মাধবপুরে ২৭ দিনেও খোলেনি বৈকুণ্ঠপুর চা বাগান, কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি শ্রমিকদের

লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি

চা বাগানের ম্যানেজারকে মারপিটের অভিযোগ এনে মাধবপুর উপজেলার বৈকুণ্ঠপুর চা বাগান ২৭ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বাগানের প্রায় সাড়ে ৪শ’ শ্রমিক। বাগানের কার্যক্রম, শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন বন্ধ থাকায় অর্থ সংকটে ভুগছেন চা শ্রমিকরা অনাহার অর্ধাহারে দিন কাটছে সেখানকার হাজারো বাসিন্দার। সংকট নিরসনে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বৈকুন্ঠপুর চা বাগানের স্থানীয় নাট্যমন্দিরে মতবিনিময় ও প্রতিবাদ সভা করেছেন ‘বৈকুন্ঠপুর চা বাগান আন্দোলন কমিটি’।

এ সময় তারা শিগগিরই বাগান খোলে দেয়ার দাবি জানান অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেয়া হয়।

প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন বৈকুন্ঠপুর চা বাগানের স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে আবাসন সুবিধা দেওয়ার কথা। অথচ বৈকুণ্ঠপুর বাগানের মালিকপক্ষ স্থায়ী চা শ্রমিক দিলীপ কেউটকে সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে। বাসস্থান সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে নিজের খাজনা দেওয়া ফসলি জমিতে ঘর নির্মাণ করতে ম্যানেজার এবং পঞ্চায়েত কমিটি থেকে মৌখিক অনুমতি নেন তিনি। কিন্তু ঘর নির্মাণের ১৫ দিনের মাথায় মালিকপক্ষ উচ্ছেদের নোটিশ দেন। এ সময় স্থানীয় চা শ্রমিকরা দিলীপের পক্ষে দাড়ালে ১২ জন শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা এবং বেশ কিছু শ্রমিককে বহিস্কারেরয়ে হুমকি দেওয়া হয় এক পর্যায়ে ৭ ডিসেম্বর মালিকপক্ষ বাগান বন্ধ ঘোষণা করে।

বৈকুন্ঠপুর চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোকন চৌহান বলেন ‘অস্থায়ী চা শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা, কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা মজুরি বৃদ্ধি এবং আবাসন সুব্যবষ্থা করতে হবে ২০১৯ সালে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃক ২৫ দফা ইশতেহারের ২৩নং অনুচ্ছেদে স্থানীয় আবাসন সংকট নিরসনের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা ছিল। আজ তিন বছর পরেও ২৫ দফার এক দফা সমাধানও চা শ্রমিকেরা চোখে দেখেনি দ্রæত সেই ২৫ দফা কার্যক্রম করতে হবে বৈকুন্ঠপুর চা বাগান আন্দোলন কমিটি সভাপতি মনিব কর্মকার বলেন এই বাগানে স্থায়ী ৪১১ জন এবং অস্থায়ী ৩০ জন শ্রমিক রয়েছে।

এই শ্রমিকদের জীবিকা বাগানের উপরই নির্ভরশীল ২৭ দিন ধরে বাগান বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা বেতন এবং রেশন পাচ্ছেন না এতে অনাহারে অর্ধহারে দিন টাকছে তাদের তাই দ্রæত বাগান খোলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা তিনি বলেন, ‘আমরা মালিক পক্ষের সাথে কথা বলেছি তারা আমাদের বলেছেন দিলীপ কেউটের ঘর উচ্ছেদ ২০ জন শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত এবং প্রত্যেক চা শ্রমিক পরিবারকে ৩ শতক করে জায়গা দেবে এসব মেনে নিলে তারা বাগান খোলে দেবে আমরা সেটি মানি না।

আজকের প্রতিবাদ সভাতে আমরা ২০১৯ সালের ইশতেহারের দাবিগুলো পূণরায় উত্থাপন করেছি। সেগুলো দ্রæত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছি আগামী ৩১ ডিসেম্বর শুক্রবারের মধ্যে যাবতীয় সংকট নিরসন না হলে কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলনের ডাক দেব বৈকুণ্ঠপুর চা বাগানের ম্যানেজার সামছুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ’বাগানের শ্রমিকদের বসবাসের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। কিন্তু শ্রমিক দিলিপ কেউট নিয়ম ভঙ করে বাগানের ভেতর জনবসতির বাইরে পাকা ঘর নির্মাণ করেন। বিষয়টি আমাদের নজরে এলে আমরা তাকে ঘর নির্মাণে বাধা দিই কিন্তু তিনি আমাদের বাধা শোনেননি।

তিনি বলেন বাগানের নিয়ম ভঙ্গ করা এবং নির্দেশনা অমান্য করায় আমরা তার শ্রমিক কার্ড বাতিল করি। যে কারণে গত ৭-ডিসেম্বর তিনি (দিলিপ) বাগানের পঞ্চায়েত কমিটিকে নিয়ে উত্তেজিত হয়ে আমাদের ওপর হামলা চালান। শ্রমিকরা আমাকে ও আমার ডেপুটি ম্যানেজার মহিউদ্দিনকে মারপিট করেন এবং বাংলো ভাঙচুর করেন ম্যানেজার সামছুল বলেন ‘বিষয়টি আমি বাগান মালিককে জানালে তিনি বাগান বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বাগানটিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, লস্করপুর ভ্যালীর সভাপতি রবীন্দ্র গৌড় সাধারণ সম্পাদক অনিরুদ্ধ বাড়াইক বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সংগঠনের আহবায়ক খাইরুন আক্তার প্রমূখ। এছাড়াও নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মীরা কৈরী এবং রেমা-নোয়াপাড়া-চাঁদপুর-বেগমখানসহ বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা উপস্থিত ছিলেন।