এমপি দুলাভাই তাই!

এই আমার দেশ ডেস্ক

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার চরতী ইউনিয়নে রাস্তায় রাস্তায় চোখে পড়ে একটি ফেস্টুন। সেটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মো. রুহুল্লাহ চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারের জন্য। ফেস্টুনের একপাশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। তার ডান পাশে সমান আকারের জায়গা নিয়ে রয়েছে আরও দুজনের ছবি। তাঁরা হলেন চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী ও তাঁর স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী। তাঁরা রুহুল্লাহ চৌধুরীর বোন ও দুলাভাই। ফেস্টুনে এ ধরনের ছবি দেওয়া নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন।

ফেস্টুনে এই চারজনের নিচে ঢাউস আকারে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রুহুল্লাহ চৌধুরীর মুজিব কোর্ট–সংবলিত ছবি। পাশে লেখা, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জনগণের সেবা করার সুযোগ দিন।’ রুহুল্লাহ চৌধুরী জামায়াতের প্রয়াত ও সাবেক নেতা মুহাম্মদ মুমিনুল হক চৌধুরীর ছেলে। মুহাম্মদ মুমিনুল হক চৌধুরী জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য।

রুহুল্লাহ চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মঈনুদ্দিন চৌধুরীর অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দল আওয়ামী লীগের রাজনীতিটা বুঝতে কিছুটা সময় লাগছে রুহুল্লাহ চৌধুরীর। সে কারণেই তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি না মেনে ফেস্টুনে সাংসদ দুলাভাই ও বোনের ছবি ছাপছেন। রুহুল্লাহ নেজামুদ্দীনের স্ত্রী রিজিয়া রেজার আপন ভাই। এ ছাড়া তিনি জামায়াত নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের সমর্থনের জন্য প্রকাশ্যে মরিয়া হয়েছেন।

আগামী সোমবার সাতকানিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা ২০১৬–এর ৮–এর ৩ ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিজ ছবি ও প্রতীক ব্যতীত অন্য কাহারো নাম, ছবি বা প্রতীক ছাপাইতে পারিবেন না। তবে শর্ত থাকে যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিজে কোনো রাজনৈতিক দলের মনোনীত হইলে, সে ক্ষেত্রে তিনি কেবল তাহার দলের বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি পোস্টারে বা লিফলেটে ছাপাইতে পারিবেন।’

কিন্তু চরতী ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তায় রাস্তায় নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের এমন সব ফেস্টুন উড়ছে। চরতীর খতিরহাট এলাকায় এ ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘনকারী ফেস্টুন এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শোভা পাচ্ছে। এ ছাড়া কয়েকটি নির্বাচনী ক্যাম্পেও এ ধরনের ফেস্টুন রয়েছে। নির্বাচনী একই আচরণ বিধিমালার ৩১ বিধিমালার বিধান লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ (১)–এ রয়েছে, ‘কোনো প্রার্থী বা তাহার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচন–পূর্ব সময়ে এই বিধিমালার কোনো বিধান লঙ্ঘন করিলে অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।’

এর আগে রুহল্লাহ চৌধুরী ও তাঁর বোন রিজিয়া রেজা জামায়াতের বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিম নৌকার প্রচারে নেমেছেন, এমন ছবি ফেসবুকে দেন। এ ব্যাপারে রুহুল্লাহ চৌধুরী বলেন, রেজাউল নৌকার পক্ষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি তাঁর জন্য প্রচারে আছেন। তবে এ দাবি অস্বীকার করেছেন রেজাউল করিম।
এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘দলীয় প্রধান ছাড়া অন্য কারও ছবি দেওয়ার বিধান নেই। আমরা তাঁদের এসব প্রচারপত্র সরিয়ে নিতে বলেছি। জরিমানাও করা হচ্ছে। আরও যদি থাকে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এক সপ্তাহের বেশি সময় আগে থেকে খতিরহাট এলাকায় এ ধরনের ফেস্টুন–সংবলিত ছবি দেখা যাচ্ছে রুহুল্লাহ চৌধুরীর ফেসবুকে। এ ব্যাপারে রুহুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের ফেস্টুন আমি দিইনি। কেউ ব্যক্তিগতভাবে ভালোবেসে দিতে পারে। আমি খোঁজ নেব।’

এর আগে রুহল্লাহ চৌধুরী ও তাঁর বোন রিজিয়া রেজা জামায়াতের বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিম নৌকার প্রচারে নেমেছেন, এমন ছবি ফেসবুকে দেন। এ ব্যাপারে রুহুল্লাহ চৌধুরী বলেন, রেজাউল নৌকার পক্ষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি তাঁর জন্য প্রচারে আছেন। তবে এ দাবি অস্বীকার করেছেন রেজাউল করিম।

রুহুল্লাহর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মঈনুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘জামায়াত থেকে এসে হঠাৎ নৌকার কান্ডারি বনে গেছেন। জামায়াত করে আসা রুহুল্লাহর কাছ থেকে এর বেশি কী আশা করা যায়। তাই বেশি আওয়ামী লীগগিরি দেখাতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবিও ব্যানারে যুক্ত করেছেন। তাতে সমমর্যাদায় আসীন করেছেন নিজের দুলাভাই ও বোনকে।’ মঈনুদ্দিন চৌধুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এর আগে দলীয় মনোনয়ন লাভের পর তাঁর বিরোধিতা করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। রুহুল্লাহর মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার জন্য গত ৭ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দীন চৌধুরী মনোনয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন। এতে রুহুল্লাহ সম্পর্কে বলা হয়, ‘জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির পর তাঁর গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করেন রাজাকার মুমিনুল হক চৌধুরীর ছেলে রুহুল্লাহ চৌধুরী। এ ছাড়া গত বছরের ৩০ অক্টোবর চরতীতে কৃষকদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে রুহুল্লাহর বিরুদ্ধে।’