এক নজরে আওয়ামী লীগের ইতিহাস

এই আমার দেশ ডেস্ক : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ৭০ বছরে বাঙালীর ঐতিহ্য, কৃষ্টি এবং সংস্কৃতির ধারক বাহক প্রধান রাজনৈতিক সংগঠন। বাংলাদেশের ইতিহাস আর আওয়ামী লীগের বিকাশ এক সময় এক বিন্দুতে মিলিত হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের রাজনৈতিক মুক্তিদাতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন। জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাঙালীর অধিকার আদায়ের নিরন্তর সংগ্রাম করেছে। আজ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ৭০ বছরের এই ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের ঘটনাপঞ্জীর একটি ধারাবাহিক সময় নির্ঘণ্ট এটি। যা এদেশের ইতিহাসেরও এক অবিচ্ছেদ্য অংশ-

১৯৪৭

১৪ আগস্ট: ভারত ভাগ। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম। পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অংশ।
৬ সেপ্টেম্বর: ঢাকায় গণতান্ত্রিক যুব কর্মীদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৪৮
২৩ ফেব্রুয়ারি: তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু তার তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ করেন।

২ মার্চ: রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।

২৩ জুন: পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় এবং জেলে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রথম সভাপতি হন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানি। সাধারণ সম্পাদক করা হয় শামসুল হককে।

১৯৫২
২১ ফেব্রুয়ারি: রাষ্ট্রভাষার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদ মিছিলে গুলি চলে। শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকতসহ অনেকে। জেল থেকে বঙ্গবন্ধু এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেন এবং একটানা ৩ দিন অনশন অব্যাহত রাখেন।

১৯৫৩
১৬ নভেম্বর: প্রাদেশিক আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
৪ ডিসেম্বর: প্রথম সাধারণ নির্বাচনে সব বিরোধী দল মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে।

১৯৫৪
১০ মার্চ: সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসনে বিজয়ী হয়। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের আসনে বিজয়ী হন।
২ এপ্রিল: যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়।

১৯৫৫
১৭ জুন: ঢাকার পল্টনের জনসভা থেকে বঙ্গবন্ধু প্রথম পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন দাবি করেন।
২১ অক্টোবর: আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশন ধর্ম নিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দ প্রত্যাহার করে নতুন নামকরণ করা হয় আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৮
৭ অক্টোবর: জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীর উপর আক্রমন এবং তার মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন।

১২ অক্টোবর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এসময় তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়।
১৯৬২
২ জুন: চার বছরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটলে ১৮ জুন শেখ মুজিব মুক্তি লাভ করেন।

১৯৬৪
২৫ জানুয়ারি: বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
২৬ জুলাই: বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সম্মিলিত বিরোধী দল কঅপ (কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি) গঠিত হয়।

১৯৬৫
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কঅপ এর পক্ষ থেকে মিস ফাতিমা জিন্নাহকে প্রার্থী দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু ফাতিমা জিন্নাহর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ১৪ দিন আগে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১৯৬৬
১০ ফেব্রুয়ারি: আওয়ামী লীগের কমিটির সভায় ছয় দফা উত্থাপন করা হয়।
১৮ মার্চ: আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ৬ দফা গৃহীত হয়। এই কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু সভাপতি ও তাজউদ্দিন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৬৮
৩ জানুয়ারি: পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জন বাঙালী সেনা ও সিএসপি অফিসারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।

১৭ জানুয়ারি: বিচারের রায়ে বঙ্গবন্ধু বেকসুর খালাস পেলেও জেলগেট থেকে তাঁকে সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। এখানে শুরু হয় তাঁর সেনা আইনে বিচার।

১৯৬৯
২৮ জানুয়ারি: নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে লিখিত বিবৃতি দেন বঙ্গবন্ধু। এই বিবৃতি পড়ে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে গোটা দেশবাসী প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। তাঁর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ছাত্র সমাজ ছয় দফার সমর্থনে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করে।

২২ ফেব্রুয়ারি: তীব্র গণআন্দোলনের মুখে সরকার রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য শিরোনামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নেয়।

২৩ ফেব্রুয়ারি: ডাকসু এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবকে এক বিশাল সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করে। ঐ সভায় শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু` উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

১০ মার্চ: রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন। গোল টেবিলে ৬ দফার পক্ষে বঙ্গবন্ধু দৃঢ় অবস্থান নেন। তবে ঐ বৈঠক ব্যর্থ হয়।

২৫ মার্চ: রাওয়ালপিন্ডি গোল টেবিল বৈঠক ব্যর্থ হবার পরিপ্রেক্ষিতে আইয়ুব খান ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ইয়াহিয়া সামরিক শাসন জারি করেন।

২৮ নভেম্বর: জাতির উদ্দেশ্যে এক বেতার ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ এর ১ জানুয়ারি থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। ঐ বছরের শেষ ভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথাও ঘোষণা করেন।

১৯৭০
১ জানুয়ারি: ১৯৫৮ সালের পর প্রথম রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। বঙ্গবন্ধু প্রথম দিন থেকেই ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন।

৪ জুন: নির্বাচনকে সামনে রেখে মতিঝিল ইডেন হোটেল প্রাঙ্গনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

১২ নভেম্বর: পূর্ব বাংলায় ভয়াবহ ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসে ১০/১২ লাখ মানুষ মারা যায়। বঙ্গবন্ধু তার নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত করে ত্রান কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি এই অঞ্চলের জনগনের প্রতি সরকারের চরম উদাসীনতা তুলে ধরেন। এই সময় সোনার বাংলা শ্মশান কেন শিরোনামে; তথ্য সম্বলিত একটি পোস্টার জাতিকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেয়।

৭ ডিসেম্বর: বন্যাদূর্গত এলাকা বাদে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন পেয়ে সমগ্র পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পাকিস্তান পিপলস পার্টি পায় ৮৮টি আসন।

১৭ ডিসেম্বর: প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে ২৯৮টি আসন লাভ করে।

১৯৭১
৩ জানুয়ারি: আওয়ামী লীগের সকল নির্বাচিত সদস্য ছয় দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রনয়ণ তথা ছয় দফা বাস্তবায়নের শপথ গ্রহণ করেন। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি এই রবীন্দ্র সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। বঙ্গবন্ধু জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বাঙালী জাতির মুক্তির সংকল্প ব্যক্ত করেন। শপথ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সংগীতের পর জয় বাংলা বাংলার জয়` গানটি পরিবেশিত হয়।

১০ জানুয়ারি: প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করেন। ৪ দিন পর ফিরে যাবার সময় তিনি বলেন, শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন।

২৭ জানুয়ারি: জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকা এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেন। কিন্তু ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হয়।

১৩ ফেব্রুয়ারি: এক সরকারী ঘোষণায় বলা হয় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় ৩ মার্চ ১৯৭১ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করেছেন।

১৬ ফেব্রুয়ারি: আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করা হয়।

১ মার্চ: জাতীয় পরিষদ অধিবেশনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক শুরু হয় হোটেল পূর্বানীতে। ঐ দিনই আকস্মিকভাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। সারা বাংলা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জনসমুদ্রে পরিণত হয় রাজপথ। বঙ্গবন্ধু এটাকে শাসকদের আরেকটি চক্রান্ত বলে চিহ্নিত করেন। তিনি ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা পুর্ব পাকিস্তানে হরতাল আহবান করেন।

