রাজশাহীতে অবৈধ ইট ভাঁটায় নষ্ট হচ্ছে কৃষি জমি

নাজিম হাসান,রাজশাহী প্রতিনিধি: দীর্ঘদিন ধরে চারপাশের পরিবেশ দূষণের মধ্যে ফেলে রাজশাহী জেলাজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে একের পর এক অবৈধ ইটভাটা। হাজার হাজার কৃষি জমি নষ্ট করে চলছে তাদের এ কার্যক্রম। এবং ইট উৎপাদনে ইতিমধ্যে সকল প্রকার কার্যক্রম শেষ করেছেন ভাটা ব্যবসায়ীরা।
ভাটাগুলোতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। শ্রমিকেরা জানান, এসব ভাটায় কয়লা ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাই সারা বছর কাঠই পোড়াতে হয়। ভাটাগুলোর পাশে রয়েছে ফলের বাগান, আলু ও ধানখেত। আর ১০০ থেকে ১৫০ গজের মধ্যে রয়েছে জনবসতি। টিনের ড্রামচিমনি দিয়ে কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে লোকালয়ে। তবে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী,আবাসিক এলাকা ও কৃষিজমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। অথচ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। উল্টো অবৈধ এসব ইটভাটা থেকে আদায় করা হচ্ছে কোটি টাকা। ফলে বিরুপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। রাজশাহী ইট প্রস্তুতকারী সমিতির দেওয়া তথ্য মতে, রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় ১৯৫টির মতো ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি ইটভাটার। বাকিগুলো চলছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। তবে এসব ইটভাটা মালিকরা সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছেন নিয়ম মতোই। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, আইন না মেনে গড়ে ওঠা ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইটভাটা মালিকরা বলছেন, পরিবেশবান্ধব ইট তৈরির জন্য সরকার সহায়তায় এগিয়ে না এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুযায়ী আবাসিক এলাকা ও কৃষি জমিতে ইটভাটা করা যাবে না। কিন্তু এ আইনের কোনো তোয়াক্কা না করেই রাজশাহী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বহু ইটভাটা। অধিকাংশ ইটভাটায় আবার জনবসতির খুব কাছাকাছি। ফলে এসব ইটভাটার কারণে মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন হচ্ছে,তেমনি পরিবেশের ওপরও পড়ছে বিরুপ প্রভাব। তাছাড়া একের পর এক ইটভাটা নির্মাণের কারণে কৃষি জমির পরিমাণও কমছে দিন দিন। ভাটা মালিকদের বক্তব্য, তারা বৈধভাবেই ব্যবসা করতে চান। কিন্তু আইনী জটিলতার কারণে ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাচ্ছেন না। তাই চাঁদা দিয়ে চালাতে হচ্ছে এসব ইটভাটা। বৈধতা না থাকলেও প্রতি ১০ লাখ ইটের বিপরীতে প্রায় চার লাখ টাকা রাজস্বও দিতে হচ্ছে সরকারকে। ভাটা মালিকেরা বলছে,আইন অনুযায়ী কৃষি জমি,আবাসিক ও বন বা বাগান এলাকায় ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না। একইসাথে ইট পরিবহনের জন্য সরকারী পাকা সড়কও ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু এই আইন মানা আমাদের জন্য কঠিন। তাই আমরা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না পেলেও ভাটা স্থাপন করেছি। তারা জানান, ভাটাগুলোর বৈধকা না থাকার কারণে পুলিশের উৎপাতও বেশি। থানা পুলিশকে চাঁদা দিয়েই তাদের চলতে হচ্ছে। তারা লাখ লাখ টাকা সরকারকে ভ্যাট দিচ্ছেন,অথচ বৈধতা পাচ্ছেন না। প্রশাসন ঝামেলা করছে। তাদের অনেক টাকাও দিতে হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট বলেন, সরকার অনুমোদিত যে চারটি পদ্ধতিতে ইট পোড়ানো বা প্রস্তুতের কথা বলা হয়েছে, তা খুবই ব্যয় বহুল। এ কারণে উদ্যোক্তারা আগ্রহী হচ্ছেন না। তবে জেলার সব মালিক বা উদ্যোক্তারা এক হয়ে একটি বা দুটি ভাটা তৈরি করলেও এর সমাধান হতে পারে। জেলায় এতবেশি ভাটারও তো প্রয়োজন হয় না। এ জন্য মালিকদের কড়া নজরদারির মধ্যে আনতে হবে বলেও জানান তিনি। রাজশাহী ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, বিদ্যমান আইনের জটিলতা কাটিয়ে ওঠা জরুরি। এই আইনের সংশোধন করা উচিত। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ইট তৈরির ব্যবস্থা করার জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। তবে রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বলছেন,নানা কারণে প্রভাবশালীরা অনুমোদন না নিয়েই ইটভাট তৈরি করছেন। মাঝে-মধ্যেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। জরিমানাও করা হচ্ছে। আইন না মানলে কোনো ভাটাই চলতে দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।