বাংলাদেশকে ‘পরাশক্তি’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান ডোমিঙ্গো

স্পোর্টস ডেস্ক : স্টিভ রোডসকে বিদায় দেয়ার পর একজন হাই প্রোফাইল বিদেশি কোচই খুঁজছিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞাপনও দিয়েছিল তারা। হাই প্রোফাইল বেশ কয়েকজন কোচ আবেদনও করেছিল। শেষ পর্যন্ত বিসিবি বেছে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোকে।
কোচ হওয়ার তালিকায় ডোমিঙ্গোর সঙ্গে ছিলেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক কোচ মাইক হেসন, সদ্য পাকিস্তান দল থেকে বরখাস্ত হওয়া মিকি আর্থার, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার কিংবা শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি মাহেলা জয়াবর্ধনে। নিঃসন্দেহে এরা সবাই হাই প্রোফাইল। কিন্তু তাদের সবাইকে পেছনে ফেলে কোচ হলেন ডোমিঙ্গো।
যিনি স্বশরীরে ঢাকায় এসেছেন ইন্টারভিউ দিতে। নিজের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা প্রেজেন্টেশন আকারে উপস্থাপন করেছেন বিসিবি কর্মকর্তাদের সামনে। বিস্তারিত জানিয়েছেন তার কাজের পদ্ধতি। বাংলাদেশকে কোথায় দেখতে চান, সেই ভিশনও জানিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, যতদিন বাংলাদেশের কোচ থাকবেন, ততদিন এখানকার ক্রিকেটারদের সঙ্গে বেশিরভাগ সময় কাটিয়ে নিজের সেরাটা ঢেলে দেয়ার চেষ্টা করবেন ডোমিঙ্গো।

বিসিবি মূলতঃ তার এসব কিছু দেখেই অন্য হাই প্রোফাইল কোচদের ওপর প্রাধান্য দিয়েছে রাসেল ডোমিঙ্গোকে। শনিবার দুপুরের পর টাইগারদের পরবর্তী কোচ হিসেবে ডোমিঙ্গোর নাম ঘোষণার পরই বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় আলোচনায় উঠে আসেন তিনি।

কোচ হিসেবে নাম ঘোষণার পরই ইএসপিএন ক্রিকইনফো সাক্ষাৎকার নেয় ডোমিঙ্গোর। সেখানেই তিনি জানালেন, বাংলাদেশ দল নিয়ে তার স্বপ্নের কথা। জানালেন, তার অভিজ্ঞতা এবং কর্ম দক্ষতা সব কিছু দিয়েই বাংলাদেশের ক্রিকেটিং সিস্টেমের প্রতিটি লেভেলে কাজ করবেন এবং চেষ্টা করবেন বাংলাদেশ দলকে বিশ্ব ক্রিকেটাসনে আরও অনেক উপরে তুলে ধরতে।

তবে ডোমিঙ্গোর চোখ কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে। তিনি চান প্রতিভা তুলে আনতে। নিচু সারির ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে চান তিনি, যেখান থেকে সবচেয়ে বেশি প্রতিভা উঠে আসে। সম্ভবত, বিসিবিও তার কাছে এমন কিছু চেয়েছিল।

নিজের কর্মপদ্ধতি নিয়ে আলাপ করতে গিয়ে ডোমিঙ্গো বলেন, ‘আমি মনে করি, আপনি তাদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন, কোনটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? আমি আগেও অনুর্ধ্ব-১৫ থেকে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। যেখান থেকে জাতীয় দলে খেলোয়াড়রা উঠে আসে। সুতরাং, আমি চাই যে নতুন খেলোয়াড়রা যেখান থেকে উঠে আসছে, সেখানে যুক্ত হতে। সেখানে আমি একটু ভূমিকা রাখার সুযোগ পেলে পরবর্তী কাজটা অনেক সহজ হবে বলে মনে করি।’

জাতীয় দল তো সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেখানে খেলোয়াড় উঠে আসার রাস্তাটা যদি মসৃণ হয় এবং সঠিক প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে উঠে আসে, তাহলে তা জাতীয় দলের জন্য পরবর্তী সময়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হবে। ডোমিঙ্গো বলেন, ‘জাতীয় দলই তো আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু জাতীয় দলের নিচের স্তরগুলোতে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেখানেও আপনাকে সমানভাবে নজর দিতে হবে। কারণ, সেখান থেকেই তো আপনার খেলোয়াড়রা উঠে আসছে। নতুন খেলোয়াড়েরা যেখান থেকে উঠে আসছে, সেখানে যদি আমি একটু ভূমিকা রাখতে পারি, তাহলে সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করি।’