২ মার্চ: ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়। উত্তাল জনস্রোতে ঢাকা পরিণত হয় এক বিক্ষোভের শহরে। জান্তা সরকার ঢাকা শহরের পৌর এলাকায় সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারফিউ জারি করে। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ: বিক্ষুব্ধ জনতা কারফিউ উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে। সামরিক জান্তার গুলিতে মারা যান ৩ জন। আহত হন কমপক্ষে ৬০ জন। এ সময় পুরো দেশ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে।

৭ মার্চ: বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক যুগান্তকারী ভাষণে ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে স্পষ্ট হয়ে যায় স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যত। সারাদেশে শুরু হয় এক অভুতপূর্ব অসহযোগ আন্দোলন।

১৬ মার্চ: বিস্ফোরন্মুখ বাংলাদেশে আসেন ইয়াহিয়া খান। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার দীর্ঘ আলোচনা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে হেয়ার রোডে প্রেসিডেন্ট ভবনে আলোচনার জন্য যান।

১৭ মার্চ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫১ তম জন্মদিন। এই দিন ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা থেকে ফিরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন এ দেশে জন্মদিনই বা কি আর মৃত্যুদিনই বা কি! আমার জনগনই আমার জীবন।

২৩ মার্চ: কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ প্রতিরোধ দিবস পালনের ঘোষণা দেন। সমস্ত সরকারী এবং বেসরকারী ভবনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু এদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন।

২৫ মার্চ: পৃথিবীর ইতিহাসে এক নৃশংসতম কালরাত্রি ২৫ মার্চ। এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বাসভবনে মানুষের ঢল নামে। সন্ধ্যায় খবর পাওয়া যায় ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগ করেছেন। এসময় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। রাত সাড়ে এগারটায় শুরু হয় ইতিহাসের জঘণ্যতম গণহত্যা অপারেশন সার্চ লাইট্।

২৬ মার্চ: ২৫ মার্চ রাত ১২.৩০ মিনিট অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কতৃক গ্রেপ্তার হবার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাবার্তা ওয়ারলেসযোগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরীকে প্রেরণ করেন। চট্টগ্রাম বেতার থেকে আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বানী স্বকণ্ঠে প্রচার করেন। পরে ২৭ মার্চ চট্টগ্রামে অবস্থিত অষ্টম ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান ঐ ঘোষণা পুনঃপাঠ করেন। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে করাচিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

২৭ মার্চ: বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এবং স্বাধীনতার ঘোষণার আলোকে বীর বাঙালী গড়ে তোলে স্বত:স্ফূর্ত প্রতিরোধ। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের এক গৌরবজ্জল অধ্যায়।

১৭ এপ্রিল: তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার ভবের পাড়ার (বৈদ্যনাথ তলা) আমবাগানে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহম্মদ ঘোষণা করেন, আজ থেকে (১৭ এপ্রিল) বৈদ্যনাথ তলার নাম মুজিব নগর এবং অস্থায়ী রাজধানী মুজিব নগর থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করা হয়।

২৫ মে: ক্রমেই মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হতে শুরু করে। সংগঠিত হয় প্রবাসী সরকার। ২৫ মে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু হয়। এই কেন্দ্রের সিগনেচার টিউন ছিলো জয় বাংলা বাংলার জয়`। কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচারিত হতে থাকে। এই কেন্দ্র থেকে প্রচারিত শোনো একটি মুজিবরের কণ্ঠে গানটি বাঙালীর উদ্দীপনা বাড়িয়ে দেয়।

৩ আগস্ট: পাকিস্তান টেলিভিশন থেকে বলা হয় ১১ আগস্ট থেকে সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধুর বিচার শুরু হবে। এই ঘোষণায় বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ এবং উদ্বেগের ঝড় বয়ে যায়। বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রবাসী বাঙালীরা আন্তজার্তিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবী সন ম্যাকব্রাইডকে ইসলামাবাদে পাঠান। কিন্তু পাকিস্তানী জান্তা সরকার বিদেশি আইনজীবী নিয়োগে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে।

১০ আগস্ট: পাকিস্তানী জান্তা সরকার বঙ্গবন্ধুর পক্ষ সমর্থনের জন্য আইনজীবী একে ব্রোহীকে নিয়োগ দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে যখন ২৬ মার্চ ইয়াহিয়া খানের ভাষনের টেপ শোনানো হয় তখন তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে অস্বীকার করেন এবং ব্রোহীকে অব্যাহতি দেন। জাতীয় ও আন্তজার্তিকভাবে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাপক জনমত তৈরী হয়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবতা স্পর্শ করতে থাকে।

২ ডিসেম্বর: বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের মুক্তির সংগ্রাম যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখন লায়লাপুর কারাগারে ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ঐ সমঝোতা প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করেন।

১৬ ডিসেম্বর: ত্রিশ লাখ শহীদ এবং তিন লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আসে আমাদের বিজয়। বাঙালী জাতি মুক্ত হয় পরাধীনতার শৃংখল থেকে। কিন্তু মুক্তির অপূর্ণতা রয়ে যায়, স্বাধীনতার স্থপতি তখন নির্জন কারাগারে। এই দিন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

১৯৭২
৩ জানুয়ারি: পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচিতে ঘোষণা করেন, শেখ মুজিবকে বিনা শর্তে মুক্তি দেয়া হবে।

৮ জানুয়ারি: বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পান। পিআইয়ের একটি বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে পাঠানো হয়। ৮ জানুয়ারি ভোরে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌছেন। তার হোটেলের সামনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা করেন, আমি আমার জনগনের কাছে ফিরে যেতে চাই।প্রিয় মাতৃভূমিতে পা রাখেন জাতির পিতা। লাখো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত জাতির পিতা এক আবেগময় ভাষ্ণ দেন রেসকোর্স ময়দানে।

১২ জানুয়ারি: দেশে রাষ্ট্রপতি শাসনের পরিবর্তে সংসদীয় শাসন কাঠামো প্রবর্তন এবং নতুন মন্ত্রী পরিষদ গঠন করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

১২ মার্চ: স্বাধীনতার মাত্র ৫০ দিনের মধ্যে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়।

২৬ মার্চ: শোষনহীন সমাজ গঠনের অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে প্রথম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়।

১০ এপ্রিল: গণপরিষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কিত প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়।

৪ নভেম্বর: গণপরিষদে বাংলাদেশের খসড়া শাসনতন্ত্র অনুমোদিত হয়। এ উপলক্ষ্যে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, বিজয়ের ৯ মাসের মধ্যে শাসনতন্ত্র দেয়া, মানুষের মৌলিক অধিকার দেয়ার অর্থ হলো আমরা জনগনের উপর বিশ্বাস করি।

১৬ ডিসেম্বর: নতুন সংবিধান কার্যকর করা হয়। বাতিল করা হয় গণপরিষদ।

১৯৭৩
৭ মার্চ: নতুন সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩০০টির মধ্যে ২৯২টি আসনে বিজয়ী হয়।

৩ সেপ্টেম্বর: আওয়ামী লীগ সিপিবি এবং ন্যাপের সমন্বয়ে ত্রিদলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়।

১৯৭৪
২৩ সেপ্টেম্বর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান প্রথম বাঙালী নেতা হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দেন।

