পদক কিংবা পাদোদক বাণিজ্য!


মূল পত্রিকার নিউজ পড়তে ছবিতে ক্লিক করুন

প্রকাশ ভান্ডারী : পদক চাইলে পাদোদক চাখুন। পাদোদক কী জানেন তো! একটু ইয়ে মানে যার কাছ থেকে স্বীকৃতি চান, তাকে তেলিয়ে কাছে রাখুন। মোদ্দা কথা, পদক পেতে গেলে পাদোদক খেতে হবে। এই পাদোদক শব্দের অর্থ পূজ্য ব্যক্তির পা-ধোয়া বা পা-ছোঁয়া জল, চরণামৃত। কিন্তু পাদোদক খাওয়াতেও বাণিজ্য ভর করেছে। টাকা দিলেই মিলছে পদক, সম্মাননা। বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে দেয়া হচ্ছে এসব পদক। অনুষ্ঠানে অংশ নেন মন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। পদকপ্রাপ্তদের তালিকায়ও দু’-একজন বিখ্যাত লোক থাকেন। তবে এটি পদক ব্যবসায়ীদের এক ধরনের কৌশল। পদক দেয়ার নামে বাণিজ্য করছে রাজধানীতে এমন চক্র আছে অন্তত অর্ধশত। বিদেশেরও কম নেই। এই চক্র বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে পদক দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেয় অর্থ। টাকা দিলে যে কেউ পেতে পারে তাদের দেয়া পদক আর সম্মাননা। পদক ব্যবসায়ীদের বিষয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নানা চমকপ্রদ তথ্য। অর্থের বিনিময়ে পদক দেয় এমন কয়েকটি চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে একাধিক পদক দেয়ার প্রস্তাব দেয়। এমনকি পদকের ‘মূল্য’ নিয়ে দরকষাকষিও করে তারা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারা দেশে অর্ধ শতাধিক ‘সংগঠন’ নামে-বেনামে অর্থের বিনিময়ে এ অনৈতিক পদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসায়, সমাজসেবা, কৃষি, রাজনীতি, শিল্প, সংগীত, সাংবাদিকতা, সৃজনশীলতা এ রকম অন্তত ১৬টি ক্যাটাগরিতে সম্মাননা ও পদক দেয় এসব ‘সংগঠন’। বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তি ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী, স্বাধীন বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মাদার তেরেসা, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী, দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা, ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সাহিত্যিক ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া, পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর, বঙ্গবীর এমএজি ওসমানী, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, কবি সুফিয়া কামাল-এমন বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে দেয়া হয় সম্মাননা পদক। এছাড়া আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন বিশেষ দিবসেও দেয়া হয় পদক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র, মাদার তেরেসা গবেষণা পরিষদ, মহাত্মা গান্ধী গবেষণা পরিষদ, বঙ্গবীর ওসমানী গবেষণা পরিষদ, স্বাধীনতা গবেষণা পরিষদ, অতীশ দীপঙ্কর সম্মাননা পরিষদ, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক স্মৃতি পরিষদ, কাজী নজরুল ইসলাম সম্মাননা পরিষদ, সুফিয়া কামাল গবেষণা পরিষদ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা গবেষণা পরিষদ, বিজয় দিবস স্মৃতি পরিষদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্মাননা পরিষদ, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর গবেষণা পরিষদ- এ রকম অসংখ্য নামে পদক ও সম্মাননা দিচ্ছে অবৈধ সংগঠনগুলো। যাদের হাতে পদক তুলে দেয়া হয় তারাই মূলত এসব সম্মাননা অনুষ্ঠান আয়োজনের যাবতীয় খরচ বহন করেন। নির্ধারিত অনুষ্ঠানের জন্য সংগঠনগুলো বেছে নেয় জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, পাবলিক লাইব্রেরি মিলানয়তন, বিএমএ মিলনায়তনসহ রাজধানীর নামকরা হোটেলগুলোকে।

