নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্যাংক উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন আপাতত অধরাই থাকছে বিশ্বসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের।
প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালক হতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বৃহস্পতিবার অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা পিপলস ব্যাংকের অনুকূলে আগে ইস্যু করা লেটার অব ইনটেন্টের (এলওআই) শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের আবেদন বাতিল করে দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকটি বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করতে চাইলে তাদের আবার নতুন করে অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির সভায় সভাপতিত্ব করেন।
প্রস্তাবিত ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তার মা শিরিন আক্তার।
সভার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত ব্যাংকটির এলওআইয়ের মেয়াদ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল। নির্ধারিত সময়ে যেহেতু তারা শর্ত পূরণ করতে পারেননি তাই তাদের সময় বাড়ানোর আবেদন বাতিল করা হয়েছে।’
তাহলে কি এই ব্যাংকটি আর কার্যক্রম শুরু করতে পারবে না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই নামেই যে ব্যাংক হবে না, বিষয়টি তেমন নয়। তবে তাদের আবেদনের সময় আর বাড়ানো হয়নি। সাকিব আল হাসানসহ যে ২২/২৩ জন যুক্ত হয়েছেন তাদের আবার নতুন করে আবেদন করতে হবে।’
আগের ১২ জন উদ্যোক্তা পরিচালকের মধ্যে এখন শুধু প্রস্তাবিত চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ও তার স্ত্রী আছেন। নতুন করে আরও ২১ জন পরিচালকসহ মোট ২৩ জন আবেদন করেছেন। এর মধ্যে সাকিব আল হাসানও আছেন।
তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকিং ব্যবসার লাইসেন্স নিতে চেষ্টা করছে। তবে এলওআইর শর্ত পূরণ না হওয়ায় এ লাইসেন্স পাচ্ছিল না প্রতিষ্ঠানটি। ফলে কয়েক দফা এলওআইর মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ এলওআইর মেয়াদ শেষ হয় গত ৩১ ডিসেম্বর।
তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের চুড়ান্ত লাইসেন্সও পাচ্ছে না ব্যাংকটি।
দেশের সব ব্যাংকের প্রতি পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে নির্দেশনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। সে হিসেবে বর্তমানে দেশে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে হলে সমপরিমাণ অর্থই মূলধন হিসেবে জমা রাখতে হবে। উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হতে হলে প্রয়োজন হয় সর্বনিম্ন ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের। সে হিসেবে পিপলস ব্যাংকের প্রতিটি পরিচালক পদের জন্য সর্বনিম্ন ১০ কোটি টাকা মূলধন জোগান দেয়ার কথা ছিল সাকিব আল হাসানের। তবে ব্যাংকটির মালিকানায় আসতে তিনি ২৫ কোটি টাকারও বেশি মূলধন জোগান দিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে তথ্য প্রকাশিত হয়।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পরিচালনা পর্ষদের সভায় বেঙ্গল কমার্শিয়াল, সিটিজেনস ও পিপলস নামে নতুন তিনটি ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে নতুন ব্যাংকের জন্য জুড়ে দেয়া হয় ৫০০ কোটি টাকা মূলধনের শর্ত, যা আগে ছিল ৪০০ কোটি।
এর মধ্যে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক গত বছরের মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে। আর চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়ার পর কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে সিটিজেনস ব্যাংক।
পিপলস ব্যাংক উদ্যোক্তাদের কয়েকজনের অর্থের উৎসে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটিকে দেয়া এলওআই স্থগিত করা হয়। এরপর বিতর্কিত উদ্যোক্তাদের বাদ দিলে পিপলস ব্যাংকের এলওআইয়ের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মূলধনের অর্থ জমা দিতে পারেনি ব্যাংকটি।