১৯৭৫
২৫ জানুয়ারি: দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংসদে চতুর্থ সংশোধণী বিল পাশ করেন। এই বিলের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়।

২৪ ফেব্রুয়ারি: রাষ্ট্রপতি এক ডিক্রির মাধ্যমে সমস্ত রাজনৈতিক দলের সম্মিলনে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ নামে একটি নতুন একক রাজনৈতিক দল গঠন করেন।

১৫ আগস্ট: স্বাধীনতা বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ষড়যন্ত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নৃশংসভাবে নিহত হন।

৩ নভেম্বর: ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়।

৭ নভেম্বর: বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী জিয়াউর রহমান অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা দখল করেন। শুরু হয় এক অন্ধকার সময়। সংবিধান স্থগিত করা হয়। স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনঃবাসন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়।

১৯৭৭
৩ ও ৪ এপ্রিল: ৭৫ পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে অন্ধকার যুগের সূচনা হয়। সাতাত্তরের ৩ ও ৪ এপ্রিল ঢাকার ইডেন হোটেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ, বাঙালী জাতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওই ক্রান্তিলগ্নে সাংগঠনিক কমিটির আহ্বায়িকার দায়িত্ব দেওয়া হয় সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিনকে।

১৯৭৮
৩ মার্চ-৫ মার্চ: ১৯৭৮ সালের ৩ মার্চ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত চলে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। সেখানে আবদুল মালেক উকিলকে সভাপতি ও আবদুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়।

১৯৭৯
১৮ ফেব্রুয়ারি: জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩৯টি আসন পায়। সামরিক শাসনের আওতায় এই নির্বাচন ছিলো আওয়ামী লীগের অস্তিত্বের পরীক্ষা।

১৯৮১
১৬ জানুয়ারি: আওয়ামী লীগ নেত্রী সাজেদা চৌধুরী দিল্লীতে শেখ হাসিনার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগের অবস্থা, দেশের গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সাজেদা চৌধুরী শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের হাল ধরার অনুরোধ করেন। তিনি জানান ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিকল্প নেই।

১৫ ফেব্রুয়ারি: ক্ষতবিক্ষত বহুধা বিভক্ত আওয়ামী লীগকে রক্ষায় দলের কাউন্সিলে সর্বসম্মতভাবে শেখ হাসিনাকে দলের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। এ সময় বিদেশি পত্র পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনাই তার প্রধান লক্ষ্য।

২৪ ফেব্রুয়ারি: আবদুল মালেক উকিল, জোহরা তাজউদ্দিন, বেগম সাজেদা চৌধুরী, ডা. এস.এ মালেকসহ শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ দিল্লীতে নব নির্বাচিত সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। আলোচনায় মে মাসে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

১৩ মে: আবদুস সামাদ আজাদ ও এম কোরবান আলী আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন চুড়ান্ত করতে দিল্লীতে আসেন।

১৭ মে: অবশেষে স্বৈরাচারের ভ্রুকুটি এবং সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা তার প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন।

৩০ মে: একদল সশস্ত্র সেনা বিদ্রোহীদের হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নিহত হন।

৪ জুন: অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রেখে ১৮০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঘোষণা দেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে অবিলম্বে নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার দাবি করেন।

১২ জুন: অবশেষে দীর্ঘ ছয় বছর পর জাতির পিতার কন্যার কাছে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি হস্তান্তর করা হয়। ছয় বছর পর শেখ হাসিনা রক্তাক্ত ৩২ নম্বরে ঢুকলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। ছোপ ছোপ রক্তের দাগ ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের স্মৃতি চিহ্নগুলো জাতির বিবেককে নাড়া দেয়।

২২ জুন: বিএনপি বিচারপতি সাত্তারকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে।

২৯ জুন: আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিচারপতি সাত্তারকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করা সংবিধান পরিপন্থী বলে এক বিবৃতি দেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবিধান বিশেষজ্ঞরা তার এই বিবৃতি সমর্থন করেন।

৮ জুলাই: বিএনপি তড়িঘড়ি করে সংবিধানের ৬ষ্ঠ সংশোধনী বিল পাশের মাধ্যমে বিচারপতি সাত্তারের মনোনয়নকে বৈধতা দেয়।

১৫ নভেম্বর: দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ড. কামাল হোসেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী ছিলেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। নজিরবিহীন কারচুপি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এতো কারচুপির পরও আওয়ামী লীগ প্রার্থী তিন কোটিরও বেশি ভোট পায়।

১৯৮২
২৪ মার্চ: সেনা প্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সামরিক আইন জারি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন।

১৪ ফেব্রুয়ারি: এরশাদের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক প্রতিবাদ মিছিল করলে সামরিক সরকার অস্ত্রের ভাষায় কথা বলে। মিছিলে গুলি বর্ষণ করা হয়। মারা যায় জয়নাল, জাফর, দিপালী, কাঞ্চনসহ অনেকে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান। অবিলম্বে তিনি এর বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান। একই সাথে শেখ হাসিনা অবিলম্বে সাংবিধানিক ধারা পুনঃপ্রবর্তনের দাবি করেন।

১৫ ফেব্রুয়ারি: এরশাদের সামরিক সরকার দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। গ্রেপ্তার করে সহস্রাধিক ছাত্রকে। ঐ রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, বেগম সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে চোখ বেঁধে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়।

১ মার্চ: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দেয়া হয়।

১৯৮৩
২৬ মার্চ: মহান স্বাধীনতা দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামের লক্ষ্যে নেতা কর্মীদের শপথ পাঠ করান। তিনি জীবন দিয়ে হলেও জনগনের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

১ এপ্রিল: দেশে ঘরোয়া রাজনীতি চালু হবার সাথে সাথেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাম ও প্রগতিশীল শক্তির সমন্বয়ে ১৫ দলীয় জোট গঠিত হয়। ১৫ দলীয় জোটের মূল লক্ষ্য ঘোষিত হয়, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।

১৪ নভেম্বর: প্রকাশ্যে রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার সাথে সাথে সর্বাগ্রে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ১৫ দলীয় ঐক্যজোট নেতা শেখ হাসিনা আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করেন।

২৭ নভেম্বর: সর্বাগ্রে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে শেখ হাসিনার আহ্বানে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচী পালিত হয়। হাজার হাজার মানুষ এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা নিজে ঐ কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দেন। এই কর্মসূচীর পরপরই এরশাদ রাতে সকল রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করেন। শেখ হাসিনাকে মহাখালীর বাসায় অন্তরীণ করা হয়।

১৪ ডিসেম্বর: গৃহবন্দীত্ব থেকে শেখ হাসিনা মুক্তি পান।

১৯৮৪
৭ জানুয়ারি: সামরিক সরকার পুনরায় ঘরোয়া রাজনীতি করার অনুমতি প্রদান করে। এরশাদ উপজেলা নির্বাচনের ঘোষণা দিলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোট উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে সর্বাগ্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করে।

২৮ ফেব্রুয়ারি: উপজেলা নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ছাত্রলীগের একটি মিছিলে সামরিক জান্তার পেটোয়া বাহিনী ট্রাক উঠিয়ে দেয়। মারা যায় সেলিম ও দেলোয়ার। শেখ হাসিনা এই ঘটনাকে ফ্যাসিষ্ট এবং বর্বরোচিত আখ্যা পরদিন হরতালের ডাক দেন।

