প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ, ১০দিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একের পর এক আগুনের ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেন আগে থেকে অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না সেটাই তার অসন্তোষের কারণ। সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার কিছু পরে বনানীর ১৭ নম্বর রোডে এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। আগুন লাগার ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী নিজে এ ব্যাপারে মনিটরিং শুরু করেন এবং বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, যে ভবনটিতে আগুন লাগানো হয়েছিল সেই ভবনটির অনুমোদন ছিল ১৭ তলার। কিন্তু সেটা নির্মাণ হয় ২২ তলা। অনুমোদনহীন একটি ভবন কীভাবে রাজউকের নাকের ডগা দিয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান করে এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে রাজউকের গাফিলতির বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

একই সঙ্গে, যে ভবনটিতে আগুন লেগেছিল সেটিতে অগ্নিনির্বাপনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রী নজরে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেন বিষয়টি তদারকি করেনি এবং বহুতল ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা কেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে না সে ব্যাপারে অবিলম্বে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাতে একটি অনুশাসন জারি করা হয়েছিল। সেই অনুশাসনে বলা হয়েছিল যে প্রতিটি বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা যেন যথাযথ এবং কার্যকর থাকে সে ব্যাপারে নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। এই দায়িত্বটা ফায়ার ব্রিগেডকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত ১০ বছরেও এই এফআর টাওয়ারে কোনো অগ্নিনির্বাপন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আরও একটি ঘটনায় অনুশাসনের ব্যত্যয় ঘটেছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, প্রতিটি এলাকায় যেন পানির আধার থাকে, সেটাকে সংরক্ষণ করা হয়, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে পানি পাওয়া যায়, এই ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে দুইদফা অনুশাসন জারি করেছিলেন। কিন্তু এবার এফআর টাওয়ারে যখন আগুন লেগেছে তখন পার্শ্ববর্তী লেক এবং পানির আধারের সংকট দেখা দিয়েছিল। পানির অভাবে আগুন নেভানোর কাজ বিলম্বিত হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী গতকালই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং এখানে অনিয়মকে কোনোরকম প্রশ্রয় না দেওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা জারি করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন অনিয়ম করে বহুতল ভবন নির্মাণ এবং ভবনের নিরাপত্তা, অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত না করে যদি বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানো হয়- তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যেন ন্যূনতম কার্পণ্য করা না হয় সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত করে দায়ী অর্থাৎ যাদের কারণে রাজউকের অনুমোদন ছাড়া এই ভবন বহাল তবিয়তে ছিল, যাদের কারণে এই এফআর টাওয়ারে অগ্নিনির্বাপনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না- তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আজ সকালেও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছেন। মেয়রকে তিনি তিনটি অনুশাসন দিয়েছেন। সেগুলো হলো-

১. প্রতিটি ভবনের অবকাঠামো এবং নকশা অনুমোদিত কিনা সেটা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

২. প্রতিটি ভবনে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হতে হবে।

৩. প্রতিটি ভবনে লিফট ছাড়াও অগ্নিকাণ্ড বা যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত বহির্গমনের সিঁড়ি বা বিকল্প পথ আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি ১০ দিন সময় দিয়েছেন। ১০দিনের মধ্যে বাণিজ্যিক বহুতল ভবনগুলোর ব্যাপারে সব তথ্যাদি তিনি গ্রহণ করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।