নতুন প্রতিপক্ষের সামনে আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচনের পর রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ অপ্রতিরোধ্য। রাজনীতির মাঠে প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন বাতিলের দাবী করলেও শেষ পর্যন্ত জাতীয় সংসদে অংশ নিয়েছে এবং সংসদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে। অন্যসব রাজনৈতিক দলগুলোও অস্তিত্ববিহীন বরং তাঁরা নিজেদের মধ্যে বিরোধ এবং বিভক্তিতেই সময় ব্যয় করছে। ২০দল দৃশ্যত ভেঙ্গে গেছে। অন্যকোন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শক্তিশালীভাবে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আপাতত নেই বললেই চলে। রাজনৈতিক মাঠে আওয়ামী লীগ তাই প্রতিপক্ষহীন। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিশ্চিন্ত নয়। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল অনেকেই মনে করছে যে, ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর একটি মহল দেশে বিদেশে আওয়ামী লীগের ইমেজ ক্ষুণ্ণ এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে নতুন চ্যালঞ্জের মুখে পড়েছে। নতুন প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এই নতুন প্রতিপক্ষরা ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে বলেও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের কাছে খবর এসেছে। নতুন প্রতিপক্ষ কারা? তাঁরা কি ক্ষতি করতে পারে আওয়ামী লীগের? আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, নতুন প্রতিপক্ষ হলো সুশীল সমাজের একটি অংশ যারা দেশে বিদেশে আওয়ামী লীগের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে পারে এবং যারফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এবং আন্তর্জাতিক মহলে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে। এই নতুন প্রতিপক্ষ কারা আসুন দেখে নিই-

১. ড. মুহাম্মদ ইউনূস: ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিরোধ নতুন করে বলার কিছু নেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে বাদ পড়েন তখন থেকে তিনি আওয়ামী বিরোধী তৎপরতায় প্রকাশ্যে নিজেকে জড়িয়েছেন। অবশ্য অনেকেই মনে করেন যে, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক থেকে অব্যাহতির আগে থেকেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নস্যাতের কাজ করে আসছিলেন। আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করেন যে, ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় থেকেই তিনি শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন। যদিও রাজনৈতিক মাঠে না থাকার কারণে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ছাড়া কিছুই করতে পারেননি। তবে আওয়ামী লীগ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে তাঁর লবিংয়ের কারণেই পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ হয়েছিল। যদিও বাংলাদেশ নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আবার সোচ্চার হয়েছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তিনি যে বক্তব্য রাখছেন তা ইঙ্গিতপূর্ণ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি কটাক্ষপূর্ণ বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে।

২. সুরেন্দ্র কুমার সিনহা: সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে আওয়ামী লীগই প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দিয়েছিল। দায়িত্বগ্রহণ করে তিনি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই সোচ্চার হয়েছিলেন, সাংবিধানিক ক্যু এর চেষ্টা করেছিলেন বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল মহল মনে করেন। তাঁর বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হয় তখন তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পদত্যাগ করে তিনি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এবং সেখানে তিনি একটি গ্রন্থ লিখেছেন। যে গ্রন্থটিতে আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। এখন তিনি গ্রন্থটির প্রচারণার কাজে ব্যস্ত সময় ব্যয় করছেন। আমেরিকার সিনেটর এবং কংগ্রেসম্যানসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের কাছে ধর্না দিয়ে সরকারবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছেন এমন তথ্য প্রমাণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে রয়েছে।

৩. ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সিপিডির সম্মানিত ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও মাইনাস ফর্মুলার অন্যতম প্রণেতা ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কাজটাই তাঁর প্রধান কাজ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকর্তার কাছে বাংলাদেশের জিডিপি সূচকের বিস্ময়কর উন্নতি কিংবা বিভিন্নক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাগরণগুলোকে নেতিবাচক ভঙ্গিতে উপস্থাপন করাই হলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের কাজ বলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন। তিনি বিভিন্ন মহলে বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে নানারকম প্রশ্ন করছেন এবং তারমতো করে তথ্য উপাত্ত দিয়ে দিয়ে উন্নয়নকে জনগণের সামনে বিভ্রান্তকরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করছে আওয়ামী লীগ।

৪. মাহফুজ আনাম: ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামও ওয়ান ইলেভেনের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন বলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করেন । মাহফুজ আনাম সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, বাংলাদেশে গণমাধ্যমে মনখুলে লেখার মত পরিবেশ নেই। তিনি বাংলাদেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে আপত্তিকর কথাবার্তা বলছেন। বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে তিনি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য রাখছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এইসমস্ত কারণে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করেন।

এছাড়াও আরও কিছু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের মধ্যে নীরবে ষড়যন্ত্র প্রক্রিয়ায় লিপ্ত বলে আওয়ামী লীগ মনে করছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয় বরং এই ধরনের প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। যেসমস্ত প্রতিপক্ষগুলো অনেক স্পর্শকাতর এবং আন্তর্হজাতিক মহলে বিভিন্ন কারণেই অনেকবেশি গ্রহণযোগ্য। তবে আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, এই ধরণের ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। আওয়ামী লীগ যে ভালো কাজগুলো করছে সেই ভালো কাজের জন্য জনগণ তাঁদের পাশে আছে। আন্তর্জাতিক মহলও এইসমস্ত উদ্বাস্তু বুদ্ধিজীবীদের কথায় খুব বেশিক্ষণ সায় দিবে বলে আওয়ামী লীগ মনে করে না।