বাংলাদেশে অনেক ভালোমানের ক্রিকেটার রয়েছে। এটা শুরুতেই জানিয়ে দিলেন ডোমিঙ্গো। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কিছু অসাধারণ খেলোয়াড় আছে, তবে তরুণদের তুলে এনে সিনিয়রদের ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করা ভালো। তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগও দিতে হবে। কারণ, শেষ পর্যন্ত সেখানে (জাতীয় দল) তাদেরই প্রয়োজন।’

তরুণ প্রতিভা তুলে আনার ক্ষেত্রে ডোমিঙ্গোর কাজের ধরণ হবে একটু ভিন্ন। তিনি হাই পারফরম্যান্স কোচ এবং ম্যানেজারের সঙ্গে কাজ করতে চান এবং জেনে নিতে চান তরুণদের মধ্যে কারা ভালো করছে এবং সম্ভাবনাময় কারা রয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে আগেই স্টাডি করে রেখেছেন ডোমিঙ্গো। সেটা তার কথাতেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, পরবর্তী সেরা খেলোয়াড়টি কে, তা জানতে হাই পারফরম্যান্স কোচ ও ম্যানেজারের সঙ্গে কাজ করাটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। অনূর্ধ্ব-১৯ দল ইংল্যান্ডকে চারবার হারিয়েছে এবং ভারতের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়েছে। অর্থাৎ নিচের পর্যায়ে অবশ্যই কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে, যাদের জাতীয় দলের কাছাকাছি রাখা প্রয়োজন। খেলোয়াড়দের ভিত্তিটা আরও সম্প্রসারণ করা দরকার, তাদের উন্নতিও করাতে হবে যেন আগামী পাঁচ-ছয় বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে পারে।’

এরপরই উঠে এলো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ। সেমিতে খেলার স্বপ্ন নিয়ে গিয়ে ৮ম হয়ে আসতে হয়েছে। ডোমিঙ্গোর মতে, বাংলাদেশ ভালো খেলেছে। কিন্তু ছোট ছোট কয়েকটি ভুলের খেসারত দেয়ার কারণে বড় সাফল্য আসেনি। অথচ কয়েকটি ম্যাচে জয়ের কাছাকাছি ছিল তারা।

বিশ্বকাপের কথা বলতে গিয়ে ডোমিঙ্গো বলেন, ‘বেশ কিছু ম্যাচে তারা জয়ের খুব কাছে ছিল। নিউজিল্যান্ড ম্যাচের কথাই ধরুন, একটা রানআউটের সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় সেমিফাইনালে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। ভুল খুব ছোট ছোট। মূল বিষয় হলো মনস্তাত্ত্বিক বাধা টপকাতে হবে।’

এবারই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে কোচ হিসেবে কাজ করবেন ডোমিঙ্গো। ব্যাপারটা নিয়ে খুব উত্তেজিত তিনি। তারওপর, সহকারী হিসেবে যাদের পাচ্ছেন তারাও তার পরিচিত। ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জি, বোলিং কোচ চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট, ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক- সবাই দক্ষিণ আফ্রিকান। ডোমিঙ্গোও তাদের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে। তার প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আগামী মাসে ঘরের মাঠে আফগানিস্তান টেস্ট। ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হবে একমাত্র ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি।

অন্য অনেকের মতই বাংলাদেশ দল নিয়ে দারুণ আশাবাদী ডোমিঙ্গো। তার চোখে গত ৫-৬ বছরে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে বাংলাদেশই। বাংলাদেশের সমর্থকদেরও উচ্চসিত প্রশংসা করেছেন তিনি। ডোমিঙ্গো বলেন, ‘গত পাঁচ-ছয় বছরে সবচেয়ে উন্নতি করা দল বাংলাদেশ। তাদের ভক্তকুল অবিশ্বাস্য। বোর্ডের সঙ্গে দেখা করে বুঝেছি তাদেরও পরিকল্পনা আছে। আর তরুণেরাও উঠে আসছে। তাই আমি মনে করি, বিশ্ব ক্রিকেটে সত্যিকারের পরাশক্তি হয়ে উঠতে সবকিছু ঠিকঠাকই আছে বাংলাদেশে। এ কারণেই বাংলাদেশকে নিয়ে আমি রোমাঞ্চিত।’