ঘাটাইলে প্রণোদনার টাকা পেতে কমিশন

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্থপশু খামারিদের প্রণোদনার টাকা পাইয়ে দিতে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের (এলডিডিপি) এক ইউনিয়ন কর্মীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন খামারিরা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন এলডিডিপি প্রকল্পে ১৪টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে একজন করে লাইভস্টক সার্ভিস প্রভাইডার (এলএসপি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্প থেকে করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্থ ছোট-বড় পশু খামারিদের প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্থ খামারিদের প্রণোদনার তালিকা তৈরি করতে ইউনিয়নে কর্মকরত প্রকল্পের এলএসপিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সে মোতাবেক এলএসপি মো. সেলিম মিয়া ধলাপাড়া ইউনিয়নে খামারিদের প্রণোদনার তালিকা দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পেয়ে তালিকা তৈরি নিয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম, আর্থিক লেনদেন, কমিশন নেওয়াসহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। নানাভাবে প্রতারণার মাধ্যমে খামারিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে খামারিদের অভিযোগ।

ধলাপাড়া ইউনিয়নের আষাড়িয়াচালা গ্রামের ১০ জন খামারি জানান, সেলিম তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন হারে কমিশন নিয়েছেন। আবার প্রতারণার মাধ্যমে অনেকের কাছ থেকে প্রণোদনার প্রায় পুরো টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যাঁরা কমিশন দেননি তাঁদের কপালে প্রণোদনার টাকা জোটেনি।

আষাড়িয়াচালা গ্রামের কাজী মোস্তফা, রফিকুল, জাহিদ হাসান, সদর সিকদার, আব্দুর কাদের এক হাজার টাকা করে কমিশন দিয়ে প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। প্রণোদনার টাকা অর্ধেক দিতে হবে এই শর্তে রাজি না হওয়ায় জহুরা ও শিরিন আক্তারের ভাগ্যে টাকা জোটেনি।

আষাড়িয়াচালা গ্রামের আবু তালেবের স্ত্রী রিনা খাতুন বলেন, ‘সেলিম মিয়া আমার প্রতিবেশী। সে তার মোবাইলে সমস্যা থাকার কথা বলে আমার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও মোবাইল নম্বর চেয়ে নেয় এবং বলে আমার টাকা আপনার মোবাইলে আসবে। টাকা এলে আমাকে দিয়ে দেবেন। যথারীতি রিনা খাতুনের মোবাইলে খামারি প্রণোদনার ১৬ হাজার ৮৭৫ টাকা আসে, যা সেলিম মিয়া সম্পূর্ণ নিয়ে নেয়।’ একইভাবে ফাতেমা খাতুনের কাছ থেকে ১১ হাজার ৪১৮ টাকা ও কহিনুর বেগমের কাছ থেকে প্রণোদনার অর্ধেক সাত হাজার টাকা হাতিয়ে নেন সেলিম।

এ বিষয়ে এলএসপি মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক না। আমি মাত্র ৬২ জনের নামের তালিকা দিয়েছি। যারা তালিকাভুক্ত হতে পারেনি তারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অন্যদের প্ররোচিত করে আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দিচ্ছে।’

ধলাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এজাহারুল ইসলাম ভূইয়া মিঠু বলেন, ‘ঘটনাটি সত্য। তালিকায় আমি ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে যে পাঁচজনের নাম দিয়েছিলাম, তাদের কাছ থেকেও এক হাজার করে টাকা নিয়েছে।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন মো. বাহাউদ্দীন সরোয়ার রিজভী বলেন, ‘খামারিদের প্রণোদনা তালিকা প্রস্তুুতের দায়িত্ব ছিল এলডিডিপি প্রকল্পের এলএসপিদের ওপর। তাদের নির্দেশনা দেওয়া ছিল তালিকা তৈরিতে যেন কোনো আর্থিক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি না হয়। তার পরও যদি কোনো এলএসপি আর্থিক অনিয়ম ও প্রতারণা করে থাকে তবে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ দায় সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’