সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রের ভূমিকা সুস্পষ্ট নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিকসহ নানা ক্ষেত্রে সুরক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রের ভূমিকা সুস্পষ্ট নয়। এরকম একটা সন্দেহ আছে এবং তা অমূলক নয়। তবে কিছুটা হলেও একটু পরিবর্তন হয়েছে।

আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুরক্ষার ব্যাপারে; শুধু যে সাংবাদিকদের সুরক্ষা তা না। সর্বক্ষেত্রে সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অবস্থানগত সুরক্ষা নিশ্চিতের ব্যাপারে তিনি সিরিয়াস।

শনিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে কর্মরত ব্রডকাস্ট জার্নালিস্টদের অংশগ্রহণে বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেপি) চতুর্থ সম্প্রচার সম্মেলনে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল সাংবাদিকতার নীতি – সুরক্ষা-স্বাধীনতা। এদিন সকালে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সম্মেলনের মূল আনুষ্ঠানিকতা। এরপর সূচনা বক্তব্য দেন বিজেমির চতুর্থ সম্মেলন কমিটির আহ্বায়ক মানস ঘোষ। উদ্বোধনী পর্ব পরিচালনা করেন সম্মেলন কমিটির সদস্য সচিব ও সম্মেলনের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় সাংবাদিকতার নীতি-প্যানেল আলোচনা।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আলোচক হিসেবে ছিলেন বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক, সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ, ট্রাস্টি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ফাহিম আমেন, জ্যেষ্ঠ ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট জহিরুল আলম, তালাত মামুন, প্রণব সাহা, জাহিদ নেওয়াজ খানসহ সম্প্রচার মাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা। পর্ব দুটি পরিচালনা করেন বিজেসির ট্রাস্টি নূর সাফা জুলহাজ ও মুন্নী সাহা।

সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেন, ২০০৬ সালে যখন আইসিটি আইন হয় তখন ৫৭ ধারা যুক্ত করা হয়েছিল। তখন অনেক প্রশ্ন ছিল, আপত্তি ছিল। আপত্তি থাকার পরেও সাইবার স্পেস এর নিয়ন্ত্রণের জায়গা থেকে সুরক্ষার জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করা হয়। এই আইনের উদ্দেশ্য এটা ছিল না যে সাংবাদিক, সংবাদপত্র এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এটা নিঃসন্দেহে ইচ্ছা ছিল না।

বাংলাদেশের সংবিধানে বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদ পত্রের স্বাধীনতার কথা মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাই আইন অবশ্যই মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী হতে পারে না। আর পরিপন্থি হলে সেই আইন বলবৎ হতে পারবে না।

তিনি বলেন, এই সরকার এটাও স্বীকার করেছে যে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনকে মিস ইউজ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই আইনে মোট ৭ হাজার ১টা মামলা হয়েছে এবং এখন আছে ৫ হাজার ৯৯৫টি। এই মামলাগুলো ৯৫ ভাগই দেশের নাগরিকরাই করেছে। তবে রাজনীতিবীদরাই এর সাথে বেশি জড়িত রয়েছেন।

এসময় সম্প্রতি সাইবার সিকিউরিটি এ্যাক্টের ৪২ ধারা নিয়ে আনিসুল হক বলেন, এই ধারার একটি আইনি প্রয়োজন আছে। পুলিশের কাজ হচ্ছে কেথাও অপরাধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সেটা বন্ধ করা এবং কোনো অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পর আসল অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা এবং বিচারে সোপর্দ করা। এমন এমন জায়গা আছে তাদের (পুলিশ) জরুরি ক্ষমতা থাকা দরকার। কিন্তু আমরা যদি এক্ষেত্রে তাদেরকে বেঁধে দেই তাহলে কিন্তু অপরাধীকে দমানো যাবে না।

প্রসঙ্গত, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার ‘বিজেসি’ সম্প্রচার সাংবাদিকদের সুস্থতা, দক্ষতা এবং গুণমান উন্নত করতে ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে। প্রথমবারের মতো, ১১ হাজারের বেশি সাংবাদিক বিজেসিতে যোগ দিন। বর্তমানে বিজেসির সদস্য সংখ্যা ১৭০০ এরও বেশি। ধাপে ধাপে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিজেসি আজ সাংবাদিকদের নির্ভরতার জায়গা এবং বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। বিজেসি করোনা মহামারী সহ যেকোনো দুর্যোগের সময় সদস্যদের সহায়তা করে। সেবার মান উন্নয়নে ট্রাস্টিরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।