বিশ্বকাপ ইতিহাসের এগারো ম্যান অব দ্য ফাইনাল

এই আমার দেশ ডেস্ক : ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সবথেকে বড় আসরের দ্বাদশ সংস্করণ। এর আগে বসেছে এগারোটি আসর। ঘটেছে এগারোটি ফাইনাল। বিশ্ব পেয়েছে এগারোটি চ্যাম্পিয়ন। আর এগারো ফাইনালের এগারোজন ম্যান অব দ্যা ম্যাচ।

বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠাই যেখানে ভাগ্যের ব্যাপার সেখানে ফাইনালে সেরা পারফর্মেন্স তো আরো মূল্যবান। এখন পর্যন্ত ভিন্ন এগারো ম্যাচ সেরার পাওয়া গেছে। এই ১১ খেলোয়াড়ের ছয় জন ফাইনালের সেরা হয়েছিলেন ব্যাটিং পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। ফাইনালের ম্যাচ সেরা দুজন ছিলেন বোলার এবং বাকি তিন জন ছিলেন অলরাউন্ডার। চলুন দেখে নেয়া যাক সেই ম্যাচ সেরাদের।

সেটি ছিল ওয়ানডের প্রথম বিশ্বকাপ। সেই আসরের ফাইনালে ম্যাচ সেরা হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড। শিরোপা জিততে ফাইনাল ম্যাচে করেছিলেন ১০২ রান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৮৭ ম্যাচ খেলে ৩৯.৫৪ গড়ে যিনি করেছিলেন ১৯৭৭ রান। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি খেলেই ফাইনালের ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন লয়েড।

দ্বিতীয় বিশ্বকাপেও শিরোপা জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলকে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জেতাতে ব্যাট হাতে স্যার ভিভ রিচার্ডস করেছিলেন অপরাজিত ১৩৮ রান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তিনি ১৮৭ ম্যাচে করেছিলেন ৬৭২১ রান। যেখানে ১১টি সেঞ্চুরি ছিল, ছিল ১৮৯ রানের অপরাজিত ক্যারিয়ার সেরা একটি ইনিংস।

তৃতীয় ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। সেই আসরের ফাইনালে অলরাউন্ড পারফর্ম করেছিলেন ভারতের মহিন্দর অমরনাথ। বল হাতে ১২ রানের বিনিময়ে তুলে নেন তিনটি উইকেট। আর ব্যাট হাতে করেছিলেন ২৬ রান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তিনি ৮৫ ম্যাচ খেলে করেছিলেন ১৯২৪ রান, ব্যাটিং গড় ৩০.৫৩। বল হাতে নিয়েছেন ৪৬ উইকেট।

এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। সেই আসরের ফাইনালে ম্যাচ সেরা হন ডেভিড বুন। ৭৫ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস খেলে ফাইনালের সেরা হন তিনি। এই অস্ট্রেলিয়ান ওয়ানডেতে পাঁচটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৩৭.০৪ গড়ে ১৮১ ম্যাচে করেছিলেন ৫৯৬৪ রান।

ব্যাট হাতে ৩৩ রান আর বল হাতে ৪৯ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট, এমনটিই ছিল ওয়াসিম আকরামের ফাইনাল ম্যাচের পারফরম্যান্স। দলকে বিশ্বকাপ জেতাতে যা রেখেছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ফাইনালে অলরাউন্ডারের ভূমিকা রাখলেও গ্রেট পেসারদের তালিকায় অন্যতম তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে খেলেছেন ৩৫৬ ম্যাচ। যেখানে ক্যারিয়ার শেষের আগে নামের পাশে জমিয়েছেন ৫০২ উইকেট।

