হোসেনপুরে বিলুপ্তির পথে গাব

মাহফুজ রাজা, কিশোরগঞ্জ থেকেঃ
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের প্রতিটি গ্রাম  সন্ধান করলে মেলে, অনেক  স্থানের নাম করণ করা হয়েছে  গাবতলী,কোনো না কোনো গাব গাছকে কেন্দ্র করেই স্ববলে প্রতিষ্ঠিত নাম গাবতলী।যদিও কোথাও কোথাও গাব গাছের অস্তিত্বও নেই বর্তমানে।
এক সময় শিশু-কিশোরের মুখে শোনা যেত, `গাব খাব না খাব কি? গাবের মতো মিষ্টি কি?’ এমন ছড়া এখন আর শোনা যায় না। উপজেলার গ্রামের রাস্তার ধারে ঝোপ-ঝাড়ে জন্মে, একাকী বেড়ে ওঠা গাব গাছের অভাব ছিল না একটি সময়।
গাছগুলোতে শত শত গাব পাকলেই গ্রামের শিশু-কিশোররা ভিড় জমাতো গাছ তলাতে। সবার হাতে থাকত মিষ্টি পাকা গাব। হোসেনপুর  উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরেও আগের মত গাব গাছের দেখা মেলেনি।
উপজেলার সাহেবেরচর গ্রামে বহু পুরোনো একটি গাব গাছকে ঘিরে ওই স্থানটি গাবতলী নামে পরিচিতি পেয়েছে। দেশি ফলের গাছগুলো দিনে দিনে সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে বাহারি ফল-ফলাদির নাম পর্যন্ত।
হোসেনপুরের মৎস্য শিকারীদের কাছেও গাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল।কারণ গাবের কষ ব্যবহার হয় মাছ ধরার জালের সুতুই। সখের বসে মৎস্য শিকারী মোন্তু মিয়া জানান, “নদীতে, খালে-বিলে মাছ মাইর হরলে মাছ মারা যাই,তবে আমরার আইত্তের (জাল)লাগে মজমুদ,জালে গাব লাগাইলে হুতা শক্ত হয়,হুতাটা কালা অয়া যায়, যারফলে মাছ মারতারি বেশি”
দেশি ফলের উৎপাদন ও সংরক্ষণে বাস্তবসম্মত কোনো পরিকল্পনা না থাকায় ফলের বাজার আজ হুমকির সম্মুখীন। অথচ সঠিক ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশীয় ফল রপ্তানি করে বিপুল বিদেশি মুদ্রা উপার্জন সম্ভব।
একটি গাব সুস্বাদু ও মিষ্টি, একে বিলাতি গাব বলা হয়। পাকলে এর রং হয় গাঢ় লাল। খোসার ওপরটা মখমলের মত। ফলের ভেতরটা সাদা।
অন্যটিকে দেশি গাব বলা হয়। এটি খেতে হালকা মিষ্টি ও কষযুক্ত। কাঁচা ফল সবুজ এবং পাকলে হলুদ হয়ে যায়। পাকা ফলের ভেতরটা আঠালো। এটি সাধারণত খাওয়া হয় না, ভেষজ চিকিৎসায় এর কিছু ব্যবহার আছে। এই গাব হতে আঠা প্রস্তুত করা হয় যা মৎস্যজীবীরা তাদের জালে ব্যবহার করেন। দেশি গাবের প্রধান ব্যবহার এটাই।
কৃষি কর্মকর্তারা মনে করেন , গাবগাছ আগে বসতবাড়ির আঙিনায় বেশি দেখা যেত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বেশি করে বসতঘর নির্মাণ করায় এবং গাব ফলের ভালো বাজার না থাকায় গাবগাছগুলো এখন বিলুপ্তির পথে।