শীতকালীন পিঠার ভাসমান দোকানে পিঠা প্রেমিদের ভিড়।

মাহফুজ রাজা,কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:

ভাপা পিঠারে.. তোরে খাইতে গিয়া আমার মুখটা জ্বলে গেছেরে…

শিমুল -পারুল সিনেমার গানের এ কথা গুলি বারবার মনে পড়ে পিঠার ভাসমান দোকানের সামনে গেলে।প্রকৃতপক্ষে বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতিতে ভাতের পরে এককভাবে যে খাবারটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চর্চা হয় সেটি পিঠা। আখ্যান কাব্যে, গানে, লোকগল্পে, ছড়ায়, কবিতায়—কোথায় নেই পিঠা?

পিঠা নিয়ে এত সব গল্পগাছা যে দেশের মানুষের জীবনে ভেসে বেড়ায় জনপদ থেকে জনপদে, এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মে, সে দেশের মানুষ গণ্ডা গুনে থালা থালা পিঠা খাবে, তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে!

হেমন্তের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া চলছে। ভোরের আলোয় হালকা কুয়াশার ছোঁয়া শীতের বার্তা দিচ্ছে। শীতের আয়োজন হিসেবে পিঠার দোকানে ছেয়ে গেছে কিশোরগঞ্জের পাড়া-মহল্লা, অলি-গলি ও বিভিন্ন মোড়। বসেছে অস্থায়ী পিঠার দোকান। এসব দোকানে মাটির চুলায় কিংবা গ্যাস বা কেরোসিনের চুলায় বানানো হচ্ছে চিতই-ভাপা। সঙ্গে রয়েছে হরেক পদের মুখরোচক ভর্তা।

কুয়াশা মোড়ানো শীতের হিমেল হাওয়ায় ধোঁয়া উঠা ভাপা পিঠার স্বাদ না নিলে যেন তৃপ্তি মেটেনা অনেকের। শীত মৌসুমে গ্রামীণ বধূরা রকমারী পিঠা তৈরি করেন। শীতের পিঠার মধ্যে ভাপা পিঠা একটি অন্যতম পিঠা। ভাপা পিঠা আবার হরেক রকম পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। কখনো মিষ্টি ভাপা, কখনো ঝাল ভাপা। শীত এলেই যেন হরেক রকম সুস্বাদু পিঠার বাহারি আয়োজন।

শীতের আগমনি বার্তা পেয়েই শহর ও গ্রামীণ হাটবাজারে নানা রকম পিঠা বিক্রি হচ্ছে দেদারসে, বিশেষ করে ভাপা পিঠা ও চিতই পিঠা। শহরের ফুটপাতে শীতের পিঠার ব্যবসা জমে উঠেছে। চুলার অল্প আঁচের ধোঁয়া উড়ছে। গরম গরম ভাপা, চিতই নামছে। ক্রেতারা এসে সারিবদ্ধ হয়ে পিঠা কিনছেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা সদর ও কটিয়াদী উপজেলা, হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া, বাজিতপুর সহ বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট পিঠার দোকান সাজিয়ে বসছে নারী-পুরুষ বিক্রেতারা। অনেকেই এই শীতের মৌসুমে পিঠা বিক্রিকে বেছে নিয়েছেন মৌসুমী পেশা হিসেবে। বেচাকেনাও বেশ ভালোই চলছে। চলতি পথে থেমে বা অস্থায়ী দোকানের বেঞ্চে বসেই সন্ধ্যায় হালকা নাশতাটা সেরে নিচ্ছেন গরম গরম ভাপা পিঠা কিংবা চিতই (সাঝের পিঠা) পিঠা দিয়ে। কেউবা চিতই পিঠার সাথে নিচ্ছেন খেজুরের গুড়, কেউবা ঝালযুক্ত সরিষা বাটা। প্রতিটি ভাপা ও চিতই পিঠা বিক্রি হচ্ছে ৫-১০ টাকা। সরিষা বাটা থাকছে ফ্রি।

বেশির ভাগ বিক্রেতাই ভাপা পিঠা বিক্রি করছেন। তবে চিতইও কম চলছে না। কোথাও কোথাও থাকছে পান পিঠা। অনেক রেস্টুরেন্ট এখন বাহারী পিঠার পসরা সাজিয়ে খদ্দেরকে আকৃষ্ট করছে। রেস্টুরেন্টভেদে মিলছে ভাপা পিঠা, খেজুর রসের পিঠা, শাহি ভাপা পিঠা, খোলা চিতই, দুধ চিতই, রস চিতই বা রসের পিঠা, ডিম চিতই, সিদ্ধ কুলি পিঠা, ভাজা কুলি পিঠা, ঝাল কুলি, তিলের পুলি, ছানার পুলি, দুধপুলি, নারিকেলের তিল পুলি, ক্ষীরে ভরা পাটি সাপটা, চিংড়ি মাছের নোনতা পাটিসাপটা, গাজর কপি পাটিসাপটা, তেলেভাজা পিঠা অথবা পাকান পিঠা, সুন্দরী পাকান পিঠাসহ নানা পিঠা।

জেলার হোসেনপুর উপজেলার বোর্ড বাজারের পিঠা বিক্রেতা রফিক জানান, শীত এলে পিঠার অনেক কদর বাড়ে,পিঠা বানিয়ে কুল পাইনা। যুবক-যুবতী-মুরব্বি সব বয়সের লোকই আসেন তার দোকানে পিঠা খেতে। অনেকে বাসায় নিয়ে যান।৫ টাকা ১০ টাকা ডিমচিতই পিঠা আবার ২০ টাকায় বিক্রি হয়।

পিঠা কিনতে আসা আবির হাসান রানা বলেন, আমি প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর এই দোকান থেকে পিঠা খাই। শীত কালের খাবার মধ্যে পিঠা অন্যতম। আগে যদিও বাড়িতে এসব পিঠা বানানোর হিড়িক পড়তো এখন তা আর দেখা যায় না।

সারিবদ্ধ বসে পিঠা খাচ্ছেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে এক ব্যক্তি রিটন মিয়া বলেন,প্রতিদিন এখানে পিঠা খেতে আসি সাথে চলে নানা রকম গল্প।আসলে শীতকালে পিঠার দোকান মানে স্থানীয় টক শো।