চীন-ভারত যুদ্ধ: বাংলাদেশ কী করবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

চীন এবং ভারতের মধ্যকার উত্তেজনার পারদ চরমে পৌঁছেছে। লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে সোমবার রাতে দু’পক্ষের অর্ধ শতাধিক সেনা হতাহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা হঠাৎ বহুগুণ বেড়ে গেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এবং পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে গেলে পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে শঙ্কিত অনেকেই। আর এরকম সংঘাতে বাংলাদেশের কী হবে বা বাংলাদেশ কী করবে আমাদের জন্য সেটাও এক বড় প্রশ্ন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন-ভারত নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ একটা চাপের মধ্যে আছে। যেমন ২০১০ চট্টগ্রামের গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করতে এগিয়ে এসেছিল চীন। এই বন্দর নির্মাণে বাংলাদেশকে সাহায্যে করতে চেয়েছিল শি জিনপিংয়ের দেশ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র,ভারত এবং জাপানের চাপের মুখে বাংলাদেশকে সেই পথ থেকে সরে আসতে হয়। পরে বাংলাদেশ জাপানের সাহায্য নিয়ে চট্টগ্রামে সামুদ্রিক বন্দর নির্মাণ করছে। এ ধরণের চাপ গত কয়েক বছর ধরেই অনুভব করছে বাংলাদেশ। এটার মোকাবেলায় বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে সাধ্যমত কাজ করে চলেছে। তবে যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশের জন্য পরিস্থিতি যে বেশ জটিল হয়ে পড়বে, এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই।

ভারত বাংলাদেশের বহু পুরনো বন্ধু। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সেটা আরও দৃঢ় হয়েছে। তাছাড়া বহু আগে থেকেই বাংলাদেশকে সমরাস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে চীন। বাংলাদেশি সেনা অফিসাররা চীন থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ, কিন্তু সেটা রাজনৈতিক সম্পর্ক, সামরিক নয়। এখন পর্যন্ত ভারত থেকে বাংলাদেশ সে পরিমাণ সমরাস্ত্র কেনেনি, যতটা চীন থেকে কিনেছে। কাজেই চীন ভারত যুদ্ধ হলে একটা জটিল অবস্থায় পড়ে যাবে বাংলাদেশ। কারণ চীন বাংলাদেশের সামরিক বন্ধু, আর ভারত রাজনৈতিক। এমন অবস্থায় কী করবে বাংলাদেশ?

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ছোট দেশ। কিন্তু গত ১০ বছরে বিশ্ব পরিমণ্ডলে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশই বাংলাদেশকে এখন সমঝে চলছে। ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের একটি দৃঢ় এবং শান্তিপূর্ণ ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। এ কারণে ভারত-চীন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরাসরি কাউকেই সমর্থন না দিয়ে হয়তো দু দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে পারে। দু দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের কাজে বাংলাদেশ একটি পক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।