মনিকা ইউনূসের প্রস্তাব: সরকার ড. ইউনূসকে কাজে লাগাতে পারেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কন্যা মনিকা ইউনূস সিএনএনের ক্রিস্টিনা আমানপোর কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরকারের সঙ্গে বাবার কাজের সুযোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, সরকার ড. ইউনূসকে কাজে লাগাতে পারেন এবং এই কাজে লাগানোর মাধ্যমে সরকার উপকৃত হবে।

বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে তার প্রত্যাশা কী—এমন প্রশ্নের জবাবে মনিকা বলেছেন, আমার প্রত্যাশা হলো শুধু আমার বাবা নন, তার সহকর্মীর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ বাতিল করা হোক। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রস্তাব দিয়েছেন সে অনুযায়ী কাজ হলে আমার খুবই ভাল লাগবে। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, পর্যালোচনার জন্য আন্তর্জাতিক আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞদের স্বাগত জানাবেন। আমি শতভাগ বিশ্বাস করি এমনটা করা হলে সব অভিযোগ পুরোপুরি বাতিল হয়ে যাবে। কারণ তিনি কোন অন্যায় করেননি।

সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে মনিকা ইউনূস বলেন, এই সরকারের সঙ্গে ড. ইউনূস আগেও কাজ করেছেন। আমি মনে করি তার বিরুদ্ধে ভ্রান্ত জঘন্য মামলা দিয়ে ১০ বছরের সময় ধরে তাকে হয়রানি করে সময় নষ্ট করার চেয়ে আবার একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এই কাজ করার সুযোগের মধ্য দিয়ে মনিকা ইউনূস আসলে একটি সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, তখন যখন ড. ইউনূসের সঙ্গে বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে গ্রামীণ ব্যাংকে এককালীন থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ড. ইউনূসের অনুরোধে গ্রামীণফোনকে মোবাইল অপারেটর হিসাবে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল এবং সেই অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এক কাপ চাও খাওয়াতে হয়নি তাকে এই গ্রামীণফোনের লাইসেন্স পেতে। কিন্তু ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পরপরই ড. ইউনূস পাল্টে যান।

মনিকা ইউনূস তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার পিতার কোন রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। যা সত্য নয়। কারণ ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর পরই ড. ইউনূস একটি রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামও সেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে ছিল। এটি ছিল আসলে বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়নের একটি অংশ, যেখানে সুশীল সমাজকে ক্ষমতা কেন্দ্রে আনার পরিকল্পনা ছিল।

সেই সময় রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাদ দিলেও ড. ইউনূস পরবর্তীতে ওয়ান ইলেভেন আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে জানা যায়। বিশেষ করে তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের গ্রন্থ পাঠ করলে দেখা যায় যে, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করতে চেয়েছিলেন ড. ইউনূসকে এবং ইউনূস সেসময় বলছিলেন, মাত্র দুই বছর সময় তার জন্য যথেষ্ট নয়। তিনি ১০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছেন। এই সময় ড. ইউনূসের বিতর্কিত ভূমিকাগুলোই আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি করছে। এরপর পদ্মা সেতুতে ড. ইউনূসের ভূমিকা বা বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় সরকার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপ তথ্য আন্তর্জাতিক মহলে প্রচারের জন্য ড. ইউনূস সরকারের সরকারের রোষানলে পড়ে।

তবে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, সরকারের সঙ্গে ড. ইউনূসের কোন ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূস মনে করেন, যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে, এ কারণে আইন তার জন্য প্রযোজ্য নয়। তিনি বয়স সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরও গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ আকড়ে ধরেছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। অর্থপাচার সহ নানা স্বেচ্ছাচারিতা এবং দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে। তবে সরকার ড. ইউনূসের সঙ্গে মনিকা ইউনূসের প্রস্তাব অনুযায়ী সমঝোতায় যাবে এমনটি ভাবনার কোন কারণ নেই। কারণ বিষয়টি নিয়ে যে মতবিরোধ তা সুষ্পষ্ট আইনগত। সরকারের অবস্থান হলো কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। ড. ইউনূস যতই পুরস্কারই পান না কেন তাকে দেশের আইন মানতে হবে। অন্যদিকে এ ধরনের সমঝোতা হরা হলেই প্রমাণিত হবে যে, ড. ইউনূসের মামলাগুলো ছিল রাজনৈতিক আক্রোশ প্রসূত। সরকার সে রকম ঝুঁকিতে যাবে না। তাই মনিকা ইউনূসের প্রস্তাবের ব্যাপারে সরকার যে কোন প্রক্রিয়া দেখা না এটা বলাই বাহুল্য।