মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ: আলোচনায় যাঁরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে দেশে ফিরেছেন। ইতোমধ্যে নারী সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখন যাচাই বাছাইয়ের পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। আর এই প্রজ্ঞাপন জারি হলেই সংসদে সংরক্ষিত আসনগুলোর মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। এর পরপরই মন্ত্রিসভার রদবদল হবে, এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। সম্প্রসারিত মন্ত্রীসভায় যাদের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে তারা হচ্ছেন, আমির হোসেন আমু এমপি, মীর্জা আজম এমপি, বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি, আব্দুল হাই এমপি, মুন্নুজান সুফিয়ান এবং তারানা হালিম (সংরক্ষিত নারী আসনে দু’জনেই এমপি নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন)।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ধরনের বক্তব্য আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমেই দিয়েছেন। এই বাস্তবতায় মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন, কারা কোন পদ পাচ্ছেন? এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন আড্ডায় মন্ত্রিসভা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, জল্পনা-কল্পনা চলছে। প্রত্যাশার কথাও বলছেন নেতাকর্মীরা। আর এই নতুন মন্ত্রিসভায় কারা থাকবেন সে নিয়ে নেতাদের পছন্দের কথা এবং তাদের মতামত জানাতে তারা কার্পণ্য করছেন না।

বর্তমানে যে ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা রয়েছে সেই মন্ত্রিসভায় অপূর্ণতা রয়েছে। ছয়টি দপ্তর প্রধানমন্ত্রী নিজ দায়িত্বে রেখেছেন। এর মধ্যে সংস্কৃতি এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ে কাউকেই দায়িত্ব দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তারানা হালিম পেতে পারেন এমন আলোচনা রয়েছে। তারানা হালিমকে দায়িত্ব না দেওয়া হলেও কোনো নারী সংসদ সদস্যের মধ্যে থেকে কেউ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন বলে বিভিন্ন সূত্র মনে করছে।

অন্যদিকে শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন রকম আলোচনা চলছে। কেউ কেউ মনে করছেন, আগের মেয়াদে মুন্নুজান সুফিয়ান যেহেতু এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন এবং তাকে যেহেতু সংসদ সদস্য হিসেবে সংরক্ষিত কোটায় নিয়ে আসা হয়েছে। কাজেই তিনি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

আবার কোনো কোনো মহল মনে করছেন যে, এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আওয়ামী লীগের কোনো হেভিওয়েট নেতা পেতে পারেন। বিশেষ করে মির্জা আজম বা বাহাউদ্দিন নাছিম এর মতো কোনো নেতাকে শেষ পর্যন্ত শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

এছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী নেই, সেখানে একজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীর বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেওয়া হতে পারে এমন গুঞ্জন রয়েছে। বর্তমান মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন এমন কাউকে তার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেওয়া হতে পারে এমন আলোচনা যেমন আছে, তেমনই নতুন কোনো মুখ বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে আসতে পারেন বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। বিশেষ করে রমজানের আগে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ যেখানে সরকারের চ্যালেঞ্জ, সেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এমন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে যিনি ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরতে পারেন। সে তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা আমির হোসন আমু এমপি কিম্বা ঝিনাইদহের আব্দুল হাই এমপি।

এছাড়াও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী বা পূর্ণমন্ত্রী দেওয়া হতে পারে বলেও আলাপ আলোচনা চলছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি দুটোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জুনায়েদ আহমেদ পলককে। এখান থেকে ডাক, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী দেয়া হতে পারে।

অনেক আলোচনায় শোনা যাচ্ছে যে, তারানা হালিম যেহেতু আগে ডাক, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, সেজন্য তাকে এই মন্ত্রণালয়ে ফিরিয়ে আনা হতে পারে। সেক্ষেত্রে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নতুন কাউকে দেওয়া হতে পারে। আবার অনেকে মনে করছেন যে, ডাক, টেলিযোগাযোগে কোনো নতুন মুখ আসতে পারেন যারা সংসদ সদস্য হয়েছেন। এছাড়াও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী দেওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। একইভাবে গুঞ্জন রয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়েও।

পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রণালয়েও একজন প্রতিমন্ত্রী বা মন্ত্রী নিয়োগ হতে পারে এমন আলোচনাও চলছে। তবে বিভিন্ন মহল মনে করছেন যে, তিন থেকে চারজন নারী মুখ আসতে পারেন, আরও এক থেকে দুইজন টেকনোক্র্যাট কোটায় নতুন মন্ত্রী হতে পারেন। মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে ১০ থেকে ১২ জন নতুন মুখ আসবেন এমনটি ধারণা করা হচ্ছে। তবে মন্ত্রণালয়ের দপ্তর রদবদল হবে কি না তা নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা আছে। কেউ কেউ মনে করছেন, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী হয়তো মন্ত্রিসভার রদবদল করবেন না।