নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের বক্তব্য ‘পক্ষপাতমূলক’: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের

সদ্য সমাপ্ত দেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের (ওএইচসিএইচআর) বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার বাংলাদেশের নির্বাচনের বাস্তবতাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে এবং মানবাধিকার নিয়ে রাজনীতিকরণ ও পক্ষপাত করেছে।

আজ রবিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের বিবৃতিকে পক্ষপাতমূলক বলে অভিহিত করে এবং ব্যাখ্যা তুলে ধরে। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত শনিবার ছয় আন্তর্জাতিক নাগরিক সমাজ সংস্থার বিবৃতি নাকচ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশের বিষয়ে সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) কার্যালয় প্রকাশিত একটি সংবাদ বিবৃতি বাংলাদেশ সরকারের নজরে এসেছে।

সরকার দেখতে পাচ্ছে, ওএইচসিএইচআর দুর্ভাগ্যবশত তার এখতিয়ার লঙ্ঘন করেছে। ওএইচসিএইচআরের বিবৃতিটি মাঠের বাস্তবতাকে ভুলভাবে উপস্থাপন এবং পক্ষপাতমূলক মূল্যায়নের মাধ্যমে মানবাধিকার নিয়ে রাজনীতি করার পুনরাবৃত্তি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ৭ জানুয়ারি জনগণের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক নীতি সমুন্নত রাখার জন্য সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট হয়েছে। কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচনের দিনটি ছিল অভূতপূর্বভাবে শান্তিপূর্ণ।

মাঠে থেকে যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন, এমন অনেক আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং সাংবাদিক এটি বলেছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নির্বাচনটি সহিংসতা ও বিরোধী প্রার্থীদের দমন-পীড়নের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’—ওএইচসিএইচআরের এমন পর্যবেক্ষণ আগে থেকেই ঠিক করে রাখা বলে সরকার মনে করছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অসাংবিধানিক দাবির অজুহাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নস্যাত্ করতে সহিংসতা ও নিরপরাধ মানুষ হত্যার আশ্রয় নিয়েছিল। বিগত নির্বাচনগুলোতেও বিএনপি এমনটি করেছিল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কেবল ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি কর্মীরা নিরীহ বেসামরিক নাগরিক এবং কর্তব্যরত আইন প্রয়োগকারী কর্মীসহ ২৪ জনকে হত্যা করেছে। তারা সরকারি-বেসরকারি প্রায় এক হাজার যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়, লাইনচ্যুত করে। বিএনপি কর্মীরা ট্রেনে হামলা চালিয়ে মা ও তার তিন বছরের শিশুসহ যাত্রীদের জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, বিএনপির ধ্বংসের বিবরণ ভয়াবহ এবং ওএইচসিএইচআনকে এ বিষয়ে বারবার বিএনপির দেশব্যাপী মারপিটের প্রমাণ সরবরাহ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং এর গণতান্ত্রিক যাত্রাকে ব্যাহত করার লক্ষ্যে হুমকি, বাধা এবং সহিংসতার মধ্যে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা সত্যিই একটি চ্যালেঞ্জ ছিল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এত ব্যাপক সহিংসতা সত্ত্বেও, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের প্রতিক্রিয়া ছিল সংযত, যৌক্তিক এবং আইনি আওতার মধ্যে। নির্বিচারে ও গণগ্রেপ্তার, হুমকি, গুম, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা হয়রানি ও নজরদারির মতো প্রতিশোধের যে অভিযোগ ওএইচসিএইচআর তুলেছে সেগুলো ভিত্তিহীন ও অপ্রমাণিত।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের সংখ্যা নিছক অতিরঞ্জন। যারা সহিংসতা ও বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত বা উসকানি দিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনের শাসন বজায় রাখতে এবং সব নাগরিকের অধিকার রক্ষার জন্য এই ব্যবস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ছিল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, অনেক মানবাধিকার কর্মীকে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে, কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, যখন কয়েক ডজন সন্দেহভাজন গুমের তথ্য পাওয়া গেছে এবং সেগুলোর বেশিরভাগই নভেম্বরে’—ওএইচসিএইচআরের এমন দাবি সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকার মনে করে, ওই দাবি বাস্তবতাবিবর্জিত ও ওএইচসিএইচআরের দায়িত্বহীনতার সরল উদাহরণ। বিবৃতি দেওয়ার ওএইচসিএইচআরের তা যাচাই করা উচিত ছিল বলে সরকার মনে করে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সংবিধানের চেতনা এবং এর আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে এবং একটি প্রগতিশীল সমাজের জন্য জনগণের আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করার জন্য জনগণের ম্যান্ডেট দ্বারা বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। বাংলাদেশ গঠণমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানায়। যেকোনো বৈধ উদ্বেগের সমাধান করতে বাংলাদেশ সবসময় প্রস্তুত। বাংলাদেশ জাতিসংঘ এবং এর মানবাধিকার কাঠামোর সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।