৩ মার্চ: ১৫ দলীয় জোট নেতা এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি উপজেলা নির্বাচনে সকল প্রার্থীকে তাদের প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের আহবান জানান।

৪ মার্চ: শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে ৭০০ প্রার্থী তাদের প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করেন।

১৮ মার্চ: শেখ হাসিনা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একটি বিজয় অর্জন করেন। এরশাদ সরকার অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করে।

১৫ আগস্ট: জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের জনসভায় বোমাবাজির ঘটনা ঘটানো হয়। পরে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না। ভয় দেখিয়ে জনগনের আন্দোলন থেকে আমাকে সরিয়ে রাখা যাবে না। নিজের জীবন দিয়ে হলেও এদেশের মানুষের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবো।

২০ ডিসেম্বর: তীব্র আন্দোলনের মুখে এরশাদ সরকার আবার রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

১৯৮৬
২৬ এপ্রিল: এরশাদ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন।

২১ মার্চ: ১৫ দল ও ৭ দলের লিয়াজো কমিটির বৈঠকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু রাতে বিএনপি তাদের অবস্থান থেকে সরে এসে এরশাদকে সুযোগ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত ৭ মের নির্বাচনে ১৫ দলের ৮টি দল অংশ নিতে রাজি হয়।

৭ মে: ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাতে নির্বাচনী ফলাফলে আওয়ামী লীগ যখন এগিয়ে তখন আকস্মিকভাবে ফলাফল ঘোষণা বন্ধ করা হয়।

৮ মে: আওয়ামী লীগ সভাপতি এক বিবৃতিতে নির্বাচনে জনগন স্বৈরাচারকে প্রত্যাখান করেছে বলে অভিহিত করেন। তিনি অবিলম্বে নির্বাচনের সঠিক ফলাফল ঘোষণার দাবি জানান।

১৯ মে: দীর্ঘ ১২ দিন পর মিডিয়া কু এর মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে জাতীয় পার্টি ১৫৮ আসন পেয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি এই ফলাফলকে একটি প্রহসন বলে চিহ্নিত করে বলেন, সংসদে এবং রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

৪ সেপ্টেম্বর: এরশাদ ১৫ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঘোষণা দেন। শেখ হাসিনা ঐ নির্বাচনী তফসীল প্রত্যাখান করেন। তার সিদ্ধান্তের পথ ধরে ৭ দল ও ৫ দলও নির্বাচন বর্জনের ডাক দেয়।

১৯৮৭
১ জানুয়ারি: ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আওয়ামী লীগের তিন দিনব্যাপী দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শেখ হাসিনাকে সভাপতি এবং সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। অধিবেশনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সেনাবাহিনী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেকোন মুল্যে আমাদের জাতীয় সশস্ত্র বাহিনীর মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। তিনি সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করার দাবি করেন। কাউন্সিলের পর গণতান্ত্রিক আন্দোলন আরো বেগবান করা হয়।

৩১ জানুয়ারি: জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনা অবৈধ ক্ষমতা দখল এবং স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ করেন।

১০ নভেম্বর: তিন জোটের ডাকে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচী পালিত হয়। এ দিন যুবলীগ কর্মী নুর হোসেন গণতন্ত্র মুক্তিপাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক বুকে পিঠে লিখে মিছিলে বের হন। কিন্তু স্বৈরাচারের বুলেটে নূর হোসেন শহীদ হন। স্ফুলিঙ্গের মতো আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এভিন্যুতে একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, এখন আমাদের একটাই দাবি, এরশাদের পদত্যাগ।

১১ নভেম্বর: আবার গৃহবন্দী হন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তাকে মিরপুর রোডের একটি মিছিল থেকে গ্রেপ্তার করে মহাখালীতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন অব্যাহত থাকে।

৬ ডিসেম্বর: অব্যাহত আন্দোলনের মুখে এরশাদ জাতীয় সংসদ ভে

১০ ডিসেম্বর: অন্তরীন অবস্থা থেকে শেখ হাসিনা মুক্তি পান।

১৯৮৮
২৪ জানুয়ারি: এরশাদ বিরোধী তীব্র আন্দোলনের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম মহাসমাবেশে যান। উত্তাল জনস্রোত যেন রাজপথে নেমে আসে। শেখ হাসিনা যখন সমাবেশস্থলে যাচ্ছিলেন তখন মুসলিম হাইস্কুল মোড়ে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে পুলিশ বাধা দেয়। অতর্কিতে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। সেই মুহুর্তে শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে গুলির মুখ থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বাঁচাতে গিয়ে সেই গুলিতেই প্রাণ হারান যুবলীগ কর্মী আবুল হাশেম। এরপর শুরু হয় পুলিশী তাণ্ডব। আইনজীবীরা কোন রকমে শেখ হাসিনাকে আদালত ভবনে নিয়ে যান।

৩ মার্চ: প্রহসনের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকল প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করে।

১০ আগস্ট: আবার আওয়ামী লীগ সভাপতিকে হত্যা চেষ্টা করা হয়। ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাসায় ফ্রিডম পার্টির সশস্ত্র দূবৃত্তরা গ্রেনেড হামলা চালায়। শেখ হাসিনা তখন ঐ বাসাতেই ছিলেন।

১০ অক্টোবর: তিনজোটের সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচীতে ব্যাপক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পরে। ঐ দিনই শেখ হাসিনার আহ্বানে এবং উদ্যোগে গঠিত হয় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য। এরপর এরশাদ বিরেধী আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে।

১৯ নভেম্বর: আন্দোলন সংগ্রাম এবং গণতান্ত্রিক ধারায় করণীয় সম্পর্কে তিনজোট রূপরেখা ঘোষণা করে।

১৯৯০
২৭ নভেম্বর: সরকার সমর্থক সশস্ত্র ক্যাডারদের গুলিতে বিএমএ নেতা শামসুল আলম মিলন শহীদ হন। সারাদেশে শুরু হয় উত্তাল গণআন্দোলন। রাতে এরশাদ দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। কিন্তু জরুরী আইন আর কারফিউ উপেক্ষা করে রাজপথে বেরিয়ে আসে মানুষ। হরতাল আন্দোলনে দেশ অচল হয়ে যায়। এদিন দেশের সব সংবাদপত্র একযোগে ধর্মঘটে যায়।

৪ ডিসেম্বর: এরশাদ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।

৫ ডিসেম্বর: তিনজোট বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে মনোনীত করেন।

৬ ডিসেম্বর: স্বৈরাচারী এরশাদের পতন হয়। বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যাত্রা শুরু করে। শেখ হাসিনা নতুন সরকারকে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ঐ দিন জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষনে তিনি সকলকে দায়িত্বশীল এবং সহনশীল আচরণ করার পরামর্শ দেন।

১৯ ডিসেম্বর: নির্বাচন কমিশন ৯১ এর ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে।

১৯৯১
৬ ফেব্রুয়ারি: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার দলের পক্ষে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। নির্বাচনী ইশতেহারে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের অঙ্গীকার করা হয়।

২৭ ফেব্রুয়ারি: আপাত শান্তিপূর্ণভাবে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের শেষে ফলাফলে দেখা যায় বিএনপি ১৩৭, আওয়ামী লীগ ৮৫টি, জাতীয় পার্টি ৩৫টি, জামাত ১৮টি আসন পায়।

