কোরআনের আলোকে বিচার ব্যবস্থা যেমন হওয়া উচিত।

কাজী সুলতানুল আরেফিনঃ
দুর্বলের উপর সবলের দাপট প্রাগৈতিহাসিক আমল থেকে মানুষের সমঅধিকার আর কল্যাণের জন্য আইনের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সেই আইনের বিচারেও মাঝে মাঝে বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়।

এতে আইনের কোনো দোষ নেই! দোষ কিছু মানুষের যারা কিনা মিথ্যার আয়নায় আইনকে ঢেকে রাখতে চায়। অনেকে মিথ্যা সাক্ষ্য বা কৌশলে সালিশ তথা বিচারে অনেককে হারিয়ে দেয়।

অনেকেই আবার অন্যায়কারীকে জিতে যেতে সাহায্য করে। কিন্তু আল্লাহ সব বিষয়ে জানেন এটা তারা মনে রাখে না। এই বিষয়ে আল্লাহ কোরআনে বলেছেন-

‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাহ ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয় স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাক্সক্ষী তোমাদের চেয়ে বেশি। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ-কর্ম সম্পর্কেই জানেন’। [ সূরা নিসা ৪:১৩৫ ]

দেশের একশ্রেণীর মানুষের কাছে এ স্বাধীনতার স্বাদ এখনও অধরা। এরা হচ্ছে খেটেখাওয়া দুর্বল শোষিত শ্রেণী। ক্ষমতা আর আর্থিক দুর্বলতা এদের স্বাধীনতাকে চারদিক থেকে মাকড়সার জালের মতো লেপটে রেখেছে।

এরা মত প্রকাশের স্বাধীনতা যেমন পায় না তেমনি পায় না নিজেদের প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার। দিনের পর দিন এরা শোষিত হচ্ছে একশ্রেণীর স্বার্থ আদায়কারীর কাছে। শ্রম দিয়েও শ্রমের মর্যাদা এদের জোটে না ঠিকঠাক।

এরা সোনার ফসলের সঠিক মূল্য পায় না। সামাজিক মূল্যায়ন যেমন এদের সুপ্রসন্ন নয় তেমনি সামাজিক বিচার আচারও প্রায় এদের বিরুদ্ধে যায়। কিন্তু ধনী-গরিব সবার সমান বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে ধর্মে এবং কোরআনে।

কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, ‘তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতগুলো প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের কোনো বিচার-মীমাংসা করতে শুরু কর, তখন মীমাংসা কর ন্যায়ভিত্তিক। আল্লাহ তোমাদিগকে সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী’। [সূরা নিসা ৪:৫৮]

বিচার আচারে গিয়ে অনেক মীমাংসাকারী বা সাক্ষীরা অনেক সময় শুধু শোনা কথার ওপর ভিত্তি করে কারও ওপর শাস্তি চাপিয়ে দেন! কিন্তু ইসলামে শুধু কান কথাকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করার ওপর নির্ভর করে না।

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শোনে [বিনা বিচারে] তা-ই বর্ণনা করে।’ (মুসলিম)

বিচার করতে গিয়ে কাউকে দুর্বল পেয়ে অন্যায়ভাবে কিছু চাপিয়ে দেয়া অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের অন্যায়কারীদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।

আল্লাহ আরও বলেন, ‘অতঃপর তোমরা যা বল তারা তা মিথ্যা বলেছে। অতএব তোমরা আজাব ফেরাতে পারবে না এবং কোনো সাহায্যও করতে পারবে না। আর তোমাদের মধ্যে যে জুলম করবে তাকে আমি মহা আজাব দুর্জোগ দেব। [সূরা আল-ফুরকান-১৯]

আসুন কোনো সমস্যা বা বিরোধের মীমাংসা করতে গিয়ে দুর্বল-সবল দু’জনকেই সমানভাবে গ্রহণ করি। সত্যি সাক্ষ্য দিয়ে আল্লাহর কাছে অপরাধী হওয়া থেকে বেঁচে থাকি।

লেখক : প্রাবন্ধিক