এই আসরের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। ফাইনালে ব্যাটে-বলে দারুণ অলরাউন্ডার পারফর্ম করেছিলেন লঙ্কান লিজেন্ড অরবিন্দ ডি সিলভা। ব্যাট হাতে অপরাজিত ১০৭ রান করার পর বল হাতে নিয়েছিলেন ৪২ রানের বিনিময়ে তিনটি উইকেট। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন ৩০৮ ম্যাচ। যেখানে ব্যাট হাতে ৩৪.৯০ গড়ে ৯২৮৪ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ১০৬ উইকেট।

আইসিসির মেগা এই ইভেন্টে আবারো চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। দেশকে দ্বিতীয়বার শিরোপা জেতাতে ফাইনাল ম্যাচে বল হাতে জ্বলে উঠেছিলেন লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন। ৩৩ রানের বিনিময়ে চারটি উইকেট নিয়ে ফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছিলেন সর্বকালের সেরা এই স্পিনার। ওয়ানডে ক্যারিয়ার শেষের আগে ওয়ার্ন খেলেছেন ১৯৪ ম্যাচ, যেখানে তার নামের পাশে জমেছে ২৯৩ উইকেট।

ফাইনালে ১৪০ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং। দলকে তৃতীয়বার আর টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জেতানো ইনিংস খেলে ফাইনালের ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে পন্টিং খেলেছেন ৩৭৫ ম্যাচ, ব্যাট হাতে করেছিলেন ৪২.০৩ গড়ে ১৩ হাজার ৭০৪ রান। তার নামের পাশে আছে ৩০টি সেঞ্চুরি আর ৮২টি ফিফটি।

এবারো চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। টানা তৃতীয়বার আর সবমিলিয়ে চতুর্থবার অজিদের শিরোপা জেতাতে ফাইনালে ব্যাটিংয়ে নেমে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্ট করেছিলেন ইনিংস সর্বোচ্চ ১৪৯ রান। গিলি ওয়ানডে ছাড়ার আগে খেলেছেন ২৮৭ ম্যাচ, যেখানে তার ব্যাটিং গড় ৩৫.৮৯। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৯৬১৯ রান করতে সেঞ্চুরি করেছেন ১৬টি, ফিফটি আছে ৫৫টি।

ঘরের মাঠে আয়োজিত ফাইনালে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন ভারতের তখনকার দলপতি মহেন্দ্র সিং ধোনি। দেশকে দ্বিতীয়বার শিরোপা পাইয়ে দিতে ধোনি ফাইনাল ম্যাচে ৯১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। এবারো ধোনি খেলবেন টিম ইন্ডিয়ার জার্সি গায়ে। ৩৪১ ওয়ানডেতে তিনি ১০টি সেঞ্চুরি, ৭১টি ফিফটিতে ৫০.৭২ গড়ে করেছেন ১০৫০০ রান।

আরও একবার শিরোপা উঠে অস্ট্রেলিয়ার হাতে। ফাইনালে দারুণ বোলিং করেন অলরাউন্ডার জেমস ফকনার। ৩৬ রানের বিনিময়ে তিনটি উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন ফাইনালের ম্যাচ সেরা। অস্ট্রেলিয়া পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে। ৬৯ ওয়ানডে খেলে যিনি করেছেন ১০৩২ রান, ব্যাটিং গড় ৩৪.৪০। আর বল হাতে ওয়ানডেতে নিয়েছেন ৯৬ উইকেট।

ক্লাইভ লয়েড (ব্যাটসম্যান), অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (ব্যাটসম্যান), ভিভ রিচার্ডস (ব্যাটসম্যান), মহিন্দর অমরনাথ (মিডিয়াম পেস বোলিং অলরাউন্ডার), ডেভিড বুন (ব্যাটসম্যান), অরবিন্দ ডি সিলভা (অফব্রেক অলরাউন্ডার), রিকি পন্টিং (ব্যাটসম্যান), মহেন্দ্র সিং ধোনি (উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান), জেমস ফকনার (পেস বোলিং অলরাউন্ডার), ওয়াসিম আকরাম (পেসার) এবং শেন ওয়ার্ন (স্পিনার)।