২৭ ফেব্রুয়ারি: , আওয়ামী লীগ সভাপতি সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কতিপয় অদৃশ্য শক্তির গোপন আঁতাতের মাধ্যমে নির্বাচনে অতি সুক্ষ এবং সুকৌশলে কারচুপি করা হয়েছে।

৩ মার্চ: আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নির্বাচনী ব্যর্থতার দায় কাঁধে তুলে নিয়ে সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক বেগম সাজেদা চৌধুরীর কাছে তিনি পদত্যাগপত্র পেশ করেন।

৪ মার্চ: আওয়ামী লীগের হাজার হাজার কর্মী বঙ্গবন্ধু ভবনে সমবেত হয়ে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের দাবি করেন। কর্মীরা সারাদিন ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থান নিয়ে থাকে।

৫ মার্চ: নেতা-কর্মীদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা তার পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেন।

৭ মার্চ: ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষ্যে আয়োজিত জনসভায় শেখ হাসিনা সংসদীয় পদ্ধতির সরকার পুনঃপ্রবর্তনের জন্য আবারও আহবান জানান।

১৪ এপ্রিল: আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশে সংসদীয় দলের উপনেতা আবদুস সামাদ আজাদ সংসদীয় পদ্ধতি চালু সংক্রান্ত একাদশ সংশোধনী বিল সংসদে জমা দেন।

২ জুলাই: আওয়ামী লীগ সভাপতির অব্যাহত দাবি এবং জনমত সৃষ্টির প্রেক্ষিতে বিএনপি জাতীয় সংসদে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধন বিল (দ্বাদশ সংশোধনী) উত্থাপন করেন। এছাড়াও বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের পূর্ব পদে ফিরে যাওয়া সংক্রান্ত একাদশ সংশোধনী বিলও উত্থাপিত হয়।

১৯৯৩
জানুয়ারি: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ভিয়েনার মানবাধিকার সংক্রান্ত বিশ্ব কংগ্রেসে যোগদান করেন। এখানে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার হবার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের উদ্যোগ দাবি করেন।

ফেব্রুয়ারি: শেখ হাসিনার গ্রন্থ স্বৈরতন্ত্রের জন্ম প্রকাশিত হয়। এই বই প্রকাশের পরই তিনি গণতন্ত্রের মানসকন্যা অভিধায় ভূষিত হন।

১৯৯৪
৩০ জানুয়ারি: দেশে প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ ভোটে ৪টি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ বিরামহীন প্রচারাভিযানে অংশ নেয়। এই নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন। বিএনপি পরদিন ঢাকায় বিজয় মিছিলে গুলি করে ৭ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।

২০ মার্চ: মাগুরা উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নজিরবিহীন কারচুপি এবং রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহারের ঘটনা ঘটে। গোটা দেশবাসী এই নির্বাচনে হতবাক হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বুঝতে পারেন যে বিএনপির অধীনে কোনোভাবেই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্যই তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার দাবি উত্থাপন করেন।

৩০ মার্চ: নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে মাগুরা ও মীরপুর উপনির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপির প্রতিবাদে এবং জাতীয় সংসদে তথ্যমন্ত্রীর আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ সংসদ থেকে ওয়াক আউট করে। এটাই ছিলো ঐ সংসদে আওয়ামী লীগের শেষ উপস্থিতি। ওয়াক আউটের পর এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকন্যা ঘোষণা করেন, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আবার রাজপথে আন্দোলনে যাবো

৫ এপ্রিল: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সারাদেশে ট্রেনমার্চ শুরু করেন। ঈশ্বরদীতে তার ট্রেনে বিএনপির সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। কিন্তু জনতার দাবিতে অবিচল শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন গুলি করে আমাকে জনগনের দাবি আদায়ের সংগ্রাম থেকে সরিয়ে দেয়া যাবে না।`

২৭ জুন: আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশ থেকে দলীয় সভাপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করেন।

১৪ আগস্ট: বাঙালী জাতির জীবনে আরেকটি শোক বিহ্বল গৌরবের দিন। এদিন জাতির পিতার দুই কন্যা বঙ্গবন্ধু ভবন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের জন্য হস্তান্তর করেন। পিতা-মাতা-ভাই হারানো জাতির পিতার দুই কন্যা প্রমাণ করেন যে, পার্থীব সম্পদের প্রতি তাদের কোন লোভ নেই। তারা শুধু দিতেই জানেন, নিতে নয়। এরপরই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রক্ষায় বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়।

৮ নভেম্বর: বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতার বদলে ক্ষমতাসীন বিএনপি একগুঁয়েমীর পথ বেছে নেয়। বিএনপি চেয়ারপারসন এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, কোনো অবস্থাতেই বিরোধীদলের দাবি মেনে নেয়া হবে না। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে অযৌক্তিক হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, একমাত্র পাগল ছাড়া পৃথিবীতে কেউই নিরপেক্ষ নয়। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার কাছে সকল বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য তাদের পদত্যাগ পত্র জমা দেন।

২৮ ডিসেম্বর: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় সংসদের সকল বিরোধীদল একযোগে পদত্যাগ করে। সারাদেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন।

১৯৯৫
২৪ নভেম্বর: প্রায় একবছর একদলীয়ভাবে সংসদ অধিবেশন চালানোর পর নির্ধারিত মেয়াদের আগেই ৫ম জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া হয়। বিএনপি তাদের অধীনেই নির্বাচনের ঘোষণা দেয়।

১৯৯৬
১৫ ফেব্রুয়ারি: বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ আসনে ভোটগ্রহণই সম্ভব হয়নি। তারপরও নির্বাচনী ফলাফলে বিএনপি ২৭৮টি আসন পায় বলে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগ সভাপতি এই নির্বাচনকে তামাশা বলে চিহ্নিত করে বিএনপি সরকারকে অবৈধ সরকার হিসেবে চিহ্নিত করে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনের ডাক দেন।

১ মার্চ: বঙ্গবন্ধুকন্যার ডাকে সারাদেশে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন।

৯ মার্চ: বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গড়ে ওঠে জনতার মঞ্চ । এই জনতার মঞ্চই হয়ে ওঠে অবৈধ বিএনপি সরকার পতনের মূল কেন্দ্র। এই মঞ্চেই জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন, জনগণ তার অধিকার না নিয়ে ঘরে ফিরে যাবো না।

১৯ মার্চ: জনতার আন্দোলনে উত্তাল গোটা দেশ। এর মধ্যেই ভুতুড়ে নির্বাচনে বিজয়ী এমপিদের নিয়ে বেগম জিয়া জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বসেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জনগনের ভোগান্তি না বাড়িয়ে অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করেন।

২১ মার্চ: জনগনের আন্দোলনে দিশেহারা বিএনপি অবশেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আকারে আনতে বাধ্য হয়।

২৫ মার্চ: তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান সম্বলিত বিলটি ভুতুড়ে সংসদে পাশ হয়। শেখ হাসিনা এটিকে জনগনের আংশিক বিজয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন।

৩০ মার্চ: অবশেষে গনদাবির কাছে নতি স্বীকার করে পদত্যাগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। জয় হয় জনতার। শেখ হাসিনা এই জয়কে ব্যালটের মাধ্যমে নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি উচ্চারণ করেন আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো। ঐ রাতেই সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে।

