৫ হাজারের অধিক জাল সার্টিফিকেট বিক্রি: কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্টসহ গ্রেফতার ২

বাংলা খবর : রাজধানীর মিরপুরের দক্ষিণ ও মধ্য পীরেরবাগ এবং আগারগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ হাজারের অধিক জাল সার্টিফিকেট তৈরি চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা-লালবাগ বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট এটিএম শামসুজ্জামান এবং তার সহযোগী ফয়সাল।

আজ সোমবার তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে একাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করা হাজার হাজার ফাঁকা সার্টিফিকেট এবং মার্কশিট, শতাধিক নকল সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়।

গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মশিউর রহমান বিপিএম-বার, পিপিএম-সেবা ডিএমপি নিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের অধিক সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বিক্রি করেছে। একই সাথে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে বিক্রয়কৃত সার্টিফিকেটগুলোকে সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করছেন। ফলে যে কোনো দেশে বসেই এই ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে সার্চ করলে তা সঠিক বলে প্রমাণিত হয়।

তিনি আরো বলেন, শামসুজ্জামানের বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে যোগদান করেছেন ২০০৯ সালে। বর্তমানে তার পদ সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট। বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলায় অবস্থিত কারিগরি বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা করা হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন, সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি, সেগুলোকে সার্ভারে আপলোড করা, ভেরিফিকেশন নিশ্চিত করা, কম্পিউটার সিস্টেম কোড সংরক্ষণে গোপনীয়তা বজায় রাখাসহ বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ডিজিটালাইজেশনের মূল দায়িত্ব তার কাঁধে। সহকর্মী কম্পিউটার অপারেটর বা এক্সপার্টদেরকে সাথে নিয়ে এই দায়িত্বটা তিনি পালন করবেন এটাই প্রত্যাশিত।

উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, কিন্তু শামসুজ্জামান তার অফিসিয়াল দায়িত্ব পালনের চেয়ে জাল সার্টিফিকেট তৈরিতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন। সিস্টেম অ্যানালিস্ট হওয়ার কারণে সারা দেশে প্রতি বছর কারিগরি শিক্ষা বাের্ডে কত হাজার পরীক্ষার্থী এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষায় জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে, কতজন ফর্ম পূরণ করে রোল নম্বর পেয়েছে, কতজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি, কতজন কৃতকার্য হয়েছে, কতজন অকৃতকার্য হয়েছে সব তথ্যই তার কাছে থাকতো। এ বিশাল তথ্য ভান্ডার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অথরিটি, সিস্টেম কোড ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ টাকার সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বাণিজ্য করেছে তারা।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, শামসুজ্জামান অফিসের কিছু লোক এবং বাইরের কিছু দালালকে দিয়ে মার্কশিট ও সার্টিফিকেট তৈরির এই বাণিজ্য করে আসছে। দালালরা কখনো কখনো ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতো তারা যে সার্টিফিকেট, মার্কশিট দিবে তা অনলাইনে ভেরিফাইড হবে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, শামসুজ্জামান অফিসের কিছু লোক এবং বাইরের কিছু দালালকে দিয়ে মার্কশিট ও সার্টিফিকেট তৈরির এই বাণিজ্য করে আসছে। দালালরা কখনো কখনো ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতো তারা যে সার্টিফিকেট, মার্কশিট দিবে তা অনলাইনে ভেরিফাইড হবে।

এটিএম শামসুজ্জামানকে ২০১৭ সালেও মার্কশিট ও সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিন্তু হাইকোর্টের মাধ্যমে আবার চাকরিতে পুনর্বাহল হয়ে সে এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পাঁচ হাজারের অধিক সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বিক্রি করেছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তদন্ত করে জড়িত সকলকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।