রংপুুরের জাহিদ হাসান আজ দেশের একজন সফল ফ্রিল্যান্সার।

শেখ মাহাবুব আলমঃ সবুরে মেওয়া ফলে-প্রবাদটি অন্য কারো কাছে সত্য হোক বা না হোক কিন্তু তা ফ্রিল্যান্সার জাহিদের ক্ষেত্রে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে। কেননা বারবার ধাক্কা খেয়ে পুনরায় লেগে থাকা, পরিবারের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, কাজের চাপে কাঙ্ক্ষিত পড়াশোনা করতে না পেরে শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিং-কে পেশা এবং নেশা হিসেবে গ্রহণ করে সফল হওয়া এক স্বপ্নবাজ জাহিদ হাসান । আজ দেশে যিনি একজন পেশাদার ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পরিচিতি। তবে এই সফলতার সহজ ছিল না। বরং ছিল বাধা ও চ্যালেঞ্জে ভরপুর।

অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মামাতো ভাইয়ের কাছ থেকে প্রথম ফ্রিল্যান্সিং শব্দটির সাথে পরিচিত হয় রংপুরের ছেলে জাহিদ। জানতে পারেন, ফ্রিল্যান্সিং করে ঘরে বসে বিদেশি মার্কিন ডলার আয় করা যায়। সেই থেকে শুরু। দিনরাত ডলার আয়ের স্বপ্ন মাথায় নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার নেশায় এদিক-সেদিক ছুটোছুটি। যেভাবেই হোক তাকে ডলার আয় করতেই হবে। যথারীতি বাড়িতে জানালেন তার একটি ল্যাপটপ দরকার। কারণ তিনি ঘরে বসে কাজ করে ডলার আয় করবেন। কিন্তু তার এই আবদার পূরণ করাতো পরিবারের কাছে এক অন্যকরম বাজে চিন্তা অল্প বয়সে ল্যাপটপ কেনো দরকার এখানেই প্রশ্নবিত্ত এবং থমকে যায়। তবুও জাহিদ বাসায় নানান বাহানা দেখিয়ে একটা ল্যাপটপ কিনে নেয়।

পরিবারের বিরুদ্ধে এই সংগ্রামের মধ্যেই জাহিদ বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। তাই তার বাবা বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন দেখতেন । এটি তার কাছে অনুপ্রেরণা ছিল। কিন্ত আড্ডা বন্ধদের সাথে সময় নষ্ট করেই সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে যায় তার। তবে সেটা ব্যর্থ হলেও ফ্রিল্যান্সার হওয়ার স্বপ্ন ঠিকই পূরণ করেছেন এই যুবক। টানা ২ বছর বিভিন্ন জায়গায় ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে শিখেছেন। কাজ করেছেন, ব্যর্থ হয়েছেন, মানুষের কথা শুনেছেন। অনেক সময় হতাশ হয়েছেন কিন্তু দিনশেষে আবার কাজ করেছেন। ফলে আজ দেশের প্রথম সারির ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

ফ্রিলান্সিং জীবনে তিক্ততম সময়ের কথা জানিয়ে জাহিদ বলেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ে সবচেয়ে বড় বোকামি ছিল বারবার মার্কেট প্লেস পরিবর্তন করা। যার ফলে জীবনে অনেক সময় ও শ্রম নষ্ট হয়েছে। তাই এই পথে সফল হতে হলে যা করতে আগ্রহী সেটা নিয়েই কাজ করতে হবে। কেননা ছুটোছুটি করে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়া যায় না। সফল হতে নিয়মিত ও সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করতে হবে। এ জন্য ধৈর্য হলো সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। এটাকে জয় করতে পারলে সফলতা নিশ্চিত।

তিনি বলেন ‘শুরুতে কোনো কিছু বুঝতাম না। গুগল ও ইউটিউব ঘেটে শিখতে লাগলাম। সফলতার চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি হতে লাগল। এখনকার মতো তখন এত কোর্সের ব্যবস্থাও ছিল না। তাই ২০১৮ সালে অ্যামাজনে প্রডাক্ট সেলের কাজ করতাম। সেটাতে খুব বেশি সফলতা না আসায় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ওপর কাজ করতে থাকি। এরপর পর্যায়ক্রমে এসইওর,গুগল এডসের কাজ শিখে এগোতে থাকি। বর্তমানে প্রতি মাসে লাখ টাকা আয় হয়।’
তিনি বলেন, ‘ভাষাগত দক্ষতার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সফল হওয়া সম্ভব হবে।’