ঝিনাইদহের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ইংরেজি সাইনবোর্ড কি শোভা ছড়াচ্ছে?

ওমর আলী সোহাগ, ঝিনাইদহ

বাংলা আমার জীবনানন্দ, বাংলা প্রাণের সুখ! আমি একবার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ! প্রাণের বাংলা ভাষা পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার দামাল ছেলেরা ভাষার প্রতি যে ভালোবাসা শ্রদ্ধা দেখিয়েছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য। বিশ্বসংস্থা ইউনেস্কো দিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি। চলছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি।

মফস্বল শহর ঝিনাইদহেও ভাষার দাবিতে গড়ে উঠেছিল আন্দোলন। ৭ জন ভাষা সৈনিক যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

আজ নতুন প্রজন্ম তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে। বাংলা ভাষার জন্য যে আত্মত্যাগ, সংগ্রামের ইতিহাস তার অমর্যাদা করে ঝিনাইদহ শহরেও শুরু হয়েছে অপসংস্কৃতির চর্চা, মিথ্যা বিদেশি ভাষার আভিজাত্য।

শহরের বিভিন্ন জায়গায় খাবারের দোকান, আবাসিক হোটেল, আসবাবপত্রের দোকান, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও পণ্যের দোকানে শোভা পাচ্ছে শুধু মাত্র ইংরেজি অক্ষর ও ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড।

নিজেদের আধুনিক ও আভিজাত্য প্রকাশ করতেই এমন চটকদার সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে তারা। শহরের নামি-দাবি রেস্তোরা, আবাসিক হোটেল, মোটরসাইকেল শোরুম, মোবাইলের দোকান, কফি শপ, শপিং মলে শুধু মাত্র ইংরেজিতেই সাইনবোর্ড দেওয়া আছে।

শহরের মধ্যে দেখা গেছে থানার পাশে মকবুল হোসেন প্লাজায় ফুড সাফারি রেস্তোরা, কাপড়ের দোকান রিচ ম্যান, আবাসিক হোটেল হোটেল ইন্টারন্যাশলান ইনন, ইলেক্ট্রনিক্স শোরুম যমুনা প্লাজা, পাশের বিল্ডিংয়ে লুকস ফ্যাশন, স্ক্যাই ফ্যাশন, টার্গেট, স্মার্ট ক্লাব, এইচএসএস রোডে দেশ অটোর উত্তরা মটর্সের শোরুম, গ্রীন স্যানিটারি এন্ড মার্বেল শপ, মৌসুমি ফার্নিচার এন্ড হোম সল্যুশন, পায়রা চত্বরে মৌসুমি শপিং মল, সরকারি কেসি কলেজের পাশে বিভিন্ন মোবাইলের দোকানসহ অগ্নিবীনা সড়কে বিভিন্ন চাইনিজ রেস্ট্রুরেন্ট রয়েছে সম্পুর্ণ ইংরেজিতে লেখা সাইনবোর্ড দেওয়া।

এই বিষয়ে প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাবেক ছাত্রনেতা তৈয়ব আলী জোয়ার্দার ও পরিবেশবিদ মাসুদ আহমেদ সঞ্জু বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে এদেশের ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ যে আত্মত্যাগ করেছেন তার পৃথিবীর ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লিখিত হয়েছে। তাদের আত্মত্যাগের কারণে বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান দেখাচ্ছে সারা বিশ্ব। আর আমরা সেই দেশের নাগরিক হিসাবে অবশ্যই বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করা উচিত। আমাদের শহরেও একটি অপসংস্কৃতি শুরু হয়েছে। এইগুলি যেন দানা বাধতে না পারে সেই বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ।

ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি এম রায়হান বলেন, শুধু ভাষার মাসেই নয়, আমাদের রাষ্ট্রভাষা ও মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য সব সময় সচেতন থাকা উচিৎ। সব কিছুতে বাংলা ভাষার প্রাধান্য দিতে হবে।
ঝিনাইদহ জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ীরা বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি বা অন্য ভাষায় লিখতে পারে। কিন্তু দোকান বা ব্যবসার পরিচিতির জন্য সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষায় না লিখে অন্য ভাষায় লেখা অর্মযাদার সামিল।

সকলের ভাষার প্রতি, দেশের প্রতি মমত্ববোধ থাকা উচিৎ। এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।