নারীদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আলফা, কৃষি সাফল্যে মুখে হাসির ঝিলিক

আল-আমিন শেখ টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি:-
স্বামীর ১০ শতাংশ জমি দিয়ে ফসল চাষাবাদ শুরু করেছিলেন আলফা বেগম (৪০)। বর্তমানে তার জমির পরিমাণ তিন বিঘা। এ ছাড়া আরও চার বিঘা জমি ইজারা নিয়ে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করছেন। তার জমিতে বর্তমানে দুই জাতের পাট, তিল, ভুট্টা ও ধইঞ্চা চাষ করছেন। পাশাপাশি করছেন গরু ও ছাগল পালন। তার এমন উদ্যোগ ও সফলতা দেখে আশপাশের নারীরাও নেমে পড়েছেন কৃষিকাজে।

বলছিলাম এমনি এক নারী উদ্যোক্তা টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার জিগাতলা গ্রামের সুলতান শেখের স্ত্রী আলফা বেগমের কৃষি-সাফল্যের কথা। তিনি ১৫ বছর ধরে কৃষিকাজ করছেন। তার স্বামী একটি বেকারিতে ম্যানেজারের কাজ করেন। সংসারে দুই মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছে।

জানা গেছে, আলফা বেগম প্রথমে নিজের ১০ শতাংশ ও অন্যের দুই বিঘা জমি নিয়ে বিভিন্ন ফসলের চাষ শুরু করেন। চাষাবাদে যে টাকা আয় করেন, সেই টাকা দিয়েই তিনি বাড়িতে নতুন ঘর, জমিজমাসহ কিনেছেন গরু ও ছাগল। বর্তমানে তিনি তিন বিঘা জমির মালিক।

এছাড়া অন্যের আরও চার বিঘা জমি ইজারা নিয়ে বিভিন্ন ফসল লাগিয়েছেন। বর্তমানে তিনি দুই জাতের পাট, তিল ও ভুট্টা চাষ করছেন। তিনি ভুট্টা চাষ করেন গরুকে খাওয়ানোর জন্য। এতে দুধ দেওয়ার পাশাপাশি গরু হচ্ছে মোটাতাজা। সব মিলিয়ে বছরে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন কৃষি নারী উদ্যোক্তা আলফা বেগম।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাঁচি নিয়ে বের হয়ে যান ক্ষেতের পরিচর্যা করতে। এ ছাড়া ফসলে পোকার আক্রমণ হয়েছে কি না, সেটাও লক্ষ রাখছেন। ফসলের সঙ্গে গজানো ঘাষ কাটছেন কারণ বাড়িতে তিনি লালনপালন করেন গরু ও ছাগল।

আলফা বেগমকে গরু ও ছাগলের জন্য বাড়তি কিছু কিনতে হয় না তাকে। দিনে দুবার ক্ষেত থেকে ঘাষ কেটে আনেন। তার তিনটি গরুর মধ্যে একটি গরু বর্তমানে পাঁচ লিটার করে দুধ দিচ্ছে। তার এমন সাফল্য দেখে আশপাশের অনেক নারীই এখন চাষাবাদ শুরু করেছেন।

জিগাতলা গ্রামের স্থানীয়রা জানান, আলফা বেগম জমিতে চারা রোপণ থেকে শুরু করে নিড়ানি পর্যন্ত সব তিনিই করেন। মাঝেমধ্যে প্রয়োজন হলে দিনমজুর নেন। নিজের জমিচাষের পাশাপাশি অন্যের জমি বর্গা নেন। দুভাবেই বছরে তার প্রচুর টাকা উপার্জন হয়। তার দেখাদেখি অনেক নারীই কৃষিতে ঝুঁকছেন।

আলফা বেগম বলেন, নিজেই সব করি। সব সময়ই ফসলের খোঁজ নিই। বিভিন্ন ফসল চাষ করে জমি, গরু ও ছাগল কিনেছি। মৌসুমভেদে বিভিন্ন ফসল আবাদ করি। প্রায় ১৫ বছর ধরে চাষাবাদ করছি। ফসলের কোনো রোগবালাই হলে ওষুধের দোকান বা সারের দোকানে গিয়ে পরামর্শমতো ওষুধ প্রয়োগ করি। তবে কৃষি অফিস থেকে তেমন কোনো সহায়তা পাই না।

তিনি আরও বলেন, চার বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করে ভালো লাভ করেছি। বর্তমানে তিন বিঘা জমিতে পাট, এক বিঘা জমিতে তিল ও দুই বিঘা জমিতে ধইঞ্চা চাষ করছি। চাষাবাদ করে প্রতিবছর সংসারের খরচ বাদ দিয়ে লক্ষাধিক টাকা আয় থাকে আমার।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার আল মামুন রাসেল বলেন, কৃষি নারী উদ্যোক্তা আলফা বেগমকে নতুন ফসল চাষাবাদ করতে প্রযুক্তির ব্যবহার করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সরকারের যত ধরনের প্রণোদনা আছে, তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কৃষি অফিস থেকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করা হবে।