১২ জুন: নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে অবশেষে একটি সফল নির্বাচন সম্পন্ন করে। নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসন পায়। বিএনপি পায় ১১৬ টি আসন।

২৩ জুন: দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা শপথ নেয়।

১২ ডিসেম্বর: ভরতের সাথে দীর্ঘ অমীমাংসিত গঙ্গার পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক উদ্যোগে এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের পানি সমস্যার সমাধান হয়।

১৯৯৭
২৩ জুন: বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২২ ডিসেম্বর: পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হয়। এর ফলে পাহাড়ে অশান্তির চির অবসান হয়।

১৯৯৮
১ জুলাই: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে সারাদেশে বিধবা ভাতা ও বয়স্ক ভাতা চালু হয়।

১৯৯৮ সালের অক্টোবর: শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলায় শেখ হাসিনা অতুলনীয় সাফল্যের পরিচয় দেন। সারা বিশ্বে দুর্যোগ মোকাবেলায় এটি একটি মডেল হিসেবে স্বীকৃত হয়।

১৯৯৯
দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী একটি বাড়ি একটি খামার`, ভূমিহীন এবং উদ্বাস্তুদের জন্য আশ্রয়ন এবং শহরের বঞ্চিত মানুষদের গ্রামে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য শেখ হাসিনা ঘরে ফেরা কর্মসূচী গ্রহণ করেন।

২৪ সেপ্টেম্বর: পার্বত্য চট্টগ্রামে ২৫ বছরের সংঘাত নিরসন করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়।

২০০০
২১ ফেব্রুয়ারি: মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজরিত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত হয়।

৩ সেপ্টেম্বর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিল করে।

২০০০
১৩ জুলাই: বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম একটি সরকার মেয়াদপূর্ণ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের এক ঘন্টার মধ্যেই বিএনপি-জামাতের নীল নক্সা অনুযায়ী প্রশাসন ঢেলে সাজায়। শুরু হয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার-নির্যাতন।

২৭ জুলাই: আওয়ামী লীগ সভাপতি অভিযোগ করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পক্ষপাতপূর্ণ আচরন করছে। তিনি এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে।

১ অক্টোবর: অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপি এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিএনপি জামাত জোট সরকারকে বিজয়ী করা হয়। এরপর শুরু হয় নারকীয় তাণ্ডব বরিশাল, ভোলা, গোপালগঞ্জসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের উপর নেমে আসে বর্বর নির্যাতন।

২ অক্টোবর: আওয়ামী লীগ সভাপতি এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি অবিলম্বে হত্যা নির্যাতন ও লুটতরাজ বন্ধের দাবি জানান।

১০ অক্টোবর: জামাত-বিএনপি জোট সরকারের মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে। ঐ দিনই বিএনপির সন্ত্রাসীদের আক্রমনে সারাদেশে অর্ধশতাধিক নিরীহ মানুষ মারা যায়।

১৫ অক্টোবর: সারাদেশে নির্যাতিত, আহত মানুষদের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশে বঙ্গবন্ধু এভিন্যুতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আশ্রয় শিবির খোলা হয়। শেখ হাসিনা আহত এবং পঙ্গু নেতা কর্মীদের চিকিৎসা এবং আইনি সহায়তা দানের নির্দেশ দেন। ঐ দিন শেখ হাসিনা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আহত নেতাকর্মীদের দেখতে যান।

২০০২
সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের উপর নির্যাতন অব্যাহত থাকে। ধর্ষিতা হন ফাহিমা, পূর্ণিমাসহ অনেক নারী। সারাদেশে সন্ত্রাসীদের দাপট বেড়ে যায়। শিশু নওশীন মারা যায় বাবার কোলে। এর মধ্যেই সরকার তার ১০০ দিন পূর্ণ করে। ঐ দিন জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে শেখ হাসিনা- সন্ত্রাস, লুটপাট বন্ধের দাবি জানান।

২০০৩
দূর্নীতিতে তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। হাওয়া ভবনকে ঘিরে গড়ে উঠে বিকল্প সরকার। শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, দেশ চালাচ্ছে কে, হাওয়া ভবন নাকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়? সারাদেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

২০০৪
জানুয়ারি: বিএনপির সন্ত্রাসীদের গুলিতে আওয়ামী লীগ এমপি এবং গাজীপুরের জনপ্রিয় নেতা আহসান উলাহ মাষ্টারকে হত্যা করে।

২১ আগস্ট: বঙ্গবন্ধু এভিন্যুতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বিএনপির সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালায়। তাদের লক্ষ্য ছিলো আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং জাতির পিতার কন্যাকে হত্যা করা। কিন্তু অল্পের জন্য তিনি বেঁচে গেলেও আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৩ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান।

২০০৫
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে বিএনপি সংবিধান সংশোধন করে প্রধান বিচারপতির চাকরির বয়স বাড়ায়। জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ সভাপতি এর তীব্র বিরোধীতা করে বলেন, বিএনপি-জামাত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকেও দলীয়করণ করতে উদ্যোগী হয়েছে।

২০০৬
জানুয়ারি: অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্ভুল ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট পেপার এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারে দাবি উত্থাপন করেন।

আগস্ট: শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন, বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে বাংলাদেশের জনগন মেনে নেবে না। তিনি নির্বাচন কমিশনে সর্বজন গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিদের বসানোর দাবি করেন।

সেপ্টেম্বর: নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে শেখ হাসিনা আন্দোলনের ডাক দেন।

২৭ অক্টোবর: বিএনপি-জামাত জোট সরকারের ৫ বছরের দুঃশাসনের অবসান হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিএনপি-জামাত ছাড়া সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়। আন্দোলনের মুখে বিচারপতি হাসান দায়িত্ব গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর: সাংবিধানিক ধারা না মেনে বিএনপির নির্দেশে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের স্বার্থে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেন।

নভেম্বর: ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপির নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে থাকে। এরপরও গণতন্ত্রের স্বার্থে আওয়ামী লীগ সভাপতি সকল দলের সমন্বয়ে মহাজোট নিয়ে নির্বাচনে যাবার সিদ্ধান্ত নেন।

২০০৭
৩ জানুয়ারি: যে কোনভাবে নির্বাচনে বিএনপিকে জেতানোর একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। সারাদেশে শুরু হয় নির্বাচন প্রতিরোধ আন্দোলন।

১১ জানুয়ারি: আন্দোলনের মুখে ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার সরে যায়। আসে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

১২ জানুয়ারি: আওয়ামী লীগ সভাপতি নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনঃগঠনের মাধ্যমে যথাশীঘ্রই সম্ভব একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি করেন।

এপ্রিল: চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান শেখ হাসিনা। সেসময় তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হয়। গোটা দেশবাসী এবং সারা বিশ্ব এই ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়ে। শেখ হাসিনা সরকারের এই হীন চক্রান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আল জাজিরা টেলিভিশনে এক আবেগময় সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে আমার জন্ম ঐ মাটিতেই আমার মৃত্যু হবে। কোন ভয়ভীতি আমাকে দেশে ফেরা থেকে বিরত রাখতে পারবে না।

