সন্দেহজনক আচরণে কামাল-ফখরুল ক্ষমতাসীন দলের এজেন্ট বলে অভিযোগ !

এই আমার দেশ প্রতিবেদন:

রাজনীতিতে প্রশ্নবিদ্ধ ও আওয়ামী আদর্শের রাজনেতা হিসেবে ড. কামাল হোসেনের পরিচয়। আর বামপন্থি আদর্শ থেকে হঠাৎ জাতীয়তাবাদী চরিত্র গ্রহণ করে বিএনপির মহাসচিব হয়ে গেলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহজনক আচরণে কামাল-ফখরুল ক্ষমতাসীন দলের এজেন্ট বলে দলে-জোটের পক্ষ থেকে নানাভাবে অভিযোগ আসে।

গত মঙ্গলবার সংসদে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও বলেছেন, নির্বাচনের আগে ও ঐক্য গঠনের পর থেকে ড. কামাল ‘আওয়ামী লীগের পক্ষে’ কাজ করেছেন। নাসিম আরও বলেন, নির্বাচনে কামাল হোসেন সমস্ত মাঠ খালি করে দিলেন। আমরা ফাঁকা মাঠে গোল দিলাম।

এই হচ্ছে ভাড়াটিয়া নেতার উপহার। ওরা ভাড়া করে ওদের জন্য, কাজ করল আমাদের জন্য। এভাবেই বিএনপি শেখ হাসিনার কৌশলে কাছে হেরে গেছে। আমাদের কাছে কৌশলে আপনারা (বিএনপি) বার বার হেরে গেছেন। অন্যদিকে দলের কয়েকটি প্রোগ্রামে ফখরুলকে একহাত নিয়ে প্রকাশ্যে জবাব চেয়েছেন খালেদাপন্থিদের অনেকে। কৌশলে পার দেড় বছর! আর কতদিন পর রাজনৈতিক পদক্ষেপ আসবে…।

এদিকে দীর্ঘ দেড় বছরেও খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়ায় বিএনপির দুর্বলতা রয়েছে দলের নানা ফোরাম থেকে এমন অভিযোগ উঠেছে। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র আমার সংবাদকে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আপাতত ধীরগতিতে চলবে বিএনপি। জোরালো কোনো কর্মসূচিতেও যাবে না। আর বিএনপির চলমান আচরণে খালেদা জিয়াও বেশ ক্ষুব্ধ।

ঈদুল ফিতরের ঈদের আগ থেকে কেউ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতেও চেষ্টা করেননি। করেননি আবেদনও! দলের প্রধান দায়িত্বশীল কর্তা মির্জা ফখরুলের ভাষ্য— আবেদন করে কোনো লাভ নেই। সরকার বিএনপি নেতাদের খালেদা জিয়ার মুখোমুখি হতে দেবে না। যদিও এ নিয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে অন্য কথা।

দলের শীর্ষ নেতারা আতঙ্কে খালেদা জিয়ার মুখোমুখি হচ্ছেন না। দলের শীর্ষ ব্যক্তিরা খালেদার মুখোমুখি হলেই অনেক জবাব দিতে হবে। আর খালেদা শীর্ষ নেতাদের ওপর রাগ প্রকাশ করলে এটি গোপন থাকবে না, গণমাধ্যমে অবশ্যই প্রকাশ পেয়ে যাবে। তাই এই শঙ্কা থেকে কেউ অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দেখতেও যাচ্ছেন না।

এছাড়াও খালেদার দলের বর্তমানে বেহাল দশা। খালেদার অনুমতি ছাড়াই পাঁচ-ছয়জন সংসদে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলকে বৈধতা দিলো। উপজেলা নির্বাচন বয়কট করে ফের আরেকটি আসনের লোভে খালেদার আসনে প্রার্থী ঘোষণা। স্থায়ী কমিটির মধ্যে বাকবিতণ্ডা-ক্ষোভ। ২০ দল ও দলীয় নেতারাও অসন্তুষ্টিতে।

ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণে চরম অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে দলটি। দীর্ঘ দেড় বছর খালেদা জিয়া কারাবন্দি হয়ে সাজাভোগে অসুস্থ হয়ে পড়লেও টনক নড়েনি দলটির হাইকমান্ডের।

গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আশার কথা শোনান মহাসচিব। অন্যদিকে পল্টনে স্বেচ্ছায় গৃহবাস করা রুহুল কবির রিজভীকে দেখা যায় কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে ঝটিকা মিছিল করতে।