দেশে অসংখ্য ভুঁইফোঁড় সংগঠন নামে-বেনামে পদক বাণিজ্যকে উপার্জনের অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করছে। তাই এখন পুরস্কার বা পদক ব্যবসার রমরমা অবস্থা। সামাজিক স্বীকৃতি লোভীদের অসততার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই এখন এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বলা যেতে পারে, অনেকের উপার্জনের একমাত্র মাধ্যমই হচ্ছে এ ব্যবসা। একটি পুরস্কার বা পদক পুঁজি করে সমাজে নিজেদের নিজ নিজ অবস্থান তৈরি করে নিতেও সক্ষম হয়েছে এসব পুরস্কার-ব্যবসায়ীরা। ঢাকায় এসব পদক-পুরস্কারের বাজার মোটেই ভালো না হওয়ায় বর্তমানে মফস্বল ও বিদেশের দিকে তারা সম্প্রসারণে দৃষ্টি দিয়েছে। একটি জাতীয় দৈনিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, এ পুরস্কার ও পদক-ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন এলাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পুরস্কার প্রদানের লাভজনক কাজটি করে যাচ্ছে। জুরি বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতির লোভ দেখিয়ে টার্গেট করে বিশেষ ব্যক্তিকে পুরস্কার নিতে প্রলুব্ধ করে পরে সেই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা আদায়ের খবরও উঠে এসেছে সেই প্রতিবেদনে। কৌশল হিসেবে প্রথমে মেইল আইডি অথবা ডাকে একটি আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়। এরপর নাম-ঠিকানা, ছবি ও কোন বিষয়ের ওপর পদক নিতে চায়, এ তথ্য সংশ্লিষ্ট পুরস্কার প্রত্যাশীর কাছে জানতে চাওয়া হয়। এমন লোভনীয় আমন্ত্রণে সাড়া দিলে তাদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় যোগাযোগ করে পদক প্রদান অনুষ্ঠানের অনুদান চাওয়া হয়। ক্রেস্ট বা পদকের মূল্য, অনুষ্ঠানের খরচ, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের ‘খাম-খরচ’ হিসেবে ব্যয় হয় পুরস্কার প্রত্যাশীদের দেয়া অনুদান।

বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে নাম ও প্যাডসর্বস্ব গবেষণা পরিষদ বানিয়ে এরকম অসংখ্য পদক ও সম্মাননা দিচ্ছে অবৈধ এ সংগঠনগুলো। কিছু নিবন্ধনকৃত প্রতিষ্ঠান সচেতন ও সতর্কভাবে পদকের ব্যবসায় মেতে উঠেছে। তারা তাদের নিবন্ধনকৃত প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে টিকিয়ে রাখতে সম্মাননা ব্যবসাকে আয়-উপার্জনের উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছে। কিছু নামসর্বস্ব মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ও পত্রিকাও এর সঙ্গে জড়িত। আর পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তালিকায় থাকে নেতা-পাতিনেতা, হঠাৎ টাকাওয়ালা সমাজসেবক, এমনকি আলু-পটল ব্যবসায়ী থেকে স্মাগলার, অবৈধ ব্যবসায়ী, ছোটখাটো এনজিও, ভুয়া হারবাল কোম্পানি, সর্বরোগ বিশেষজ্ঞ হোমিও ডাক্তার, ভণ্ড জ্যোতিষরত্ন ও বিভিন্ন পেশাজীবী এমনকি অর্শ-গেজ পাইলস বিশেষজ্ঞও আছেন। মফস্বলের এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান টাকার বিনিময়ে পদক ও সম্মাননা নিয়ে শোকেস ভর্তি করে, প্রতারণার এ স্মারক প্রয়োজনমতো প্রদর্শন করে তৃপ্ত হয় আর স্থানীয় পর্যায়ে ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে ফেলে। এসব পদক-পুরস্কার তার কর্মপরিধির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কিনা তাও ভেবে দেখার প্রয়োজনবোধ করে না। অনেক সময় দেখা যায়, কেউবা চিকিৎসাসেবার জন্য সাহিত্য পুরস্কার, নয়তো ব্যবসার জন্য শিক্ষা পুরস্কার পেয়ে বসে আছে!