২৩ এপ্রিল: জনমত এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার দেশে ফেরার সরকারী আদেশ ও হুলিয়া প্রত্যাহার করা হয়।

৭ মে: শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। জরুরী আইনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ বিমান বন্দরে উপস্থিত হন।

১৪ জুন: শেখ হাসিনার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

১৬ জুলাই: ওয়ান ইলেভেনের পর সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক বিশেষ কারাগারে বন্দি হন। অবশ্য গ্রেপ্তারের আগে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এক চিঠি লেখেন। ঐ চিঠিটি ছিল এ রকম- প্রিয় দেশবাসী আমার সালাম নিবেন। আমাকে সরকার গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায় জানি না। আমি আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেই সারাজীবন সংগ্রাম করেছি। জীবনে কোনও অন্যায় করিনি। তার পরও মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। উপরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও আপনারা দেশবাসী আপনাদের উপর আমার ভরসা। আমার প্রিয় দেশবাসী, বাংলাদেশ আওয়ামী লগি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে আবেদন কখনও মনোবল হারাবেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। যে যেভাবে আছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথা নত করবেন না। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি আপনাদের সাথে আমৃত্যু থাকব। আমার ভাগ্যে যা-ই ঘটুক না কেন আপনারা বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। জয় জনগণের হবেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বো। দুঃখী মানুষের মুকে হাসি ফোটাবোই। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। শেখ হাসিনা।

২০০৮
১১ জুন: প্যারোলে কারাগার থেকে মুক্তি পান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

আগস্ট : তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবশেষে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে।

১৩ ডিসেম্বর: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহার দিন বদলের সনদ ঘোষণা করেন। এ সনদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের কথাও বলা হয়েছিল সেবারের ইশতেহারে।

২৯ ডিসেম্বর: জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার তিন চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়। আওয়ামী লীগের দখলে যায় ২৩০টি আসন। বিএনপি জয় পায় ৩০টি আসনে। আর বিএনপির দোসর জামাত পায় মাত্র ৩টি আসন।

২০০৯
৩ জানুয়ারি : আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে সংসদনেতা নির্বাচিত করা হয়।

৬ জানুয়ারি : শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শপথ গ্রহণ করে নতুন মন্ত্রিসভা।

২২ জানুয়ারি: ১৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হয় উপজেলা নির্বাচন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করার মাত্র ১৫ দিনের মাথায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা আড়াই শতাধিক আসনে বিজয়ী হয়।

২৫ জানুয়ারি: নবম সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। এই অধিবেশনের শুরুতেই অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ সর্বসম্মতিক্রমে স্পিকার নির্বাচিত হন।

২৯ জানুয়ারি: সংসদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে কণ্ঠভোটে প্রস্তাব পাস হয়। প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করার কথা বললেও প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবটির পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে বলে জানান। বিএনপি-জামায়াতের অনুপস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।

১১ ফেব্রুয়ারি: জিল্লুর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তিনি।

২১ জুলাই: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক পথ থেকে আবদুল জলিল পদত্যাগ করেন।

২৪ জুলাই: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৮তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই কাউন্সিলে সভাপতি হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। আর সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি।

২০০৯ সালের ৩০ জুলাই: আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে নতুনদের প্রাধান্য ছিল চোখে পড়ার মতো।

২০১০

২৪ জানুয়ারি: কেন্দীয় ব্যাংক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, চার বছরেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। তখন এদেশের মাথাপিছু আয় হবে ৯৭৬ মার্কিন ডলার।

২৮ জানুয়ারি: জাতির পিতার খুনিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মোট পাঁচজন খুনির ফাঁসি হয় সেদিন। এরা হলো- ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ ও একেএম মহিউদ্দিন।

২ ফেব্রুয়ারি: বাংলাদেশে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলো তার বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রিমকোর্টের আপীল বিভাগ। তবে এই রায়ে কিছু সংশোধনী এবং পর্যবেক্ষণ দেওয়ার কথাও বলা হয়।

২৫ মার্চ: ৩৯তম স্বাধীনতা বার্ষিকীর প্রাক্কালে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল ও তদন্ত সংস্থা চূড়ান্ত করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী, সরকার বিচারপতি মো. নিজামুল হককে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের এক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে।

১৭ জুলাই: দরিদ্র নারী রামিজা খাতুনকে তার স্বামীর কেনা জমি ফিরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। রামিজার প্রয়াত স্বামী ভ্যানচালক হাসমত আলী স্নেহবশত শেখ হাসিনার নামে জমিটি কিনেছিলেন।

২০ সেপ্টেম্বর: নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুমৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার জন্য সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাতিসংঘ পদক গ্রহণ করেন।

১১ নভেম্বর: নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখায় মার্কিন সাময়িকী গ্ল্যামার’ এর বিচারে বর্ষসেরা নারী নির্বাচিত হন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা।

২৬ জানুয়ারি: প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমনসের স্পিকার জন বারকাফ গ্লোবাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন।

২০১১

২৬ ফেব্রুয়ারি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের ডিভিশন অব ওশন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ল অব দ্য সি বিভাগে বঙ্গোপসাগরে ৪০০-৪৬০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সমুদ্রসীমার দাবি পেশ করেন।

১০ মে: আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সর্ম্পকিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয়জন বিচারপতির বেঞ্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের এই রায় দেয়।

৩০ জুন: জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২৯১-১ ভোটে পাস হয়। এই সংশোধনী দ্বারা সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয় এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতিও দেওয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়, জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ করা হয়। এই সংশোধনীর বিষয়টি উত্থাপন করেন তৎকালীন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ।

২০ আগস্ট: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৪১৫৬ কিলোমিটার সীমানার ওপর তৈরি করা সীমান্ত মানচিত্রে স্বাক্ষর করেন দুই দেশের রাষ্ট্রদূত। উপমহাদেশের বিভক্তির ৬৪ বছর পেরোনোর পর প্রথমবারের মতো মানচিত্রে স্বাক্ষর করেন দুই দেশের রাষ্ট্রদূত।

২৪ সেপ্টেম্বর: জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ক্ষমতায়ন ও শান্তি-কেন্দ্রিক উন্নয়ন মডেল শীর্ষক ৬ দফা শান্তির মডেল উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, এই মডেলের মূল বিষয় হচ্ছে সকল মানুষকে সমান চোখে দেখা এবং মানবিক সামর্থ্য উন্নয়নের কাজে লাগানো। একমাত্র শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এসব বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

২০১২
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী জাতীয়করণ করেছিলেন। ৪০ বছর পর বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত ১ লক্ষ ৩ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষকের চাকুরী জাতীয়করণ করেন।

৫০৩টি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টারনেট মডেম সরবরাহ করা হয়।

সরকারের কৃষি-বান্ধব কার্যক্রমের ফলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়।

প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৫০ শতাংশ প্রাণিসম্পদ থেকে যোগান।

দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু।

বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা, ইউরোজোনে মারাত্মক অর্থ সংকট, উন্নত বিশ্বের বাজারগুলোতে চাহিদা হ্রাসসহ নানামুখী নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে গড় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ অর্জন।

১২ জানুয়ারি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করে ত্রিপুরা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি। শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনা, নেতৃত্বের দূরদৃষ্টি এবং শান্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারের স্বীকৃতিস্বরূপ এই ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

