শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল

নিজস্ব প্রতিবেদক : পৌষের শীত গত এক সপ্তাহ ধরে সারাদেশেই জেঁকে বসেছে । দেশের উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চলে বইছে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা বাতাস । দেশের বিভিন্ন জেলায় বিস্তৃত হচ্ছে শীতের দাপট। কুয়াশা না থাকলেও সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত কনকনে শীতে কাবু হয়ে পড়েছে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামীণ জনজীবন। রংপুর, রাজশাহী এবং খুলনা বিভাগের অন্তত ২১ টি জেলায় বরফ ঝরা শীত অনুভূত হচ্ছে।

গতকাল হিমালয়ের কোলঘেঁষা জনপদ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুর এবং রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। ২১ জেলায় তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। চুয়াডাঙ্গায় গত আট দিন হিমেল হওয়ার সঙ্গে তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চলে মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্য প্রবাহ চলছে। আগামী বুধবার পর্যন্ত এটা অব্যাহত থাকতে পারে। এসময় দেশের বেশির ভাগ এলাকায় থাকবে প্রচণ্ড শীত। আবহাওয়াবিদ ড.আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এখন ঠাণ্ডার অনুভূতি বাড়ছে। ভোর পর্যন্ত ঠাণ্ডা বাতাস থাকায় শীত থাকছে। সকাল থেকে রোদ কিছুটা উষ্ণতা ছড়াচ্ছে। বিকেলে আবার শীতার্ত বাতাস বইছে।

কৃত্রিম আবহাওয়া ভূ-উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা হাঁড় কাপানো ঠাণ্ডা বাতাস ক্রমশ বিস্তার লাভ করছে। খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। এটা অব্যাহত থাকতে পারে আগামী বুধবার পর্যন্ত। এই শৈত্যপ্রবাহ প্রতিদিন দেশের পূর্বদিকে অগ্রসর হচ্ছে।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আবারও রেকর্ড হয়েছে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গতকাল রবিবার সকাল ৯টায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। সর্বনিম্ন এ তাপমাত্রায় শীতের কাপুনীতে জর্জরিত উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ার সর্বস্তরের মানুষ। নিম্নআয়ের মানুষগুলো শীত নিবারণ করছে খড়কুটো জ্বালিয়ে। জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই নিম্নআয়ের বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষরা কাজে যাচ্ছে। শীতের কারণে বাড়তে শুরু করে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি।

চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। কয়েকদিন ধরে কনকনে ঠাণ্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলার জনজীবন। গতকাল সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গতকাল ঈশ্বরদীতে মৌসুমের সর্বনিম্ন ১১ ডিগ্রী তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে শীতের প্রকোপে কাহিল হয়ে পড়েছে জনজীবন। আবহাওয়া অফিসের নাজমুল হক রঞ্জন বলেন, হিমালয়ের বয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাসে তীব্র শীতের মুখে পড়েছেন এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষেরা।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে ঘন কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুস্থ ও শ্রমজীবী মানুষের জবুথবু অবস্থা। এছাড়া শীতজনিত কারণে সর্দি-কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এখানকার মানুষ। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি।