কবিগুরু থেকে শরৎচন্দ্র…কিংবদন্তিদের কিছু অজানা মজার গল্প!

বিশেষ প্রতিবেদক : বাংলা সাহিত্যর কথা বললেই যে নাম গুলো সবার মনে প্রথমে আসে তাঁরা হলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সুনিল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মত অনেকের নাম। তবে সাহিত্যকদের নাম মনে পড়লেই মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে তাঁদের অসামান্য সব লেখার কথা। কিন্তু তাঁরা যে সকলেই খুব গম্ভীর এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। বাস্তব জীবনে তাঁরা সকলেই ভীষণ রসিক মানুষ। যদিও রসিক না হলে মাথায় লেখাদের দোলাচলও যে সম্ভব নয়।

তাই বলে রবীন্দ্রনাথ নিজের চাপকানের ভেতর ডিম ভরে নিয়েছিলেন! এমন কথা কী শুনেছেন? হ্যাঁ এমনটা রবি ঠাকুরই করে ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ও ক্ষিতিমোহন সেন এক সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেন। সেই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত বাড়িতে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। ভূরিভোজ। রান্নাও হয়েছে অনেক কিছু। তারা ডিমও দিয়েছেন খেতে। রবি ঠাকুর তো ডিমে হাত দিয়েই বুঝে ছিলেন ডিম পচা। ক্ষিতিমোহন ও বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু কিছু না বলে অপেক্ষা করে আছেন রবি ঠাকুর কী করেন তা দেখার জন্য। ঠাকুর তো ডিমটা সাদা ভাত দিয়ে মেখে আস্ত মুখে দিলেন। কী আর করা, ক্ষিতিমোহনও ডিম মুখে দিলেন। দিতেই খাবার ফেলে রেখে গিয়ে তাঁকে বমি করতে হল। গোটা ব্যাপার দেখে ঠাকুর তো মুচকি হাসছেন। ক্ষিতিকে বললেন, ‘পচা জেনেও খেলে কেন?’ ক্ষিতি বললেন, ‘আপনাকে দেখেই তো খেলাম। আপনার তো কিছুই হল না। দিব্যি পচা ডিম হজম করে ফেললেন।’ ঠাকুর হেসে বললেন, ‘ধুর আমি খেয়েছি নাকি! আমি তো ওটা দাড়ির ভেতর দিয়ে সোজা কাপতানে চালান করে দিয়েছি।’ এমন মজার মানু্ষ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

কোনও অংশে কম যেতেন না বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। একবার তিনি স্ত্রী-কে নিয়ে ট্রেনে করে যাচ্ছেন। এক যুবক অনেকক্ষণ ধরে তাঁর স্ত্রী-কে দেখার চেষ্টা করছিল। বিষয়টা বুঝতে পেরে বঙ্কিমবাবু ছেলেটিকে ডেকে বললেন, ‘কী করা হয়?’ ছেলেটি বলে চাকরি করে, ত্রিশ টাকা রোজগার। হেসে বঙ্কিম বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি করি সঙ্গে বইও লিখি। হাজার দুয়েক রোজগার। সবই আমার স্ত্রীর চরণে দিই। তাও মন পাইনে ভাই। ত্রিশ টাকায় সে মন কী তুমি পাবে?’ ছেলেটি কামরা থেকেই নেমে যায়।

দীনবন্ধু মিত্র আর বঙ্কিম ছিলেন প্রাণের বন্ধু। একবার কাছাড় থেকে ফেরার থেকে সময় দীনবন্ধু একজোড়া জুতো কিনে আনেন বঙ্কিমের জন্য। পাঠিয়েও দেন। এবং চিঠিতে লেখেন, ‘কেমন জুতো!’

তা দেখে বঙ্কিমও চিঠির উত্তরে লেখেন, ‘তোমার মুখের মতো।’ এমনই মজার ছিলেন সকলে।

ওদিকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও কম যান না। ‘অরক্ষণীয়া’ ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায়। শেষ কিস্তিটি পড়ে হরিদাস চট্টোপাধ্যায় শরৎ বাবুকে শেষটা বদলে দিতে বললেন। সেই কথা মাথায় রেখে বদলে দিলেন শেষটা। জ্ঞানদাকে শ্মশান থেকে নিয়ে যায় অতুল। তারপর তাদের কী হল, তা আর লেখেননি শরৎ বাবু। ব্যস এই নিয়েই সকলে চিঠি লিখতে শুরু করে দপ্তরে। তাহলে কী অতুল বিয়ে করবে জ্ঞানদাকে! প্রশ্নের চিঠিতে পাগল পাগল অবস্থা সম্পাদকের। তিনি শরৎবাবুকে ডেকে বললেন, ‘কিছু একটা করুন!’ শরৎবাবু হাসতে হাসতে বললেন,’ বলে দিন তারপর জ্ঞানদা বা অতুল কারও সঙ্গেই আর শরৎবাবুর দেখা হয়নি।’ বোঝো কাণ্ড! সাহিত্যিকদের মজার ঘটনা বলে শেষ করা মুশকিল।