১৭ ডিসেম্বর: জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সভায় ১৯৩টি সদস্যরাষ্ট্রের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া জনগণের ক্ষমতায়ন এবং শান্তির সংস্কৃতি প্রস্তাব পাস হয়।

২০১৩
১৬ জুন: দারিদ্র্য ও অপুষ্টি দূর করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করায় বাংলাদেশকে ডিপ্লোমা অ্যাওয়ার্ড; পদকে ভূষিত করে জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা।

২৩ সেপ্টেম্বর: দেশে খাদ্যনিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ সাউথ কো-অপারেশনের সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড-২০১৩ পুরস্কার লাভ করেন প্রধানমন্ত্রী।

৬ ডিসেম্বর: শেখ হাসিনার স্বপ্নপ্রসূত একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত তথ্যপ্রযুক্তি মেলায় সাউথ এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিক ম্যানহাটন অ্যাওয়ার্ড ২০১৩ পদকে ভূষিত হয়।

৪ সেপ্টেম্বর: মাথাপিছু আয় বেড়ে ১০৪৪ ডলারে পৌছানোর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সামাজিক নিরাপত্তাখাতসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে ধারাবাহিকভাবে ভালো করার ফলেই মাথাপিছু আয়ের উন্নতি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

২০১৪

৫ জানুয়ারি: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩৪ এবং জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসনে জয় পায়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে হানাহানির পথ বেছে নেয়।

২০১২ সালের ১৪ মার্চ মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির পর ২০১৪ সালের ৭ জুলাই নিষ্পত্তি হয় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ। এর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে চলা সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের অবসান ঘটে। সমুদ্রে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাংলাদেশের অধিকার ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা পায়।

২১ নভেম্বর: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার, সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু, সর্বসাধারণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া, সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বিশ্বের দরবারে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপনের জন্য তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।

৮ সেপ্টেম্বর: নারী শিক্ষায় অনবদ্য অবদানের জন্য ২০১৪ সালে ইউনেস্কো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে শান্তি বৃক্ষ স্মারক তুলে দেয়।

২০১৫

১ আগস্ট ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় চুক্তি কার্যকর হয়। এর মাধ্যমে ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের বন্দি জীবনের অবসান ঘটে।

১৪ সেপ্টেম্বর: জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মান চ্যাম্পিয়নস অফ দ্য আর্থ পুরস্কারে ভূষিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন, জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের মাধ্যমে অর্থ বিনিয়োগসহ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকারের সামগ্রিক পদক্ষেপ বিবেচনা করে পলিসি লিডারশিপ শাখায় তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

১২ ডিসেম্বর: বহুল প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৬

২১ সেপ্টেম্বর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এজেন্ট অফ চেঞ্জ পুরস্কারে ভূষিত করে গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য ও সাহসী ভূমিকা পালনের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্লানেট ৫০-৫০ পুরস্কারে ভূষিত করে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউএন ওম্যান।

২২-২৩ অক্টোবর: আওয়ামী লীগের ২০ তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের সভাপতি পুণনির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। আর সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের।

২০১৭

আগস্ট: মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। কয়েক মাসের ব্যবধানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়ের পাশাপাশি ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তার এই মানবিকতার জন্য তাকে মাদার অব হিউম্যানিটি হিসেবে স্বীকৃতি পান বিশ্বব্যাপী।

২০১৮

১৭ এপ্রিল: অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়। নারীর ক্ষমতায়ন এবং জাতীয় উন্নয়নে নারীদের মূল ধারায় আনার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীকে।

১১ মে: দিবাগত রাত ২ টা ১৪ মিনিটে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয় বহুল প্রতিক্ষীত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইন-১। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেস এক্সের ফ্যালকন রকেটে বঙ্গবন্ধু সাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়। এর মধ্যে দিয়ে বিশ্বের স্যাটেলাইটের মালিক দেশের এলিট ক্লাবে প্রবেশ করে বাংলাদেশ।

২৬ মে: আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডি-লিট (ডক্টর অব লিটারেচর) প্রদান করে পশ্চিমবঙ্গের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে এবং গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রাখায় শেখ হাসিনাকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়।

২৯ অক্টোবর: দশম জাতীয় সংসদের সমাপ্তি ঘটে এদিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিরোধীদলের সংসদ বর্জনের সংস্কৃতির অবসান ঘটে দশম সংসদে। শেষ অধিবেশনে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ উপস্থিত থেকে নতুন রেকর্ড গড়েন।

১ নভেম্বর: ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রথম সংলাপে বসে সরকার। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের ২৩ নেতার সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২০ নেতা। ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন ড. কামাল হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় থাকার কথা থাকলে শেষ পর্যন্ত তিনি আর যোগ দেননি। সেসময় গণভবনে তিন ঘণ্টা দীর্ঘ আলোচনা হয় দুই পক্ষের মধ্যে।

১৪ নভেম্বর: য়াওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গী হওয়ার কথা জানান বিকল্পধারার সভাপতি মাহি বি চৌধুরী।

১৮ ডিসেম্বর: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ শীর্ষক এই ইশতেহারে ২১ দফা অঙ্গীকার করা হয়। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে উন্নয়ন জংশনে মিলিত হওয়া, ২০৪১ সালে সোনার বাংলা, ২০৭১ সালে স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানো এবং ২১০০ সালে নিরাপদ বদ্বীপ পরিকল্পনাকে এ ইশতেহারে মূল লক্ষ্য ধরা হয়।

৩০ ডিসেম্বর: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ২৫৯, জাতীয় পার্টি ২০, বিএনপি ৬টি আসনে জয়লাভ করে।

২০১৯

৩০ জানুয়ারি: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাতীয় সংসদের বিধিমালা অনুযায়ী প্রথমে নিজে শপথ গ্রহণ করেন এবং শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন। পরে তিনি জাতীয় সংসদের শপথগ্রহণ কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান। এরপর পৃথক অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বিকল্পধারা বাংলাদেশ, তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ শপথ গ্রহণ করেন।

৭ জানুয়ারি: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৪৭ সদস্যবিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। ৩১ জন নতুন সদস্য নিয়ে চমক সৃষ্টি করে এই মন্ত্রিসভা। এবারই প্রথম শপথ গ্রহণের আগেই মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী হিসেবে যারা শপথ নেবেন তাদের নাম আগেই ঘোষণা করে দেওয়া হয়।

১৫ ফেব্রুয়ারি: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে ১০২ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি এবং ৬১ সদস্যের একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে সরকার। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনে প্রয়োজনীয় নীতি পরিকল্পনা ও কর্মসূচি অনুমোদনের পাশাপাশি বাস্তবায়ন কমিটিকে পরামর্শ ও দিক নির্দেশনার ভার দেওয়া হয় জাতীয় কমিটিকে। আর বাস্তবায়ন কমিটিকে দেওয়া হয় সার্বিক পরিকল্পনা, বাজেট প্রণয়ন এবং জাতীয় কমিটির অনুমোদন নিয়ে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব।

৮ জুন: ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে তৃণমূলের প্রবীণ নেতা, যারা দলের দুঃসময়ে অবদান রেখেছেন তাদের সংবর্ধনা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। তৃণমূলের ত্যাগী পরীক্ষিতদের মূল্যায়ণের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এই সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।