বিশ্বস্ত সুত্রে গতকালই জানলাম, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদার এক নেতা, করোনা মহামারিতে জনসচেতনতা ও সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনিও শেরে বাংলা গোল্ডেন এ্যাওয়ার্ড পেতে যাচ্ছেন। খবরটি পাওয়া মাত্র খোঁজ নেবার চেষ্টা করলাম পদক বাণিজ্যের এ প্রতারণায় দামুড়হুদার এই ভদ্রলোক না জানি কতো টাকা খুঁইয়েছেন। জানতে চেষ্টা করলাম বাংলাদেশে এ সংস্থার অস্তিত্ব আছে কিনা? অবশেষে পেলাম। তাদের সর্বসাকুল্যে একটা ফেসবুক পেজ আছে, তাতেও কোন আপডেট দেওয়া হয় না। তবে তাতে, লেখা রয়েছে ২৮-০৮-২০১৭ ইং তারিখে সংগঠনটি আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করার পর নানাবিধ সামাজিক ও মানবিক কাজের মাধ্যমে সমাজের হত দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইনশাআল্লাহ্ আমরণ আমরা সমাজ ও মানুষের পাশে থাকব।’ গতছরও তারা কাজী নজরুল ইসলাম পদক ও বেগম রোকেয়া স্বর্ণ পদক দিয়েছে। যদিও তাদের নেই কোন ওয়েবসাইট, নেই কোন অফিসের ঠিকানা বা ফোন নম্বর। এই একই ফাউন্ডেশন গেল মাসের ২৬ ফেব্রুয়ার চলতি বছরের জন্য ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ গোল্ডেন এ্যাওয়ার্ড ২০২২ দিয়েছে ৫২ জনকে। আবার দুই মাসের ব্যবধানে আগামী ১৬ এপ্রিল ২০২২ ইং তারিখে মানে আর মাত্র কয়দিন পর আবার দামুড়হুদার এ ভদ্রলোককে করোনা নায়ক হিসেবে শেরে বাংলা গোল্ডেন এ্যাওয়ার্ড পদক দেবেন। তবে কতোজনকে এই পদক দেওয়া হবে তা জানাযায়নি। ঢাকার পুরানা পল্টনে একটি হোটেলে এই অনুষ্ঠান হবে বলে আমন্ত্রণ পত্রে বলা হয়েছে। তবে এটিও ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ পদক প্রদান করা একই নামের সংগঠন এবং স্বাক্ষর একই ব্যক্তিদ্বয়ের। পদকলাভে দামুড়হুদার এই নেতার কি প্রতিক্রিয়া তা জানতে পারিনি।

করোনা নায়কের এ খবরে কৌতুহল বেড়ে গেল বিস্তারিত জানতে শেরে বাংলা গোল্ডেন এ্যাওয়ার্ড গুগলে সার্চ দিয়ে মাত্র শুন্য দশমিক ৫১ সেকেন্ডে ১০,৭০,০০০ হাজার পদক দেয়ার খবর পেলাম। মজার ব্যাপার হলো এসব খবর বাংলাদেশের কোন গুরুত্বপূর্ণ মানে আপনি আমি নাম জানি যে সব পত্রিকার সেসব পত্রিকায় ছাপা হয়নি। সবই অনলাইনে। এসব ভুঁইফোড় পত্রিকার কোন সরকারী অনুমোদন বা লাইসেন্সও নাই। লাখ লাখ মানুষ শেরে বাংলার মতো মহান মানুষের নামের পদক পেলেন অথচ দৈনিক ইত্তেফাক, ইনকিলাব, বাংলাদেশ প্রতিদিন, প্রথম আলো, সমকাল, যুগান্তর, আমাদের সময়, ডেইলি স্টারসহ চেনাজানা গুরুত্বপূর্ণ কোন পত্রিকাতে একটি খবরও আসেনি। তবে বিজ্ঞাপন আকারে কেউ নিজে টাকা খরচ করে দিলে সেটি আসতে পারে। কেননা পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের দায় পত্রিকা বা মিডিয়া কর্তৃপক্ষ বহন করে না। তবে ক্ষেত্রবিশেষ করে।

খোঁজ নিয়ে জানলাম চুয়াডাঙ্গার এমপি হতে চাওয়া এক ব্যক্তিও ভারত থেকে একটি ‘বিদিশি’ এওয়ার্ড পেয়েছে। তবে তাঁর খবরটিও ভারতের কোন পত্রপত্রিকায় তন্ন তন্ন করেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের কোন গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকাও লেখেনি। তবে কিছু অনলাইনে যথারীতি আছে। ঝিনাইদহে কয়েকজন এনজিও মালিক বছরের পর বছর সমান তালে পদক পাচ্ছেন। কেউ কেউ কলেজের সিঁড়িতে পা না দিলেও ডক্টরেট ডিগ্রী পেয়ে নামের আগে ডক্টর লেখা শুরু করেছেন।

