মোবাইল গেম ও অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন

মোবাইল গেম ও অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়ন প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এটি বাস্তবায়নে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৩০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।পুরোটাই সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।এ নিয়ে তিনবার প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ানো হলো।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিফ্রিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘মোবাইল গেম ও অ্যাপ্লিকেশন সংক্রান্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক তরুণকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মোবাইল গেম ও অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়ন বিষয়ে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের মতো ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির রাষ্ট্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর মোবাইল গেম অ্যাপস প্রযুক্তি নিয়ে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল দুই বছরের মধ্যেই। কিন্তু বারবার মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। ফলে এটি বাস্তবায়নে সময় যাচ্ছে ৭ বছর। তবে এক্ষেত্রে করোনা মহামারির দোহাই দেওয়া হয়েছে। এজন্য ‘মোবাইল গেম ও অ্যাপ্লিকেশনের দক্ষতা উন্নয়ন’ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়।

প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ২৭ হাজার ৪২৫ জনের প্রশিক্ষণ, ২৮৯টি মোবাইল অ্যাপস ও গেম ডেভেলপমেন্ট এবং ৩৩টি জেলা পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপস টেস্টিং সেন্টার স্থাপন করা। এছাড়া ৮টি বিভাগীয় পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপস ও গেম টেস্টিং সেন্টার, ৯টি মোবাইল অ্যাপস ও গেম ডেভেলপমেন্ট মার্কেটিং অ্যান্ড প্রমোশন, ৪ জন পরামর্শক সেবা ক্রয় এবং প্রাইস কন্টিজেন্সি ব্যয় মেটানো।

প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মোবাইল অ্যাপস ও গেম নির্মাণ প্রযুক্তি বিশ্বে একটি অন্যতম শিল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মোবাইল গেম ও অ্যাপস নির্মাণ হয়ে উঠবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত। বিশেষত বাংলাদেশের মতো একটি ক্ষুদ্র জনবহুল দেশে যেখানে ভারী শিল্প নির্মাণের কাঁচামালের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। সেজন্য শ্রম, মেধা, সৃজনশীলতানির্ভর মোবাইল গেম ও অ্যাপস নির্মাণ শিল্প অনেক বেশি উপযোগী। এ দেশে শিক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠীর বিরাট অংশ বেকার। তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ শিল্পে যুক্ত করতে পারলে দেশের বেকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তারা একদিকে নিজেরা স্বাবলম্বী হবে, অন্যদিকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, নতুন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৭টি নতুন কার্যক্রম, বঙ্গবন্ধু শৈশব নিয়ে ১০ পর্বের অ্যানিমেটেড মুভি ‘খোকা’ নির্মাণ এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শিশু-কিশোরদের সংযোগ স্থাপনের জন্য গেমসভিত্তিক ওয়েভ প্ল্যাটফরমের আওতায় ১২টি গেম নির্মাণ করা হবে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ভার্চুয়াল ট্যুরের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার ৫০ বছর শিরোনামে অ্যানিমেটেড মুভি এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে মোবাইল গেমের দ্বিতীয় ভার্সন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নির্মাণ করা হচ্ছে। শেখ রাসেলের জীবনী নিয়ে থ্রিডি অ্যানিমেটেড মুভি ‘রাসেল সোনা’ নির্মাণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জন্য অ্যানিমেশন ল্যাব স্থাপনের প্রস্তাব সংযোজন করা হচ্ছে। প্রকল্পটির আওতায় চলতি বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ১৭৫ কোটি ৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬২ দশমিক ১২ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৭৯ শতাংশ।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২৮১ কোটি ৮০ লাখ ৮২ হাজার টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের ১৪ জুন একনেক সভায় অনুমোদন পায়। এরপর প্রকল্পের ব্যয় ছাড়া বাস্তবায়ন মেয়াদ এক বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী আনা হয়। সেটি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ ২০১৮ সালের ৪ জুলাইয়ে অনুমোদন করে। পরে আইএমইডির সুপারিশের প্রেক্ষিতে প্রকল্পটির মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে কিছু নতুন কম্পোনেন্ট সংযোজন করে পরিকল্পনামন্ত্রী ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেন। বর্তমানে বাস্তব চাহিদার জন্য নতুন কিছু কার্যক্রম সংযোজন ও চলমান অনুমোদিত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে করার জন্য তৃতীয় সংশোধনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৩০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পটিতে পরামর্শক খাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকায়। বর্তমানে ৯ জন পরামর্শকের জন্য ধরা হয়েছিল ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এখন ৭৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন যথাসময়ে না হওয়ার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা উচিত। সময়মতো শেষ না হলে ব্যয় বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই অতিরিক্ত ব্যয়ের দায় কে নেবে?। সেই সঙ্গে সময়মতো প্রকল্প শেষ হওয়ার সুফল থেকে বঞ্চিত থাকছে দেশ। কিন্তু কী কারণে শেষ হলো না সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় না আনায় একই ঘটনা সব ক্ষেত্রেই ঘটছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরামর্শক খাতের ব্যয় নিয়ে নানা ধরনের কথা শোনা যায়। এর মধ্যে নেতিবাচক কথাই বেশি আসে। ফলে পরিকল্পনা কমিশনের উচিত এসব ব্যয় বিশেষভাবে যাচাই-বাছাই করা। তবে পরিকল্পনা কমিশন অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন তুলে থাকে। কিন্তু এতেই দায়িত্ব শেষ করা ঠিক নয়।