ঝিনাইদহ হলিধানির পায়রা নেছা বিবি ওয়াক্ফ ষ্টেটের মোতাওয়াল্লী শরিফুলকে অপসরণ হলেও স্টেটের ভাড়া তুলে খাচ্ছেন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী বাজারে পায়রা নেছা বিবি ওয়াকফ ষ্টেটের মোতাওয়াল্লী অপসরণের আদেশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রনালয়ের বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসক খান মোহাম্মদ নুরুল আমিন এই আদেশ দেন। অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘ ২৭ বছর ভুয়া ওয়ারেশ সেজে মোতাওয়াল্লী পদ দখল করে ওয়াকফের সম্পদ লুটপাট করছেন হলিধানী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে শরিফুল আলম। ওয়াকফ প্রশাসক অফিস আদেশ প্রদান করলেও শরিফুল আলম জোর করে দোকান থেকে ভাড়া তুলে খাচ্ছেন। তিনি পুলিশ ও প্রশাসনের আদেশ নিষেধ অমান্য করে মোতাওয়াল্লীর পদ আকড়ে ধরে আছেন।

জানা গেছে, পায়রা নেছা বিবি ওয়াকফ সম্পত্তির প্রকৃত মালিক হচ্ছে আহম্মদ বিশ্বাসের ছেলে আবুল ইসলাম ওরফে মোঃ ইসলাম আলী মিয়া। পায়রা নেছা বিবি হচ্ছে আবুল ইসলামের মা। পিতা আহম্মদ বিশ্বাস ইন্তেকাল করলে মা পায়রা নেছা বিবি একই এলাকার আব্দুল হামিদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এদিকে ১৯৪৮ সালে ৪৩৯ ডিগ্রির বুনিয়াদে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে আবুল ইসলামের নামে নিলাম সুত্রে জমি খরিদ করে দেন। অথচ পায়রা নেছা বিবি অন্যের স্ত্রী থাকাবস্থায় ১৯৫৫ সালের ৯ জুলাই প্রথম মৃত স্বামীর নাবালক সন্তানের নামে খরিদকৃত জমি ওয়াকফ করে যান। দ্বিতীয় বিয়ের পর প্রথম স্বামীর সন্তানের জমি ওয়াকফ করতে পারেন কিনা এই প্রশ্ন তোলেন আবুল ইসলামের ছেলে শওকত আলী মিয়া। তিনি বলেন, জাল জোচ্চুরির মাধ্যমে তার পিতার সম্পত্তি ওয়াকফ করা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর ওয়াকফ প্রশাসকের দপ্তরে অভিযোগ করেন। এছাড়া তার পিতা জীবদ্দশায় সম্পদের মালিকানা নিয়ে ঝিনাইদহ জজ আদালতে মামলা করেন। যার নং ২০৩/২০। শওকত আলী জানান, পায়রা নেছা বিবি হচ্ছে তার দাদি। যদি তিনি অবৈধ ভাবে প্রথম স্বামীর নাবালক ছেলের সম্পত্তি ওয়াকফ করেই যান তবে তার মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত হওয়ার কথা আবুল ইসলামের ওয়ারেশগন। কিন্তু এখন মোতাওয়াল্লীর দায়িত্ব পালন করছেন দাদির দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে আব্দুর রাজ্জাকের তৃতীয় পুত্র শরিফুল আলম।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, পায়রা নেছা বিবি ওয়াকফ্ ষ্টেটের ২১টি দোকান রয়েছে। এই দোকানগুলো থেকে ভাড়া ওঠে মাসে ৩১ হাজার ৫০০ টাকা। এই হিসেবে বছরে ভাড়া ওঠে ৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। অথচ ওয়াকফ প্রশাসনে ষ্টেটের আয় দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার টাকা। বাকী ২ লাখ ১৭ হাজার টাকা কোথায় যায় সে প্রশ্ন তুলেছেন শওকত আলী মিয়া।

এদিকে ধর্ম মন্ত্রনালয়ের বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসকের দপ্তর থেকে জারীকৃত আদেশে বলা হয়েছে, বর্তমান মোতাওয়াল্লী শরিফুল আলম দরখাস্তকারী শওকত আলী মিয়ার দাবী খন্ডন করতে ব্যার্থ হন। অন্যদিকে ৭৫৪ দাগের ২৪ শতক জমির প্রকৃত মালিক আবুল ইসলাম ওরফে ইসলাম মিয়া। তিনি নাবালক থাকায় তার পক্ষে অভিভাবক সেজে মা পায়রা নেছা ৪৫৩৬ নং রেজি দলিলে ওয়াকফ করে দেন বলে দরখাস্তকারী শওকত আলী মিয়া প্রমান করতে সমর্থ হন।

আদশে বলা হয়, বর্তমান মোতাওয়াল্লী শরিফুল আলম হলেন পায়রা নেছার দ্বিতীয় স্বামী আব্দুল হামিদ মিয়ার ঔষেজাত সন্তান মরহুম আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। পক্ষান্তরে ৩২ (১) ধারায় আবেদনকারী শওকত আলী মিয়া পায়রা নেছার প্রথম স্বামী আহম্মদ মালিথার ছেলে আবুল ইসলাম ওরফে ইসলাম মিয়ার ছেলে। ফলে ওয়াকফ অধ্যাদেশ এর ১৯৬২ সালের ৩২(১) মোতাবেক মোতাওয়াল্লী পদ থেকে অপসরণ যোগ্য। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এই আদেশের পর দুই মাস পার হলেও শরিফুল আলম মোতাওয়াল্লী পদ আকড়ে ধরে আছেন।