নওগাঁয় শেষ সময়ে কোরবানির পশুর হাটে চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশী: লোকসানের মুখে ব্যবসায়ীরা

নাদিম আহমেদ অনিক,স্টাফ রিপোর্টার- মহামারি করোনা ভাইরাস ও বর্তমান বন্যা পরিস্রিতিতে নওগাঁয় কোরবানির পশুর হাট এবার খানিকটা দেরিতে জমে উঠেছে। শেষ মুহূর্তে হাটগুলোতে গরু উঠছে প্রচুর। স্থানীয় ক্রেতা ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় বাজারের মৌসুমি গরু ব্যবসায়ী ও ব্যাপারীরা গরু কিনছেন বলে জানাগেছে। তবে সামাজীক দূরত্বের প্রভাব লক্ষ করা যায়নী জেলার পশুর হাট গুলোতে।ক্রেতা-বিক্রেতা, হাট ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখন পর্যন্ত গরুর দাম তুলনামূলক কম ও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।হাটের চিত্র দেখে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করা না হলে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এবার কোরবানির গবাদিপশুর দাম সহনীয় থাকবে। কারণ বাজারে প্রচুর গবাদিপশুর সরবরাহ। এছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের আয়-উর্পাজন কমে যাওয়ার কারণে অনেকেই কোরবানি দিতে পারছে না। তাই অনেক মানুষই কোরবানির পশু কেনার জন্য হাটেও আসছে না। তবে এবার হাটগুলোতে গরুর তুলনায় ছাগল ও ভেড়ার চাহিদা অনেক।তবে খামারি ও গৃহস্থের অনেকেই লোকসানের আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন, হাটগুলোতে প্রচুর গরু আমদানি হচ্ছে। নওগাঁর স্থানীয় হাটগুলোতে আগে কোরবানির ঈদের দু-তিন সপ্তাহ আগেই গবাদিপশুর হাটগুলোতে বেচাকেনা জমে উঠত। এবার শেষ সপ্তাহে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় বড় বাজারের ব্যাপারী ও গরু ব্যবসায়ীরা গরু কেনা শুরু করেছেন। এখনো চাহিদার তুলনায় হাটগুলোতে অনেক বেশি গরু উঠছে। ফলে বেচাবিক্রি আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার কম। এই কারণে প্রত্যাশার চেয়ে কম দামে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়েও গরু বিক্রি করছেন। শেষ পর্যন্ত এ অবস্থা থাকলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন খামারি ও গৃহস্থেরা।

কোরবানি পশুর দাম নিয়ে স্বস্তি-অস্বস্তির পাশাপাশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, হাটগুলোতে করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। স্থানীয় বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। হাটে ৮০থেকে ৯০শতাংশ মাুনুষের মুখেই মাস্ক নেই। পশুর পাশাপাশি গাদাগাদি-হুড়োহুড়ি করে মানুষকে হাটে চলাফেরা করতে দেখা গেছে।জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নওগাঁয় ছোটবড় ১০৪টি হাট রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী গবাদিপশুর হাট রয়েছে ৩৮টি। মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া ও সতিহাট, নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া, মহাদেবপুর মাতাজী, রাণীনগরের আবাদপুকুর, ত্রিমোহনী, বদলগাছীর কোলা, আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জ, পত্নীতলার মধইল, পোরশার মশিদপুর এবং সাপাহারের দীঘিরহাটে গবাদিপশু বেশি বিক্রি হয়।এছাড়াও জেলার প্রতিটি কোরবানির হাটে খাজনা আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুনের চেয়েও অনেক বেশি। কোন কোন হাটে গরুর খাজনা আদায় করা হচ্ছে ৭শত টাকা, কোন হাটে ৬টাকা। এছাড়া ছাগলের খাজনা আদায় করা হচ্ছে ৩টাকা। করোনা ভাইরাসের কারণে বেশকিছুদিন ইজারাদাররা হাট বসাতে পারেন নাই বলে তারা একটু বেশি নিচ্ছেন বলে জানান অনেক ইজারাদাররা। 


