শৈত্যপ্রবাহের বিস্তৃতি ৪৩ জেলায়, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশজুড়ে বাড়ছে শৈত্যপ্রবাহের বিস্তৃতি। চলতি শীত মৌসুমে দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ও সবচেয়ে বেশি এলাকাজুড়ে শৈত্যপ্রবাহ ছিল গতকাল মঙ্গলবার। আগের দিন ২২ জেলায় থাকা শৈত্যপ্রবাহ গতকাল ৪৩ জেলায় বিস্তৃত হয়। এর মধ্যে সাত জেলায় তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে ছিল। গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা ও সিরাজগঞ্জে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিস বলছে, এমন পরিস্থিতি আরও দু-তিন দিন থাকতে পারে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে আজ বুধবার বৃষ্টি হতে পারে। গতকাল ঢাকায় তাপমাত্রা নেমে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। রাজধানীর জন্য এটি মৌসুমের সর্বনিম্ন। তবে গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে– ২৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেছেন, মৌলভীবাজার, বরিশাল, ভোলা, কুমিল্লা জেলাসহ ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সূর্যের দেখা মেলায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা থাকবে। তাতে কিছু কিছু জায়গায় শৈত্যপ্রবাহ প্রশমিত হতে পারে।

২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেদিন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নামে দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন– ২ দশমিক ৬। এর আগে ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারি যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি দিনাজপুরে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের রেকর্ড রয়েছে।

১৯৬৮ সালে শ্রীমঙ্গলে ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার একটি রেকর্ড রয়েছে।

পারদ ১০ ডিগ্রির নিচে নামায় বিভিন্ন জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাসের সময় পিছিয়ে সকাল ১০টা করা হয়েছে।

উত্তরবঙ্গসহ বেশির ভাগ জেলায় অনুভূত হচ্ছে মাঘের হাড় কাঁপানো শীত। গতকাল সকালে রাজধানীতে সূর্যের দেখা মিললেও হিমেল হাওয়া বয়ে যাওয়ায় ছিল কাঁপুনি ধরানো শীত। এতে বিপাকে পড়েন খেটে খাওয়া মানুষ।

মাদারীপুরে এক সপ্তাহ ধরে সন্ধ্যার পরই বাড়ছে শীতের তীব্রতা, সঙ্গে কুয়াশা। মঙ্গলবার ভোরে এ নিয়েই কৃষকদের বোরো ধানের চারা রোপণ করতে দেখা গেছে। রাস্তাঘাটে শ্রমজীবীদের দেখা মিললেও তা কম। টাঙ্গাইলে এক সপ্তাহ ধরে দিনে কখনও কখনও সূর্য উঁকি দিচ্ছে। তবে বিকেল থেকে তাপমাত্রা এত কমছে যে, খড়কুটো জ্বালিয়ে তা নিবারণ করছেন সাধারণ মানুষ। ঘন কুয়াশায় ভরদুপুরে সড়কে গাড়ি চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। বেশির ভাগ সময় জনশূন্য থাকছে ব্যস্ততম সড়ক ও হাটবাজার।

নীলফামারীতে শীতের দাপটে বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ। জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। তাদের অভিযোগ, সরকারি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে যে পরিমাণ শীতবস্ত্র দেওয়া হয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। অবশ্য জেলায় সরকারিভাবে এ পর্যন্ত ৪২ হাজার কম্বল বিতরণের তথ্য জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ।

চুয়াডাঙ্গায় হাড় কাঁপানো শীতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জীবন। দুপুরে সূর্যের দেখা মেলায় কিছুটা স্বস্তি নেমে আসে। তবে শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘ হওয়ায় চুয়াডাঙ্গার প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও খোলা মাধ্যমিক স্কুল। এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া অভিভাবকদের।

পঞ্চগড়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে তিন দিন ও প্রাথমিকে দুদিন পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হলেও জানে না শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকালে মাধ্যমিকের অনেক বিদ্যালয়ে সময়মতো এসে ফেরত যায় শিক্ষার্থীরা।

যশোর শহরের লালদীঘি পাড়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ শ্রম বিক্রির জন্য জড়ো হন। কিন্তু তীব্র শীতে তা অর্ধেকে নেমেছে। তারপরও অনেকে কাজ না পেয়ে বাড়ি ফিরছেন।