কক্সবাজারে পর্যটক গৃহবধূকে ধর্ষণ: অভিযোগ নিয়ে সন্দেহ এসপির

ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারে আসা সেই ‘পর্যটককে’ ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে তুলে নেওয়া এবং ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান।

আদালতে ওই নারীর জবানবন্দি শেষে শুক্রবার রাতে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, গত তিন মাসে স্বামী-সন্তান নিয়ে কয়েকবার কক্সবাজারে এসেছিলেন ঢাকার যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা ওই নারী। যাদের বিরুদ্ধে তিনি ধর্ষণের মামলা করেছেন, তাদের একজনের সঙ্গে তার আগে থেকেই ‘পরিচয় ছিল’।

২৫ বছর বয়সী ওই নারীর অভিযোগ, বুধবার সন্ধ্যায় সংঘবদ্ধ একটি চক্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে তাকে তুলে নেয়। তার স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে এবং হত্যার হুমকি দিয়ে তাকে ‘কয়েক দফা ধর্ষণ করে’ তিনজন।

পরে খবর পেয়ে জিয়া গেস্ট ইন নামের এক হোটেল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে র‌্যাব। এ ঘটনায় হোটেলটির ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে আটক করা হয়।

ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীর স্বামী চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও তিনজনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেন। মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক রুহুল আমিনকে।

মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা মৃত আব্দুল করিমের ছেলে আশিকুল ইসলাম আশিক, একই এলাকার মো. শফিউদ্দিন শফির ছেলে ইসরাফিল হুদা জয় ও আবুল কাশেমের ছেলে মেহেদী হাসান বাবু এবং কক্সবাজার সদরের পিএমখালীর জসিম উদ্দিনের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন ছোটন।

আসামিদের মধ্যে রিয়াজ উদ্দিন ছোটন জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ব্যবস্থাপক, তাকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শুক্রবার সকালে ট্যুরিস্ট পুলিশ ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর বিকালে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হামীমুন তাজনীনের আদালতে তার জবানবন্দি নেওয়া হয়।

তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে জবানবন্দি দেওয়র পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে আদালত থেকে বের হন মামলার বাদী।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের সুপারিনটেনডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, স্বামী ও সন্তানসহ ওই নারীকে কক্সবাজারের একটি স্থানে অবস্থান করছেন। পুলিশ তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে।

সকালে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই নারী ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন জানিয়ে জিল্লুর রহমান বলেন, “মামলার প্রধান আসামি আশিকুল ইসলাম আশিকের সঙ্গে তার পূর্ব পরিচয় ছিল। গত তিন মাসে স্বামী ও সন্তানসহ তিনি কয়েকবার কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল অবস্থান করছেন।

“পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পেয়েছে, ভিন্ন কারণে ওই নারী স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন। তাদের সঙ্গে আশিকসহ স্থানীয় কারো কারো সঙ্গে লেনদেন রয়েছে।”

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “ওই নারীকে আশিক মোটরসাইকেলে করে মেইন রোড দিয়ে নিয়ে যায়। সেখানে অনেক লোকজন ছিল। তিনি (নারী ) বাইকের পিছনে বসা ছিলেন। কিন্তু তিনি চিৎকার-চেঁচামেচি কিছুই করনেনি।”

ঘটনার দিন জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ কল দিয়েও সহায়তা না পাওয়ার যে অভিযোগ ওই নারী করেছেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে জিল্লুর রহমান বলেন, “এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ৯৯৯-এ ফোন করে ওই নারী কোনো তথ্য দেননি। তিনি ও তার স্বামী আইন-শৃংখলা বাহিনীর অন্য সংস্থাকে ফোন করে তথ্য দিয়েছেন।

“ভিকটিমকে যখন আশিক নিয়ে যায়, সেই সময় ওই নারী (ভিকটিম) তার পারসোনাল কাজে সি টাউন নামের অন্য এক হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তার স্বামী অবস্থান করছিলেন অন্য একটি হোটেলে। ভিকটিমের তথ্য অনুযায়ী, তার স্বামীকে ফোন করে আশিক চাঁদা চেয়েছিল। চাঁদা না দেওয়ায় আশিক তার ওয়াইফকে (স্ত্রী) রেপ করার হুমকি দিয়েছিল। এরপর তার (ওই নারী) স্বামী আইন-শৃংখলা বাহিনীর অন্য একটি সংস্থাকে ফোন করে তথ্য দেন।”

ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি বলেন, আশিকের বিরুদ্ধে হত্যা, নারী নির্যাতন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদকসহ নানা অপরাধে ১৬টি মামলা রয়েছে। একটি ছিনতাই মামলায় তিনি গত ১৬ ডিসেম্বর জামিনে কারাগার থেকে বের হন।

“আশিকের নেতৃত্বে অপরাধীদের সংঘবদ্ধ একটি চক্রও এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত। ঘটনায় আশিকের অন্যতম সহযোগী ইসরাফিল হুদা জয় একজন চিহ্নিত অপরাধী।

“জয়ের নামেও হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুটি মামলা রয়েছে। সেও একাধিবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। মামলার অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেও নানা অপরাধের অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।”