জেলার সবচেয়ে বড় গবাদিপশুর হাট মান্দার চৌবাড়িয়া হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে প্রচুর গরু উঠেছে। পশুর হাটের জন্য নির্ধারিত স্থানে জায়গা না হওয়ায় পাশের রাস্তা ও কৃষিজমিতেও হাট বসানো হয়েছে। তখনো ভটভটি, নছিমন ও ট্রাকে করে হাটে গরু আসছিল। এই হাটে আকার ভেদে প্রতিটি গরু ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ৫লাখ টাকায় গরু বিক্রি হচ্ছে।

রাণীনগর উপজেলার ত্রিমোহনী হাটের হাটের ইজারাদার বেদারুল ইসলাম, আবাদপুকুর হাটের ইজাদার শহিদুল ইসলাম ফটিক বলেন, গতবারের তুলনায় এবার হাটে গরুর আমদানি বেশি। ছোট ও বড় গরুর তুলনায় মাঝারির চাহিদা বেশি। তবে গত বছরের তুলনায় এবার সব ধরনের গবাদিপশুর দাম কম রয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষই দাম নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে আমদানির তুলনায় এখনো বেচাবিক্রি কিছুটা কম। শেষ হাটে ঢাকা-চট্টগ্রামের গরু ব্যবসায়ীরা এলে দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবাদপুকুর হাটে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা থেকে গরু কিনতে এসেছিলেন সাইদুল ইসলাম। তিনি একটি গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। গরুর দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫৫ হাজার টাকায় মাঝারি আকারের এই গরু কিনলাম। ধারণা করছি, ২মণ ১৫কেজি থেকে ৩৫ কেজি পর্যন্ত মাংস হতে পারে। সবাই বলছে সস্তাই হয়েছে। গতবার এ ধরনের গরু ৬০থেকে ৬৫হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে তুলনায় এবার দাম কিছুটা কমই রয়েছে।


বদলগাছী উপজেলা থেকে নিজের খামারে পালন করা ১০টি গরু নিয়ে গত শনিবার মহাদেবপুর উপজেলা সদর পশুর হাটে এসেছিলেন শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বড় আকৃতির ১০টি গরু এনেছেন। প্রতিটি গরুর দাম ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা হবে বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু দাম বলছে ৮০-৮৫ হাজার টাকা করে। কেনা ও পরিচর্যা খরচসহ প্রতিটি গরুর দাম ৯০ হাজারের নিচে হলে লোকসান গুনতে হবে। এর আগে আরও দুটি হাট ঘুরেছেন। কিন্তু প্রত্যাশার দাম না পাওয়ায় গরুগুলো বিক্রি করেননি। শেষ হাট পর্যন্ত এ রকম দাম থাকলে বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়েই গরু বিক্রি করতে হবে।
সান্তাহারে গতকাল মঙ্গলবারের ঈদ উল আযহাকে সামনে রেখে বসা কোরবানি পশুর হাটে লক্ষ করা যায় গরু বা অন্যান্য গবাদি পশুর আমদানি চাহিদার তুলনায় অনেকাংশই বেশী। নওগাঁ সদরের পার নওগাঁ দক্ষিন মন্ডল পাড়ার বাসিন্দা আহমেদ জাকির হাসান জানান, ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনলাম। যা গত বছরের তুলনায় বেশ ভাল হয়েছে। তিনি জানান, গত বছর এমন গরু কিনেছিলাম ৯৪ হাজার টাকা দিয়ে।এ বিষয়ে নওগাঁর আত্রাই উপজেলা থেকে আসা গরু বিক্রেতা আফজাল হোসেন জানান, এবার গরু বেশী, সে তুলনায় ক্রেতা নাই। বন্যায় নিজের থাকার জায়গা নাই গরু রাখবো কোথায়, তাই একটু লস হলেও ছেরে দিলাম।


জেলা পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, জেলার প্রতিটি কোরবানির হাটেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জাল টাকা শনাক্তের জন্য মেশিন বসানো হয়েছে। আমাদের পুলিশ বাহিনীসহ অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীর ভাইয়েরা হাটের দিন টহল অব্যাহত রেখেছে। আশা করছি কোরবানির হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতারা নিরাপদে কোরবানির পশু কেনাকাটা করতে পারবেন। এছাড়াও ভারত থেকে গরু আমদানী সম্পন্ন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।