আজিয়াটা লিমিটেডের শেয়ারের দাম ১.৫০ টাকা বা ৫.২৪% বেড়েছে। শেয়ারটির সর্বশেষ ট্রেডিং মূল্য ছিল ৩০.১০ টাকা।

এদিন কোম্পানিটি ২৭১৩টি লেনদেনের মধ্যে ২৬,৯৩,৭৩৮টি শেয়ার লেনদেন করে।

শেয়ারবাজারে অন্যান্য কোম্পানির প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে সাঈদুর রহমান বলেন, রাতারাতি অন্য কোম্পানির শেয়ারের দামের কারণে কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না। কারণ আমাদের কাছে এবিষয়ে সঠিক তথ্য নেই।

এদিকে রবিতে বিনিয়োগ করাও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে রবির পরিচালকদের হাতে থাকা ৯০% শেয়ার পরের বছর বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। এতে বাজারে কোম্পানির শেয়ারের সরবরাহ বাড়তে পারে। সে সময় শেয়ারের উচ্চমূল্য বিনিয়োগকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

এ কারণে রবিতে অতিরিক্ত বিনিয়োগকেও ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

গ্রামীণফোনের সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা

মানসম্মত সেবা (ভয়েস কল ও ইন্টারনেট) দিতে না পারায় গত বুধবার দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের সিম বিক্রি নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি।

বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের পরিচালক গোলাম রাজ্জাক বলেন, সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য গ্রামীণফোনের সিম বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নতুন সিম বিক্রি করতে পারবে না গ্রামীণফোন।

তিনি বলেন, গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ ছিল। আবার বিটিআরসির পরীক্ষাতেও সেবার মান সন্তোষজনক বলে মনে হয়নি।

এদিকে নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় গ্রামীণফোন বলছে, তারা কিউওএস ও আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক মেনে চলছে।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি সাম্প্রতিক নিলামে সর্বোচ্চ অনুমোদিত স্পেকট্রাম অর্জন করে ও নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণের কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়। একইসঙ্গে নেটওয়ার্কের গুণমান ও পরিষেবাকে উন্নয়নে বিটিআরসি-র সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করছে।

গ্রামীণফোন টেলিকম গ্রাহকদের স্বার্থে সমস্যাগুলি সমাধানে নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।

রবিবার দেশে প্রথম টেলিকম অপারেটর হিসেবে মোবাইল রিচার্জের ন্যূনতম সীমা নির্ধারণ করে গ্রামীণফোন। এতে মোবাইল রিচার্জের সর্বনিম্ন সীমা ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়।

তবে, গ্রাহকরা এখনও ১৬ টাকা ও ১৪ টাকা মিনিট প্যাক কিনতে পারবেন বলে জানায় গ্রামীণফোন।