এমন পরিস্থিতিতে খালেদাপন্থিদের অনেকে মনে করছেন রাজনীতি থেকে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে স্বয়ং বিএনপির ভেতরেই ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ড. কামালকে বিএনপির ঘরে এনে শুধু ঐক্যর স্লোগানেই সময় পার হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতে কামাল-ফখরুলের ঐক্যকে ভুল আখ্যা দিচ্ছে স্বয়ং জিয়া পরিবার। ঐক্যর নেতৃত্ব দেয়া ড. কামাল আর খালেদার অনুপস্থিতিতে বিএনপির নেতৃত্বে দেয়া মির্জা ফখরুলকে চ্যালেঞ্জ করে শুধুমাত্র খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে মাঠে নামছে বড় একটি অংশ।

খালেদার অনুসারীরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এই প্ল্যাটফর্মকে সাহায্য করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। অনেকে জোট ছেড়েও খালেদার মুক্তির দলে অংশগ্রহণ করবেন। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।

কর্নেল অলির রাজনীতি শুরু জিয়া পরিবার থেকে। মহান মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা দিয়ে তিনি এই পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এ পরিবারটির দুঃসময়ে পাশে থাকার জন্য এবং জাতীয়তাবাদের আদর্শের রাজনীতিকে আরও সক্রিয় করতে তিনি বিএনপিতে ফিরতে চান।

এই দলের পরিচয় নিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করতে চান বলেও কয়েকজন নেতা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের কাছে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। বিএনপিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পর জ্যেষ্ঠতার দিকে কর্নেল অলি রয়েছেন।

খালেদার মুক্তিতে যদি কর্নেল অলি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন তাহলে শেষ সময়ে অলির প্রতি খালেদার নজর থাকবে বলেও অনেকে মনে করছেন। বিপাকে পড়বেন ফখরুল অনুসারীরাও। তৃণমূলকে এক মঞ্চে এনে বিএনপির হাল ধরারও টার্গেট অলির।

খালেদার মুক্তির ইস্যুতে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে নতুন জোটের ঘোষণা দেবেন তিনি। তার নেতৃত্বাধীন জোটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপাসহ আরও ৪-৫টি দল অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

এর আগে গত ১৪ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, বর্তমানে খালেদা জিয়ার পক্ষে জেলে থেকে আমাদের নির্দেশ নেয়া সম্ভব নয়। তারেক রহমানের পক্ষে লন্ডন থেকে সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকা সম্ভব নয়।

তাই দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদেরই সেই দায়িত্ব নিতে হবে এবং আমি সেই দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রস্তুত। বসে থাকলে চলবে না, এগিয়ে যেতে হবে। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। বিএনপির নেতাদের অনুরোধ করব- হয় আপনারা নেতৃত্ব দেন, নাহলে আমাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করুন। আজ সংবাদ সম্মেলনে জোটের ঘোষণা দিয়ে খালেদার মুক্তিতে একটা দফা পেশ করবেন বলেও জানা গেছে।

অলি আহমদ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ২০ দলে আছি, থাকবো। কিন্তু বিএনপিও তো ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে আলাদাভাবে ঐক্যফ্রন্ট করেছে। সুতরাং আমরাও সেরকম কিছু করতে পারি। এখানে দোষের তো কিছু দেখছি না। আমি সবাইকে বলেছি, যে যেদিকে পারো, করো। লক্ষ্য একটাই- গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বেগম জিয়ার মুক্তি। বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আলাদা জোট প্রসঙ্গে কর্নেল অলি বলেন, দেখা যাক।

আমি তো বৃহস্পতিবার (আজ) সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ কয়েকজনকে বলেছি, সাংবাদিকরাও আসুন।

দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বেগম জিয়ার মুক্তি ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে আমরা সরকারের কাছে কতগুলো দফা তুলে ধরবো বলেও জানান তিনি। জামায়াতকে সঙ্গে রাখার প্রসঙ্গে অলি বলেন, ১৯৭১ সালের জামায়াত আর ২০১৯ সালের জামায়াত এক না।

যাদের বিরুদ্ধে জাতির, আওয়ামী লীগের কিংবা সরকারের অভিযোগ তাদের কারো ফাঁসি হয়েছে, কেউ জেলে, কেউ পলাতক। কিন্তু যাদের জন্ম ১৯৭১ কিংবা ১৯৬০ সালের পরে তাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের কোনো সম্পর্ক নেই।