“ধানের ব্লাস্ট রোগ এবং এর প্রতিকার”

এস কে রাজুঃ ধানের ব্লাস্ট একটি ছত্রাক জনিত মারাত্নক ক্ষতিকারক রোগ। পাইরিকুলারিয়া ওরাইজি (Pyriculria orayzai) নামক একধরণের ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।রোগ আক্রান্তের মৌসুম ও সময়ঃ বোরো ও আমন মওসুমে সাধারনত রোগটির আক্রমন হয়ে থাকে। অনুকূল আবহাওয়ায় এ রোগের আক্রমনে ফলন শতভাগ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এ রোগে ধানগাছের চারা অবস্থা থেকে শুরু করে ধান পাকা পর্যন্ত যে কোন সময়ে হতে পারেন।

রোগাক্রান্তের স্থানঃ এ রোগে ধানগাছের পাতা, গিঁট ও শিষের গোঁড়া আক্রান্ত হয়।

ব্লাস্টের প্রকারভেদঃ আক্রান্তের ধরন ও স্থানের ভিত্তিতে ব্লাস্টকে তিন ভাগে /ধরনে ভাগ করা হয়েছে। যেমন, পাতাব্লাস্ট, গিটব্লাস্ট ও শিষ ব্লাস্ট।

পাতা ব্লাস্টঃ পাতা ব্লাস্টে প্রথমে পাতায় ছোট ছোট কালচে বাদামি ডিম্বাকৃতির দাগ দেখা যায়। আস্তে আস্তে দাগ বড় হয়ে দুপ্রান্ত লম্বা হয়ে চোখের আকৃতি ধারণ করে। দাগের চারদিকের অংশ গাঢ় বাদামি ও মাঝের অংশ সাদা-ছাই বর্ণ ধারন করে। অনেকগুলো দাগ একত্রে মিধে গিয়ে পুরো পাতাই মরে যায়। এ রোগের কারণে জমির সমস্ত ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

গিট বাস্টঃ গিট আক্রান্ত হলে গিটে কালো দাগ পড়ে ও দূর্বল হয়ে পড়ে। গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও শিষ পরিপূর্ণ ভাবে বের হয় না।অল্প বা প্রবল বাতাসে আক্রান্ত গিটে ভেঙ্গে পড়ে তবে আলাদা হয়ে যায় না।

নেক বা শিষ ব্লাস্টঃ শিষ বের হওয়ার সময় বা বের হহওয়ার পর আর্দ্র আবহাওয়া তথা শিশির বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ফলে ডিগ পাতা ও শিষের সংযোগ স্থলে জমে থাকা পানির ফোটায় ছত্রাকের স্পোর আক্রমন করে কাল দাগ সৃষ্টি করে তৈরি করে। পরবর্তীতে আক্রান্ত শিশের গোড়া পঁচে যায় ফলে শিষ গাছ হতে পুষ্টি উপাদান নিতে পারে না, যার কারনে শিষ শুকিয়ে দানা চিটা হয়।

আক্রান্তের অনুকূল অবস্থাঃ রোগপ্রবণ ধানের জাত, বেলে জাতীয় মাটি এবং বেশি ইউরিয়া সার প্রয়োগ এ রোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া রাতে ঠাণ্ডা(২০-২২* সেন্ট্রিগ্রেড), দিনে গরম(২৫-২৮* সেন্ট্রিগ্রেড) ও সকালে পাতায় শিশির জমে থাকলেও এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।

রোগ বিস্তারঃ ব্লাস্ট রোগের জীবানু প্রধানত বাতাসে ছড়ায়। বীজের মাধ্যমেও জীবানুর বিস্তার ঘটে থাকে।

ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রনের উপায়ঃ ব্লাস্ট রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ-ই উত্তম। রোগাক্রান্তের পূর্বেই রোগাক্রমনের বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা গ্রহন করাকে প্রতিরোধ ব্যবস্থা বলা হয়ে থাকে।

ব্লাস্ট প্রতিরোধ ব্যবস্থা সমূহঃ

* বিশুদ্ধ বীজের ব্যবহার।
*মাটি বিশুদ্ধ করন।
*জমিতে সুষম সারের ব্যবহার।
*পর্যাপ্ত জৈবসার ব্যবহার।
*অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার না করা।
*এম ও পি / পটাশ সার ২ কিস্তিতে ব্যবহার করা।১ম কিস্তি জমি তৈরির সময় আর বাকি অর্ধেক ইউরিয়ার উপরি প্রয়োগের সাথে।
*আর্দ্র বা ব্লাস্টের অনুকূল আবহাওয়া(গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি,কুয়াশাচ্ছন্ন মেঘলা আকাশ) বিরাজমান থাকলে সেখানকার জমি রোগাক্রান্ত না হলেও রোগাক্রমনের সমূহ সম্ভাবনা থাকলে প্রতিরোধক হিসেবে শতাংশে ১.২ গ্রাম মেকটিভো ৭৫ ডব্লিউ জি অথবা ১.৫ গ্রাম জিল ৭৫ ডব্লিউ পি ছত্রাকনাশক অনুমোদিত ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ২লিটার পানিতে ভালভাবে মিশিয়ে পড়ন্ত বিকেলে ৫-৭ দিন অন্তর অন্তর দু’বার প্রয়োগ করতে হবে।

প্রতিকার/রোগাক্রমনের পর করনীয়ঃ

#ব্লাস্ট আক্রমনের প্রাথমিক অবস্থায় জমিতে ১-২ ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হবে।
#পাতা ব্লাস্ট দেখা দিলে বিঘায় ৫কেজি হারে এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
# আক্রান্ত জমিতে ইউরিয়া সারের উপরি-প্রয়োগ বন্ধ রাখা।
#রোগের প্রাথমিক অবস্থায় শতাংশে ১.২ গ্রাম মেকটিভো ৭৫ ডব্লিউ জি অথবা ১.৫ গ্রাম জিল ৭৫ ডব্লিউ পি অনুমোদিত ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ২লিটার পানিতে ভালভাবে মিশিয়ে পড়ন্ত বিকেলে ৫-৭ দিন অন্তর অন্তর দু’বার প্রয়োগ করতে হবে।

বি দ্র ঃঃ প্রয়োজনে স্হানীয় কৃষি অফিসে যোগাযোগ করুন।