চকরিয়া সিটি কলেজ প্রায় দুই যুগ ধরে ননএমপিও, এলাকাবাসীর দাবী “এমপিওভুক্তি”

জেপুলিয়ান দত্ত জেপু,চকরিয়া

কক্সবাজার জেলায় ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম চকরিয়া সিটি কলেজ। এটি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া র পর দীর্ঘ ২২ বছর প্রায় দুই যুগ ধরে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় চকরিয়াবাসী হতাশায় রয়েছে। চকরিয়ায় শিক্ষার মান ও উচ্চ শিক্ষার প্রসার ঘটাতে চকরিয়ার প্রাণকেন্দ্রে চকরিয়া সিটি কলেজ এমপিওভুক্তিকরণ (মানতলি পে-অর্ডার) অত্যাবশ্যক বলে মনে করেন চকরিয়ার শিক্ষানুরাগীরা। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৯ টি ব্যাচের এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ ১৯টি ব্যাচ থেকে শত শত শিক্ষার্থীরা এ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বের হয়েছে। এরাও উচ্চ শিক্ষা শেষ করে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়ে দেশের সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করছে। এর মধ্যে ২০০৩ সাল থেকে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সরকারী-বেসরকারী কলেজের ফলাফলের তুলনায় কক্সবাজার জেলায় কয়েকবার ১ম,২য়,৩য়,স্থান অর্জন করতেও সক্ষম হয়েছিল। কক্সবাজার জেলায় সরকারী ও এমপিওভুক্ত কলেজের মধ্যে একমাত্র ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চকরিয়া সিটি কলেজ। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার দলীয় চকরিয়া-পেকুয়ার মাননীয় সাংসদ জাফর আলম বি.এ(অনার্স),এম.এ ২০০০ সালে চকরিয়া সিটি কলেজটি প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি চকরিয়া উপজেলার মাটি ও মানুষের শিক্ষার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে চকরিয়া উপজেলা সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে কলেজটি প্রতিষ্টিত করেন। দেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা কক্সবাজার পর্যটন নগরী হলেও শিক্ষায় পিছিয়ে আছে। শিক্ষায় পিছিয়ে থাকায় শিক্ষানুরাগী ও বর্তমান এমপি জাফর আলম বি.এ (অনার্স) এম. এ শিক্ষার এক স্বপ্ন নিয়ে স্ব-উদ্যোগে চকরিয়ার প্রাণকেন্দ্রে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ২০০২ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকা কালে চকরিয়া সিটি কলেজটি বন্ধ করার হীন মানসিকতায় লিপ্ত ছিল। সে সময় কলেজের সংশ্লিষ্ট কলেজের শুভাকাঙ্খী অনেককে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কলেজটি বন্ধ করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। তৎকালের কলেজের অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক বর্তমান অধ্যক্ষ সালাহউদ্দিন খালেদ কলেজটি পাঠদান অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালানোর ফলে বিএনপি সরকার প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে তার বিরুদ্ধে সাতটি মিথ্যা মামলাও দায়ের করেছিল।তিনি শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও কলেজের হাল ছাড়েনি। এছাড়া প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে ১৪ জন শিক্ষক কর্মচারী এ কলেজটি ছেড়ে এখনও কোনো পেশায় যায়নি বলে কলেজের অধ্যক্ষ সূত্রে জানা গেছে।ওনারা কলেজে নিয়মিত শ্রেণিকার্যক্রম ও পাঠ দান চালিয়ে যাচ্ছেন। অধ্যক্ষ সালাহ উদ্দিন খালেদ এবার কলেজটিকে এমপিওভুক্ত (মানতলি পে-অর্ডার) করার জন্য নীতিমালার আলোকে আবেদন করছেন বলে এ প্রতিনিধিকে জানান। চকরিয়া সিটি কলেজ প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা তরুন শিক্ষকরা বিনা বেতনে কলেজটির পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন বলে কলেজটি এখনও প্রতি বছর মোটামুটি শিক্ষার্থীরা ফলাফল ভাল করে যাচ্ছেন। এ শিক্ষকগণ জানান,শত আর্থিক অভাবে ভোগলেও এমপিওভুক্তির প্রত্যাশায় কলেজ ছেড়ে কোথাও যায়নি। শুধু এলাকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে চকরিয়ার গরীব দুখী পরিবারের সন্তানরা যাতে শিক্ষিত হতে পারে সে লক্ষ্যে বিগত ২২ বছর ধরে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আর্থিক অনটনের মধ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করে আসছেন শুধু এমপিওভুক্ত হওয়ার প্রত্যাশায়। এ বার কলেজটি এমপিওভুক্ত করার জন্য মাননীয় সাংসদ(চকরিয়া-পেকুয়ার) জাফর আলম বিএ(অনার্স),এম.এ ও মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপুমনির সুদৃষ্টি কামনা করছেন শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সবাই। বার বার আশার আলো নিভিয়ে যাওয়ায় অনেকে কলেজের শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যোগদান করেছেন। যে সব শিক্ষকরা অন্য পেশায় যেতে পারে নি তারা প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে অত্যন্ত অর্থকষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বলে অধ্যক্ষ জানান।
এদিকে,মেধাবী শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর চকরিয়া সিটি কলেজ থেকে পাশ করে বের হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষায় অনগ্রসর চকরিয়ায় এ কলেজটি প্রায় দুই যুগেও এমপিওভুক্ত(মানতলি পে-অর্ডার) হয়নি। এ কলেজ থেকে পাশ করে প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এরা উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে দেশের বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী চাকরিতে প্রবেশ করে দেশের সেবায় নিজেকে যুক্ত করছে । এ কলেজ থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান হলেও প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কর্মরত শিক্ষকদের ভাগ্যের দ্বার উম্মোচন হয়নি এখনও।
রহস্যের বেড়া জালে আটকে দিয়ে তৎতকালীন বিএনপি সরকার এ কলেজটি বন্ধ করে দেওয়ার অপচেষ্টা চালালেও হাইকোর্টের নির্দেশে চকরিয়া সিটি কলেজের পাঠদান স্বীকৃতি অব্যাহত রাখা হয়। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ কলেজটি তিন দফায় এমপিওভুক্ত করার জন্য আবেদন করলেও এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। ইতিমধ্যে কঠিন নীতিমালা প্রণয়ন করায় নীতিমালার যাতাকলে পড়ে গত বার কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়নি। এবার চকরিয়া সিটি কলেজ এমপিওভুক্ত হবে বলে শিক্ষক ও এলাকাবাসী আশা প্রকাশ করছেন।
চকরিয়ার সর্বস্তরের জনসাধারণের স্বপ্ন ছিল কলেজটি এমপিওভুক্ত (মানতলি পে অর্ভার) হলে কর্মরত শিক্ষকদের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে এবং কলেজটিতে প্রাণচঞ্চলতা ফিরে আসবে। কিন্তু সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়ায় এলাকার সচেতন মহল দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সরকার চাইলে বিশেষ কোটায় এ কলেজটিকে এমপিওভুক্ত করতে পারেন। কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় অঞ্চলঘেষা,শিক্ষায় অনগ্রসর, নারী শিক্ষার প্রাধান্য দিয়ে চকরিয়া সিটি কলেজটিকে এমপিওভুক্ত (মানতলি পে-অর্ডার) করার জন্য চকরিয়াবাসী, চকরিয়া সিটি কলেজর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান মাননীয় সাংসদ জাফর আলম বি.এ(অনার্স) এম.এ এর মাধ্যমে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছেন।