নান্দাইলে বিদ্রোহী ২৪ প্রার্থীতে কোণঠাসা নৌকার ১১ প্রার্থী

মোঃ এমদাদুল হক, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামীলীগ ও দলীয় অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে নৌকা প্রতীকে কাজ করার নির্দেশনা প্রদান করলেও নৌকার বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্র হিসাবে চেয়ারম্যান পদে ভোটযুদ্ধে লড়াই করছেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীগণ। এতে করে নৌকার প্রার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। তাই নৌকার পক্ষে ভোট না চেয়ে নিজ প্রতীকের ভোট প্রার্থনা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এ যেন ‘চাচাঁ আপন প্রাণ বাচাঁ’।

পাশাপাশি ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহন না করা বিএনপি’র দলীয় প্রতীক ছাড়াই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে অবস্থান করছে বিএনপি’রও কয়েকজন (৪জন) প্রার্থী।

এছাড়া জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) ১ জন, জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) ৩ জন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (হাতপাখা) প্রতীকে ১০জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছেন। নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রতিটি ইউনিয়নে নির্বাচনের জোরালো প্রচার-প্রচারণা চলছে। ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ভোট প্রার্থনা করছে প্রার্থীগণ।

আগামী ৫ই জানুয়ারী পঞ্চম ধাপ নান্দাইল উপজেলার ১১টি ইউপিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রতিটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত নৌকা প্রার্থীর বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে অবস্থান করছেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

তবে এ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে ১১টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের দুই ডজন বিদ্রোহী প্রার্থী শক্তিশালীভাবে অবস্থান করছে বলে মনে করছেন ভোটাররা। একাধিক ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে কোণঠাসায় পরিণত হচ্ছে নৌকা।

জানাগেছে, ২নং মোয়াজ্জেমপুর ইউপিতে নৌকা প্রার্থী তাছলিমা আক্তারের বিপক্ষে অবস্থান করছে বিদ্রোহী প্রার্থী এডভোকেট খায়রুল ইসলাম (চশমা) ও সাইদুল ইসলাম (আনরস), ৩নং নান্দাইল ইউপিতে নৌকা প্রার্থী (বিগত ইউপিতে নৌকা প্রতীক বিজয়ী) মো. আনোয়ারুল হকের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন কাজল (আনরস) ও হাতেম আলী (ঘোড়া), ৪নং চন্ডিপাশা ইউপিতে নৌকা প্রার্থী ইফতেকার হোসেন খুরররম এর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা মো. শাহাব উদ্দিন ভুইয়া (মোটরসাইকেল) (যদিও উক্ত ইউপিতে প্রার্থী জটিলতা বিদ্যমান), ৫নং গাংগাইল ইউপিতে নৌকা প্রার্থী (বিগত ইউপিতে নৌকা প্রতীক বিজয়ী) সাবেক তিনবারের ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ আশরাফুজ্জামান খোকন এর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট আসাদুজ্জামান নয়ন (আনরস) ও আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল ইসলাম, ৬নং রাজগাতি ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থী মো. আব্দুর রউফ বাবলু এর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী (বিগত ইউপিতে নৌকা প্রতীক প্রাপ্ত) ইফতেখার মোমতাজ খোকন (আনরস) ও আবুল হাসেম খান (চশমা) (যদিও উক্ত ইউপিতে প্রার্থী জটিলতা বিদ্যমান), ৭নং মুশুল্লী ইউপিতে (বিগত ইউপিতে নৌকা প্রতীক বিজয়ী) সাবেক দুইবারের ইউপি চেয়ারম্যান ইফতিকার উদ্দিন ভূইয়া বিপ্লব এর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা মো. আব্দুল লতিফ মাস্টার (আনরস), ৮নং সিংরইল ইউপিতে নৌকা প্রার্থী (বিগত ইউপিতে নৌকা প্রতীক প্রাপ্ত) মো. ছাইদুল ইসলাম এর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক দুইবারের ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম (মোটরসাইকেল), মো. শফিকুল ইসলাম (আনরস), জামাল উদ্দিন (চশমা) সহ একাধিক প্রার্থী। এছাড়া ৯নং আচারগাঁও ইউপিতে নৌকা প্রার্থী (বিগত ইউপিতে নৌকা প্রতীক বিজয়ী) এ.কে.এম মোফাজ্জল হোসেন কাইয়ূম এর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মিয়া (মোটর সাইকেল) ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেণু (আনরস), ১০নং শেরপুর ইউপিতে নৌকা প্রার্থী (বিগত ইউপি’র উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীক বিজয়ী) সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন ভূইয়া মিল্টন এর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ বজলুর রহমান (আনরস) ও সুরুজ আলী (মোটরসাইকেল), ১১নং খারুয়া ইউপিতে নৌকা প্রার্থী (বিগত ইউপিতে নৌকা প্রতীক বিজয়ী) সাবেক দুইবারের চেয়ারম্যান মোঃ কামরুল হাসনাত ভূইয়া মিন্টু এর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন (আনরস), আব্দুস সাত্তার (মোটরসাইকেল) ও রাজু আহম্মেদ (ঘোড়া) এবং ১২নং জাহাঙ্গীরপুর ইউপিতে নৌকা প্রার্থী মোঃ কামাল উদ্দিন মন্ডল এর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল হক (আনরস), মীর মাহমুদুল হাসান (মোটরসাইকেল) ও বাবুল মিয়া (চশমা) প্রতীক। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেকেই নৌকা প্রতীক না পাওয়ায় এবং ভোটের মাঠে জনপ্রিয়তা বেশী তথা জনমতের কারনেই তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহন করছেন বলে অভিজ্ঞ মহল জানান। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোটাররা জানান, ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকাই ভালো ছিল। তবে আমরা ব্যক্তি বিশেষ বিবেচনা করে নৌকা বা স্বতন্ত্র প্রতীকে ভোট দিবো।

একাধিক সূত্রে জানাগেছে, তৃণমুল পর্যায়ের বিভিন্ন ধাপে বিচার-বিশ্লেষণ পেরিয়ে যারা নৌকার প্রার্থী হয়েছেন অবশ্যই তারা যোগ্য ব্যক্তি। যারা আওয়ামীলীগের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে অবস্থান করছে, তারা আওয়ামীলীগ দল থেকে বহিষ্কার হবে। দল থেকে যেকোন সময় বহিষ্কার সিদ্ধান্তের ঘোষণা আসতে পারে বলে দলটির উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।