বিষয়টি আরো পরিস্কার হতে আমার পরিচিত একজন খানবাহাদুর আহ্সানউল্লার নামে পদক পেয়েছেন- তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, রাজনৈতিক সফলতার মাঠে পদকটি তার প্রাপ্য। কারা কীভাবে পুরস্কার দিচ্ছে এটা তার ভাবনার বিষয় নয়। তিনি বিশ্বাস করেন, কিছু খরচের বিনিময়ে এ ধরনের পদক তার সামাজিক ও রাজনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধি করে। মজার বিষয় হল, যারা সমাজসেবায় বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ ধরনের পদকগুলো গ্রহণ করছেন তারা সেই ‘কিছু খরচ’ সামাজিক দায়ে কাজে না লাগিয়ে পুরস্কার কিনতে ব্যয় করছেন। এর মাধ্যমে তারা যে প্রতারণা করছেন সেটা তো মানছেনই না, বরং প্রতারণার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নিজেকে সম্মানিত ভাবছেন। সম্মাননালোভী এবং পদক বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত এসব অসৎ মানুষ বিখ্যাত মানুষের নাম ব্যবহার করে, বিখ্যাত পদক নিয়ে অপরাধ করছেন কিনা এসব কি কারও ভাববার বিষয় নয়?

কিছু খ্যাতির কাঙাল ও অর্থলিপ্সু ভুঁইফোঁড় সংগঠন উভয়ই পদক বাণিজ্যের প্রতারণায় সমান অপরাধী। তাদের কারণে পদক, পুরস্কার ও সম্মাননা সামাজিক মর্যাদার পরিবর্তে হাস্যরসে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে সম্মাননালোভী ব্যক্তিরা নিজেদের উপস্থাপন করছেন হাস্যকৌতুকের উপকরণ হিসেবে; পাশাপাশি সমাজ বিনির্মাণে যাদের সত্যিকার অবদান রয়েছে তাদের বিড়ম্বনায় ফেলে দিচ্ছেন। পদক ও সম্মাননার এমন অপপ্রয়োগ দেখে প্রকৃত সম্মানিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আজ অনেক ক্ষেত্রেই লজ্জিত হন। বিশেষ করে যারা যোগ্যতায় সম্মাননা অর্জন করেন, তারা পদক কেনাবেচার খবরে বিব্রত হন। গজিয়ে ওঠা কথিত সমাজসেবীরা প্রকৃত সমাজসেবীদের সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। যেসব বিখ্যাত মনীষীর নামে এসব পদক-পুরস্কার দেয়া হচ্ছে সেসব মনীষী কিংবা সে সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পদক ব্যবসায়ীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সুতরাং পুরস্কারে এসব মনীষীর নাম ব্যবহার করা তাদের অপমানেরই নামান্তর। বছরের পর বছর এ অনৈতিক পদক ব্যবসা চলছে। কিন্তু প্রতারণার এ কাণ্ডকারখানা দেখার যেন কেউ নেই। এ পুরস্কার-প্রতারণা বন্ধের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। দিনের পর দিন বাড়ছে পুরস্কার-ব্যবসায়ী ব্যক্তি ও সংগঠনের সংখ্যা, বাড়ছে পদক বাণিজ্যের নতুন বাজার!
পুরস্কার ও সম্মাননায় মানুষের এক চিরন্তন ভালোলাগার অনুভূতি আছে। আছে তৃপ্তি ও মর্যাদার ভালোলাগা। হালে চটকদার ও বাহারি নামের কথিত সম্মাননা ও পদকের প্রচলন এমনভাবে বেড়ে গেছে যে, মানুষের কাছে এগুলো এখন আলু-পটলের মতো সস্তা হয়ে গেছে। মর্যাদায়মাখা অর্জিত সম্মানকে যারা টাকায় কেনা প্রতারণার সম্মান দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন, তাদের সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। জাতীয় পর্যায়ে সরকারি অনুমোদন ছাড়া যারা পুরস্কার দেয় তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। স্থানীয় পর্যায়েও ব্যক্তির নামে প্রবর্তিত পুরস্কারের ওপর যথাযথ কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণ থাকলে পদকের অপপ্রয়োগ কমবে। সামাজিক স্বীকৃতির আশায় যারা পদক-পুরস্কারকে তাবিজ মনে করে, তাদের নিরুৎসাহিত করার জাতীয় প্রচারণাও কাজে দেবে বলে বিশ্বাস করি। বিভিন্ন জাতীয় সম্মাননা ও পুরস্কারের ভবিষ্যৎকে বিবেচনায় নিয়ে ভুঁইফোঁড় নামসর্বস্ব সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি প্রতারণার শামিল এ অনৈতিক পদক বাণিজ্যের লাগাম টেনে ধরার এখনই সময়।